জিয়া পরিবারকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভয় পায় বলেই নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাস শেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়নে তার অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা যখন দেশ থেকে পালিয়েছিলেন তখন কারো নির্দেশ ছাড়াই তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ‘উই রিভোল্ট‘ বলে বিদ্রোহ করেন। তিনি তার অধিনায়ক জেনারেল জানজুয়াকে গ্রেফতার ও হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করে নিজে যুদ্ধ করেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি ছাড়া এই দাবি কেউ করতে পারবেনা। অথচ নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাস শেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।
বৃহস্পতিবার (২ জুন, ২০২২) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার হলরুমে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪১ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে "বাংলাদেশ ও শহীদ জিয়া" শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ মেহেদী হাসানের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাঃ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ডাঃ শহীদুল আলম, ড্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডাঃ এমএ সেলিম, সহ-সভাপতি ডাঃ বি গণি ভুইয়া, ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মহাসচিব ডাঃ আবদুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ ডাঃ জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডাঃ আবুল কেনান, ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব ডা. শেখ ফরহাদ, ডাঃ সাইদ মেহবুব উল কাদির, এ্যামট্যাবের বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব প্রমুখ। এসময় বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক ডাঃ রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাবের সভাপতি ডাঃ সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, বিএসএমএমইউ ড্যাবের সভাপতি ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, ডাঃ পারভেজ রেজা কাকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের স্বাস্থ্য সম্পাদক ডাঃ জাহেদুল কবির, এ্যামট্যাবের দবির উদ্দিন তুষার, বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম আকাশ প্রমুখ।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শহীদ জিয়া ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তিনি দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। সাংবিধানিক সংস্কার করে বাংলাদেশের জাতিসত্তার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আমাদের পরিচিতি হিসেব বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ঐতিহ্যের সমন্বয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বিষয়টি চূড়ান্ত করেন। যার ভেতরে বাংলাদেশের অনেককিছু নিহিত আছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যে চেতনা সেটা হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়া তার শাসনামলে বাংলাদেশের সংবিধানের সংশোধন করে ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করেন। ইনশাআল্লাহ এটা কেউ পরিবর্তন করতে পারবেনা। তিনি সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বিষয়টির পরিবর্তন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সংবিধানে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বাতিল করে মুক্তবাজার তথা অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করেছেন।
শহীদ জিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, আজকে বাংলাদেশ কৃষি, রেমিট্যান্স ও গার্মেন্টস শিল্পের উপর বাংলাদেশের অর্থনীতি দাড়িয়ে আছে। এগুলো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তিনি খাল খনন করে কৃষির উন্নয়নে অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। যে দেশে ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েও ৩ বছর পর তিনি বিদেশে চাল রফতানি করেছিলেন। গার্মেন্টস শিল্পের প্রতিষ্ঠা করেন। বিদেশে জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা অর্জনের পথ তৈরি করে গেছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক রফতানি শুরু করেন। মুসলিম বিশ্বে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত ও সুপরিচিতি জনপ্রিয় নেতা। তিনি ছিলেন আল কুদস কমিটির সদস্য। সুতরাং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে কোথা থেকে বাদ দিবেন?
তিনি বলেন, আজকে যারা ক্ষমতায় তারা স্বৈরাচারী এবং ফ্যাসিস্ট। তারা প্রাইমারি স্কুলের বই থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস সরিয়ে দিছে। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে তার নাম রাখা হয়নি। কেনো সরকার শহীদ জিয়া ও জিয়া পরিবারকে ভয় পায়? তারা কেনো নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাস শেখাচ্ছে? কারণ তারা তো ব্যর্থ। গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল করেছিলো। স্বাধীনতার ঘোষণা করতে পারেনি। সে কারণে তারা নতুন প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাস শেখাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজন করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা বাতিল করেছে। খালেদা জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিলো ইমার্জিং টাইগার। সেজন্যই তারা জিয়া পরিবারকে ভয় পায়। আমাদের সবাইকে শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন পূরণে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। সেজন্য সরকারের পদত্যাগ এখন সময়ের দাবি। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশকে ধংসের শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
ড্যাবের মহাসচিব ডাঃ আবদুস সালাম বলেন, পাক বাহিনীর অত্যচারে জাতি যখন দিশেহারা, আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে যান ঠিক তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশের আমূল পরিবর্তন করেন। স্বাস্থ্য খাতকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো শুরু করেন। তাকে আমাদের আরো বেশি অনুসরণ করে দেশের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হবে। আজকে দেশের স্বাস্থ্যখাতকে ধ্বংস করা হয়েছে। আসুন সরকারকে হটাতে আমরা চিকিৎসক পেশাজীবীরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কেননা সরকার এখন আইসিইউতে আছে এবং আবোল তাবোল বলছে। তাদের পতন অনিবার্য। বিএনপি নিশিরাতের পতনের লক্ষ্যে যে কর্মসূচি দিবে চিকিতসক সমাজ তাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডাঃ হারুন আল রশিদ বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ স্বৈরাচারী সরকারের দ্বারা নিষ্পেষিত। বাক স্বাধীনতা নেই, অর্থনেতিক মুক্তি নেই। এই সরকার জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে। তারা ক্ষমতাকে আবারো নিরঙ্কুশ করতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত পরিকল্পিতভাবে মিথ্যাচার করছে। অথচ শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। তিনি আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি। যার হাত দিয়ে দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। অর্থনীতি সমৃদ্ধি লাভ করে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়েও টাকা লুটছে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার। সবার ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন