সরকারি পরিপত্র না মেনে প্রায় ৫ লাখ টাকা সম্মানী হিসেবে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযাগ উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অর্থ ও হিসাব বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী বাজেটে অর্থ সংকুলান সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দফতর একজন কর্মচারীকে বছরে একবার সর্ব্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী প্রদান করতে পারবে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র না মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দ্বায়িত্ব পালনকারী অর্থ দফতরের পরিচালক ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বিগত সময়ে অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা সম্মানী হিসেবে হাতিয়ে নিয়েছেন।
জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগের জারি করা আর্থিক ক্ষমতা অর্পন সংক্রান্ত নির্দেশনা মোতাবেক কোন কর্মচারীকে ১০ হাজার টাকার অধিক বা একই অর্থবছরে একবারের অধিক (যে কোন অঙ্ক) সম্মানী প্রদানের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের সম্মতি বা অনুমোদন গ্রহন করতে হবে। এছাড়া রুটিন কাজের জন্য কোন সম্মানী প্রদান করা যাবে না।
কিন্তু এসব নিয়মের তোয়াক্কা করছে না জবির অর্থ দপ্তরের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব অনিয়মের ব্যাপারে উদাসীন। অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা বা তদন্ত কমিটি গঠন করতে দেখা যায়নি। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থ বছরে রুটিন দ্বায়িত্ব পালনকারী পরিচালক ও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা সম্মানী না নিলেও পরিপত্র না মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাগণ ঠিকই সম্মানীর নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে দফতরটির পরিচালক কিছু কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। এই কর্মকর্তারা প্রত্যেক বছরই নানা অযুহাতে অবৈধ সম্মানী গ্রহণ করে আসছেন। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জুনে বাজেট করার কাজ দেখিয়েও এ কর্মকর্তারা বেসিক পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের লাখ লাখ টাকার অডিট আপত্তি রয়েছে। যা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অগ্রণী ব্যাংকের রাজস্ব তহবিল- জবির চলতি হিসাব নং ০২০০০০১২০৫৩৬০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের সম্মানী বাবদ অর্থ দফতরের উপ-পরিচালক খন্দকার হাবিবুর রহমান ৫৯ হাজার টাকা, মোহাম্মদ ইব্রাহিম মিয়া ৫০ হাজার টাকা, সহকারী পরিচালক এহেছান আহমেদ ৪০ হাজার, সহকারী পরিচালক সঞ্জয় কুমার পাল ৩৩ হাজার টাকা, সহকারী পরিচালক তরিকুল ইসলাম ৩৩ হাজার টাকা, সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম ৩১ হাজার টাকা, সহকারী পরিচালক মো. ইসরাফীল ২৫ হাজার টাকা, সেকশন অফিসার আরেফিন কাউছার ২১ হাজার টাকা, অফিস সেক্রেটারি কাম কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ১১ হাজার টাকা, ক্যাশিয়ার আব্দুল গাফফার ৯ হাজার ৯০০ টাকা, অফিস সহকারী মো. রফিকুল ইসলাম ৮ হাজার ৩০০ টাকা, এমএলএসএস স্বপন চন্দ্র সিং ১৫ হাজার ৮০০ টাকা, এমএলএসএস বিলামিন হোসেন আনোয়ার, সোহাগ হোসেন, জহিরুল ইসলাম, রাসেল আহমেদ প্রত্যেকে ৭ হাজার টাকা করে সম্মানী নিয়েছেন।
পরিপত্র না মেনে সম্মানী নেওয়ার বিষয়ে উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, ১০ হাজার টাকার উর্ধ্বে নেওয়া যাবে না বিষয়টি এমন না। তবে এটা কোন আইনে আছে আমার এই মুহূর্তে জানা নেই। পরিপত্র না মেনে সম্মানী কিভাবে নিলো জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক কাজী নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি এখন অফিসে যাব, এটা তো কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। এখানে সরকারি অনেকগুলা প্রজ্ঞাপন আছে, প্রায় ৬-৭ টা। এগুলো যারা ডিল করে তারা বলতে পারবে। আমি এখন রিকশায় আছি বলে ফোন কেটে দেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. শওকত জাহাঙ্গীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে শুধু বাজেট প্রণয়নের সময় একটি বেসিক গ্রহণের সুযোগ আছে। বিভিন্ন খাতের কাজ উল্লেখ করে একাধিকবার বেসিক সমপরিমাণ সম্মানী গ্রহণ করা অনুচিত।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক অটোনেমি থাকলেও ফাইন্যান্সিয়াল অটোনমি নেই। এ বিষয়টিতে আমরা সবসময় ভুল করি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা হওয়ায় আমরা অনেক সময় নিজেদের মত করে ব্যখ্যা দেই।এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি এবং এসএমএসেরও জবাব দেননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন