একজন মুমিনের জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,আল্লাহর সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। এটিই মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা : ৭২)। যার প্রতি আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হবেন,তার সবকিছুই অর্জিত হবে অনায়াসে। অথচ আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি বাদ দিয়ে মাখলুকের সন্তুষ্টির জন্য কত কিছুই না করি! রবের সন্তুষ্টি লাভের অনেক মাধ্যম রয়েছে। তার মধ্যথেকে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-
(১) হৃদয়ে সর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার আশা লালন করা : রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,বান্দা যদি সর্বদা তার রবের সন্তুষ্টির আকাঙ্ক্ষা করতে থাকে। একসময় আল্লাহ তায়ালা জিবরাইল (আ.) কে বলে দেন যে,অমুক বান্দা আমার সন্তুষ্টিপানে উৎসুক,তাই তাকে আমি আমার দয়ার চাদরে ঢেকে নিলাম। (মুসনাদে আহমদ : ২২৪৫৪)। (২) মিসওয়াক করা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মিসওয়াক হলো মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। (সুনানে নাসায়ি : ৫)।
(৩) পানাহারের পর আলহামদুলিল্লাহ বলা : প্রিয়নবী (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ সে বান্দার উপর সন্তুষ্ট, যে খাবার খাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ বলে অথবা পানীয় পান করার পর আলহামদুলিল্লাহ বলে। (রিয়াজুস সালেহিন : ১৪৪)। (৪) পিতার সন্তুষ্টি অর্জন : রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, পিতার সন্তুষ্টির মাঝেই রবের সন্তুষ্টি আর পিতার অসন্তুষ্টির মাঝেই রবের অসন্তুষ্টি রয়েছে । (জামে আত তিরমিজি : ১৮৯৯)।
(৫) মানুষের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্রতী হওয়া : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন যে ব্যক্তি মানুষের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হয়, মানুষের দুঃখ-কষ্ট থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ তা’আলা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে মানুষের সন্তুষ্টি অর্জনে ব্রতী হয় আল্লাহ তাকে মানুষের দায়িত্বে ছেড়ে দেন। (সুনানে তিরমিজি : ২৪১৪)। (৬) বিপদাপদে আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকা: রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,বিপদ যত মারাত্মক হবে প্রতিদান ও তত মহান হবে। আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন, তখন বিভিন্ন বালা-মুসিবত দিয়ে তাদের পরীক্ষা করেন। সুতরাং যারা এর উপর সন্তুষ্ট থাকে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যারা এর উপর অসন্তুষ্ট থাকে তাদের জন্য রয়েছে মহান রবের অসন্তুষ্টি। (সুনানে তিরমিজি : ২৩৯৬)।
(৭) প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা : প্রিয়নবি (সা.) ইরশাদ করেন, যে মুমিন বান্দা সকাল-সন্ধ্যা তিনবার এই দোয়াটি-’রাজিতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনান ওয়া বি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পাঠ করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে বিচার দিবসে অবশ্যই সন্তুষ্ট করে দেবেন। (আল আহাদ ওয়াল মাসানিলি আহমদ : ৪৭১)। (৮) পবিত্র বাক্য উচ্চারণ : রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি কখনো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির কথা বলে যার সম্পর্কে সে ধারণ ও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, অথচ আল্লাহ তায়ালা তার একথার বিনিময়ে তার সাথে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত সন্তুষ্টি লিখে দেন। (জামে আত-তিরমিজি : ২৩১৯)।
(৯) আল্লাহর জিকির : হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে অধিক উত্তম কাজ সম্পর্কে জানাবো না,যা তোমাদের মালিকের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক থেকে সবচেয়ে উঁচু, সোনা-রূপা, দান-সদকা করার চেয়েও বেশি ভালো এবং তোমাদের শত্রুর মোকাবেলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের নিধন করা ও তোমাদেরকে তাদের নিধন করার চেয়েও উত্তম? তারা বললেন, হ্যাঁ! তিনি বললেন, তা হলো আল্লাহ তায়ালার জিকির। (সুনানে তিরমিজি : ৩৩৭৭)।
(১০) তিনটি বৈশিষ্ট্য অর্জন করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের তিনটি কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন। যে তিন কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন তা হলো : (১) তোমরা তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকেও শরিক করবে না। (২) আল্লাহর রজ্জু( কোরআন) মজবুত করে ধরবে। (৩) রাষ্ট্রপ্রধানকে নসিহত করবে।
আর যে তিন কাজে তিনি অসন্তুষ্ট হন, তা হলো : (১) অধিক কথা বলা। (২) অপব্যয় করা। (৩) অধিক ভিক্ষা করা। ( মুয়াত্তা ইমাম মালেক : ১৮০৪)। তবে নেক আমলের পাশা পাশি নিজেকে গুনাহমুক্ত রাখতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন