শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

হালাল উপার্জনে বরকত আনে

মো. সাইফুল মিয়া | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত। আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত মেধা ও ক্ষমতার বলে কিছু মানুষ অসৎ পথে রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে। অন্যদিকে কিছু মানুষ রাত দিন হাড়-ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও ক্ষুধার জ্বালার ছটফট করছে। এই দুই পথে পৃথিবীর সকল মানুষ পরিচালিত। মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র। আমরা কালেমা তায়েবায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি। আল্লাহতায়ালা পবিত্রতাকে ভালোবাসে। তাই যারা প্রিয় আল্লাহর বান্দা তারাও সর্বক্ষেত্রে নিজেতে পবিত্র রাখে। রিজিক মহান আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার জন্য বিশেষ অনুগ্রহ। আল্লাহর গুণবাচক নামে মধ্যে একটি আল্লাহু রাজ্জাকুন অর্থাৎ আল্লাহ রিজিকদাতা। আল্লাহতায়ালা মানুষ পৃথিবীতে আসার আগেই তার রিজিক নির্ধারিত করে রেখেছেন। মানব শিশু যখন জন্মগ্রহণ করার পর আল্লাহতায়ালা তার জন্য মায়ের দুধের ব্যবস্থা করে দেয়। আল্লাহতায়ালা চাই বান্দা তার প্রাপ্য রিজিকগুলো যেন হালাল উপায় সংগ্রহ করে।
ইসলাম হালাল রিজিক উপার্জন করতে এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে ও প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হাদিসে হালাল উপার্জনের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। নবীগণ নিষ্পাপ হওয়ার পরও তাদের হালাল রিজিকের কথা বলেছেন। তাই সকল নবী ও রাসূলগণ কোনো না কোনো হালাল পেশা অবলম্বন করেছেন। আদি পিতা হজরত আদম (আ.) কৃষি কাজ করতেন। হজরত নূহ (আ.) কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। হজরত ইদ্রিস (আ.) দর্জির কাজ করতেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) রাজমিস্ত্রি ছিলেন।
হজরত ইসমাঈল (আ.) রাজমিস্ত্রির সহযোগী ছিলেন। আমাদের প্রিয় নবী প্রিয় হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছাগল চরিয়েছেন ও ব্যবসা করেছেন। কারণ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে রাসুলরা! তোমরা হালাল পবিত্র উত্তম রিজিক খাও আর সৎকর্ম করো।’ (সুরা মুমিনুন : ৫১)। তাছাড়া মুসলিম জাহানের চার খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) ব্যবসা করেছেন। হজরত ওমর (রা.)ও ব্যবসা করেছেন। হজরত ওসমান (রা.) কাপড়ের ব্যবসা করেছেন। হজরত আলী (রা.) কিছু খেজুর বিনিময়ে কূপ থেকে পানি ওঠানোর কাজ করতেন। সকল মোমিনদের উদ্দেশশ্যে আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা! তোমরা হালাল উত্তম রিজিক আহার করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছি।’ (সুরা বাকারা : ১৭২)।
নামাজ, রোজা যেমন আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত ফরজ ইবাদত। তেমনিভাবে হালাল উপার্জনও একটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হয়, তখন জমিনে ছড়িয়ে পড়, আর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে থাক, যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার।’ (সুরা জুমুআ: ১০) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হালাল জীবিকা সন্ধান করা নির্ধারিত ফরজগুলোর পরে বিশেষ একটি ফরজ।’ (বায়হাকি; কানযুল উম্মাল)। জান্নাতে যাওয়ার পূর্ব শর্তও হালাল উপার্জন। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন- ‘ওই গোশত দেহ জান্নাতে যাবে না, যা হারাম খাবার থেকে উৎপন্ন। জাহান্নামই এর উপযোগী। (সুনামে তিরমিজি -৬১৪)। ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশত হালাল উপার্জন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি একমাত্র পবিত্র বস্তুকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ রাসুলগণকে যে আদেশ করেছেন, মুমিনগণকেও সেই আদেশ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা হালাল পবিত্র খাদ্য ভক্ষণ কর এবং সৎ আমল কর। তিনি আরো বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার দেয়া হালাল পবিত্র রিজিক থেকে খাও। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সা.) উল্লেখ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি দূর-দূরান্তে সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধুলা-বালি লেগে আছে। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি উভয় হাত আসমানের দিকে তুলে কাতর স্বরে— হে প্রভু! হে প্রভু! বলে ডাকছে। অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং সে হারামই খেয়ে থাকে। এই ব্যক্তির দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ২৭৬০)
প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের এমন এক কাল অতিক্রম করবে, যাতে মানুষ এ কথার চিন্তা করবে না, যে সম্পদ উপার্জন করা হচ্ছে তা হালাল না হারাম?’ (মিশকাত) বর্তমানে অধিকাংশ পেশার মানুষ পরোক্ষভাবে হারাম উপার্জনের সাথে সর্ম্পকিত হয়েও নিজেকে সমাজে হালাল উপার্জনকারী হিসেবে পরিচিত দেয়, গর্ব করে। আমরা হারাম উপার্জন বলতে শুধু সুদ, ঘুষকে বুঝি। কিন্তু কাজে ফাঁকি কিংবা সঠিকভাবে কাজ না করে মাস শেষে বেতন নেওয়া কিন্তু হালাল নয়।
বান্দার দুনিয়ার সকল কৃতকর্মের হিসাব পরকালে দিতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের ময়দানে বনু আদমকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। সেই পাঁচটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দেয়া পর্যন্ত কোনো মানুষ অর্ধ হাত পরিমাণ সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। তারমধ্যে একটি হলো-সে কোন পথে উপার্জন করেছে।’ (তিরমিজি : ২৪১৬)। হালাল পথে অল্প উপার্জনেও আল্লাহতায়ালা বরকত দেয়। তাই আসুন আমরা নিজে হালাল পথে উপার্জন করি এবং অন্যদের হালাল পথে উপার্জনে উৎসাহী করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে হালাল উপার্জনের সক্ষমতা দান করুন, আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন