শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দক্ষিণের ৬৭ হাজার ভোটারই ট্রাম্পকার্ড

কুসিকে মেয়র নির্বাচন

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

আর পাঁচ দিন পরই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় হেভিওয়েট তিন মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত, বিএনপি থেকে বহিস্কৃত দুই নেতা সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারের প্রতিদিনের গন্তব্য সিটির দক্ষিণাংশের ৬৭ হাজার ভোটারের ৯টি ওয়ার্ডে।
দশ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া বঞ্চিত সিটি করপোরেশনের মর্যাদা পাওয়া কুমিল্লা দক্ষিণ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় ৬৭ হাজার ভোটারের গতিবিধি এবারের সিটি নির্বাচনে বদলে দিতে পারে মেয়র প্রার্থীর ভাগ্য। ওই তিন মেয়র প্রার্থী ছাড়াও আরও দুইজন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তারা হলেন- নাগরিক কমিটির কামরুল হাসান বাবুল (হরিণ প্রতীক) ও ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা প্রতীক)।

গত নির্বাচনের পরিসংখ্যান সামনে রেখেই সিটির দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ড চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও দুই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা। নানা প্রতিশ্রুতির সাথে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন উন্নয়নের। দক্ষিণাংশের ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় ৫০টি এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ১৯ নম্বর থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাসকারী ভোটাররা গত নির্বাচনের চেয়ে এবার অনেক হিসেবি হয়ে উঠেছেন।

তাদের কথা, এবার মেয়র প্রার্থীদের মন ভোলানো কথার ফাঁদে আর পড়তে চান না। তাদের অভিযোগ, ‘সিটির বাসিন্দা’ এই তকমা গায়ে ঝুলিয়ে দশ বছর লোকসানের অঙ্কই কষেছেন তারা। ইপিজেডের বিষাক্ত বর্জ্য থেকে তাদের মুক্তি দিতে পারেননি সাবেক মেয়ররা। বিষাক্ত বর্জ্যে ফসলের ক্ষতিতে দিন যায় কৃষকের। নতুন যিনি আসবেন তিনি কী এর সমাধান করতে পারবেন? তাই ভোটাররা অনেক হিসেব নিকেশ করেই এবারে ভোট দিবেন। দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ডবাসী মনে করেন, তাদের দেয়া ভোটেই মেয়র প্রার্থীর ভাগ্য বদলায়।

২০১১ সালে কুমিল্লা পৌরসভার ১৮টি ও সদর দক্ষিণ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরু। এরপর ২০১২ ও ২০১৭ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুটি নির্বাচনেই জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখেন দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডের ভোটাররা। কিন্তু পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন নামের পরিবর্তন হলেও ১০ বছরে তেমন একটা উন্নয়ন হয়নি। নাগরিকদের অভিযোগ, উন্নয়ন না হলেও করের বোঝা বইতে হচ্ছে তাদের। প্রতি বছর কর দিয়েই যাচ্ছেন, বিনিময়ে সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন না। গত নির্বাচনে (২০১৭ সালের) মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু তার নির্বাচনী ইশতেহারে নগরবাসীকে দেওয়া ৪৯টি প্রতিশ্রুতি মেয়র হওয়ার পরও প্রতিশ্রুতিতেই আটকে ছিল। কেবল ৯টি ওয়ার্ডে কয়েকটি পাকা সড়ক ছাড়া দৃশ্যমান উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি।

এদিকে প্রচারণা শুরু দিন থেকেই আলোচিত তিন মেয়র প্রার্থীর চোখ দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডের দিকে। আর প্রতীক পেয়ে প্রথমদিন থেকেই দক্ষিণের এলাকা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন কায়সার। এরপর একই এলাকায় প্রচারণায় নামেন ঘড়ি প্রতীকের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। দুইদিন পর প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে কুমিল্লা সিটির ওই ৯টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এলাকাই বিএনপি অধ্যুষিত। বিএনপির রাজনীতিতে জড়িতদের বেশিরভাগই দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক হাজী ইয়াছিন ও দক্ষিণের বাসিন্দা সাবেক এমপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর সমর্থক। মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ওই ৯টি ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এবার নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডগুলোকে পরিপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবো। ভোটের মাঠে বেশিরভাগই বিএনপি মনা হওয়ায় এবারে ঘোড়া ও ঘড়ি প্রতীকে বিভক্ত হয়ে পড়বে দলটির ভোট।

এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রিফাতের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই ও সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার নৌকার পক্ষে দক্ষিণের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। আরফানুল হক রিফাত বলেন, দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এটি সত্য।
স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, দক্ষিণের বেশিরভাগই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বিগত দিনে তারা মিথ্যে প্রতিশ্রুতির বেড়াজালে আটকা পড়েছিলেন। এবারে সেই ফাঁদে পা দিবেন না। আর আমিও প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়িতে বিশ^াসী নই। আমি নির্বাচিত হলে দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডের মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন