বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নির্বাচনে ট্রাম্পের তিন সন্তানের বহুমুখী ভূমিকা : প্রশাসন গঠনেও প্রভাব বিস্তার

এপি | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১২ এএম, ২২ নভেম্বর, ২০১৬


প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের বাবার চমকপ্রদ বিজয় লাভের দিন থেকে প্রায় প্রতিদিনই সকালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের তিন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে ট্রাম্প টাওয়ারের লবি দিয়ে হেঁটে যান এবং একটি এলিভেটরে চড়েন। কিন্তু ডন জুনিয়র, ইভাংকা ও এরিক কি ৬ষ্ঠ তলায় বাবার নির্বাচনী অফিসে যাচ্ছেন? কিংবা ২৬ তলায় তাদের ব্যবসায়িক অফিসে? কিংবা ৫৭ তলায় ডোনাল্ডের পেন্ট হাউসে?
এই অনিশ্চয়তা বাবার ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা যে বহুমুখী ভূমিকা পালন করছে সে কথাই তুলে ধরে। গত বছর থেকে রাজনৈতিক প্রচারণা ও ব্যবসা সাম্রাজ্যের মধ্যে এ বিষয়টি অব্যাহতভাবে অস্পষ্টতা তৈরি করেছে এবং ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস এবং তার বিস্তৃত ব্যবসায়িক স্বার্থের মধ্যে সম্ভাব্য স্বার্থের বিরোধ বিষয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।  
ট্রাম্পের সন্তানরা যদি ওয়াশিংটন পর্যন্ত তাদের বাবাকে অনুসরণ নাও করে তবু তারা তার উপর তাদের বিপুল প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় অব্যাহতভাবে বলেছেন, যদি তিনি বিজয়ী হন তার ছেলেমেয়েরা নিউইয়র্কেই থাকবে ও তার ব্যবসা পরিচালনা করবে। কিন্তু তার তিন ছেলেমেয়ে ও মেয়ে ইভাংকার স্বামী জ্যারেড কুশনার প্রত্যেকেই অন্তর্বর্তী কমিটির নির্বাহী কমিটির অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
এ পর্যন্ত নয়া প্রশাসন গঠনে তারা ভীষণভাবে জড়িত বলে জানা গেছে। তারা বিভিন্ন সভায় যোগ দিচ্ছেন ও গভীর রাতে বাবার সাথে কথা বলছেন। তারা রিপাবলিকান জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান রেইন্স প্রিবাসকে হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ নিয়োগে ওকালতি করেছেন। তারা ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচনী ম্যানেজার কোরি লেওয়ানডস্কিকে ফিরিয়ে আনার বিপক্ষে পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের পরামর্শেই কোরিকে জুনে বরখাস্ত করা হয়।
১৭ নভেম্বর ট্রাম্প টাওয়ারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় ইভাংকা ট্রাম্প ও কুশনার উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি তার সবকিছু একটি আর্থিক ট্রাস্ট গঠন করে হোয়াইট হাউস ও তার কোম্পানির মধ্যে একটি দেয়াল তৈরি করবেন। তবে ট্রাস্টের ট্রাস্টি থাকবেন তার ছেলেমেয়েরা।
ট্রাম্পের মহিলা মুখপাত্র হোপ হিকস বলেন, আমরা দি ট্রাম্প অর্গানাইজেশন ও এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা ডোনাল্ড জুনিয়র, ইভাংকা ও এরিক ট্রাম্পের কাছে অবিলম্বে হস্তান্তরের লক্ষ্যে বিভিন্ন কাঠামোর পরীক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি। তিনি বলেন, এ কাঠামো সকাল প্রযোজ্য নিয়ম-কানুন মেনে চলবে।
ট্রাম্পের কোম্পানি হচ্ছে কোনো আধুনিক ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বৃহত্তম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় নৈতিকতা আইনে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস থেকে তার ব্যবসা চালাতে পারবেন অথবা খুব সম্ভবত তার ছেলেমেয়েদের নেয়া সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন।
এটা স্বার্থ সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধ সৃষ্টি করছেঃ উদাহরণ স¦রূপ ট্রাম্প বৈদেশিক চুক্তি করার সময় অভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণ করতে পারেন যা তার কর্পোরেশনকে প্রভাবিত করতে পারে যদি তা কৌশলগতভাবে তার ছেলেমেয়েদের হাতে থাকেও।
ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা কেলিইয়ান কনওয়ে এ ধারণার সাথে একমত নন যে অন্তর্বর্তী প্রক্রিয়ায় ট্রাম্পের ছেলেমেয়েদের সম্পৃক্ততা আস্থা ভঙ্গের কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, আপনারা মনে করছেন যে তারা বিশেষ কিছু কাজ করছে যা তাদের করা উচিত নয়। তার ছেলেমেয়ে। তারা দীর্ঘদিন ধরে তার ব্যবসার সহযোগী। তারা অবশ্যই তাদের পিতাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থন দেবে।
কিন্তু সম্ভাব্য সমস্যাগত জটিলতা দেখা দেয় গত সপ্তাহে যখন সিবিএস টিভিতে “সিক্সটি মিনিটস’’ নামের এক সাক্ষাতকারের সময় ইভাংকা ট্রাম্প যে ১০ হাজার ৮শ’ ডলার দামের ব্রেসলেট পরেছিলেন তার কোম্পানি তার প্রচার চালানোয়। পরে কোম্পানির  মহিলা মুখপাত্র এ জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তার ছেলেমেয়েরা সাক্ষাতকার দেয়ার ক্ষেত্রে সংযত। ট্রাম্প প্রশাসনে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কি ভূমিকা সে ব্যাপারে কম কথা বলেন।
১৯৬৭ সালে কংগ্রেসের পাশ করা স্বজনপ্রীতি-বিরোধী আইনে প্রেসিডেন্টের তার অফিসে বা তিনি তার তদারকিদীন কোনো সংস্থায় পরিবারের সদস্যদের নিয়োগদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি তার ভাই রবার্টকে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ করার পর প্রতিক্রিয়ায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়।
তবে এ আইন ছেলেমেয়েদের বা কুশনারের নিয়োগে বাধা হতে পারবে বলে মনে হয় না। কুশনার ট্রাম্পের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং বলা হচ্ছে হোয়াইট হাউস ভূমিকার জন্য বিবেচিত হচ্ছেন, তা বিনা বেতনের উপদেষ্টা বা অনানুষ্ঠানিক পরামর্শদাতার পদও হতে পারে।
তার তিন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে যাদের মা হচ্ছেন তার সাবেক পতœী ইভানা ট্রাম্প, তারা এই গ্রীষ্মে রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলনে ভালো বক্তৃতা করেন। তাদের বক্তৃতায় তারা তাদের বাবার মানবিক রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
নির্বাচনের সময় ডন ও এরিক জুনিয়র রক্ষণশীল রেডিওতে প্রচারণায়, রাস্তায়, নির্বাচন অফিসগুলোতে ঘোরাঘুরিতে এবং ওহাইও ও নর্থ ক্যারোলাইনার মত ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে ছোট ছোট সমাবেশের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এদিকে ইভাংকা ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচাণার বৃহত্তম মুহূর্তগুলোতে ব্যবহৃত হন যার মধ্যে ছিল রিপাবলিকান সম্মেলনে বক্তৃতা দেয়ার আগে তার বাবাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া, তার পারিবারিক ছুটির পরিকল্পনা প্রকাশ করা এবং গুরুত্বপূর্ণ ফিলাডেলফিয়া শহরতলিতে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো।
ট্রাম্পের আরেক মেয়ে টিফানি ট্রাম্প হচ্ছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী মারলা মেপলসের মেয়ে যিনি সম্প্রতি কলেজ স্নাতক হয়েছেন। তিনিও তার পিতার পক্ষে কাজ করেছেন। ট্রাম্পের সবচেয়ে ছোট সন্তান ম্যানহাটানের একটি বেসরকারী স্কুলের ছাত্র ১০ বছর বয়সী ব্যারন হচ্ছে তার তৃতীয় ও বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের ছেলে।
এরিক ও ইভাংকা খবরের বিব্রতকর শিরোনাম যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে যে তারা নিউইয়র্ক প্রাইমারিতে তাদের বাবার পক্ষে যথাসময়ে ভোট নিবন্ধিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এরিক ও ডন জুনিয়র আফ্রিকার এক বিগ-গেম সাফারিতে প্রাণি অধিকার কর্মীদের সমালোচনার শিকার হন। ডন জুনিয়র টুইটারে সিরীয় উদ্বাস্তুদের সাদৃশ্যযুক্ত ছবি এবং শে^তাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বমূলক কার্টুন চরিত্র এঁকে সমালোচিত হন।
যাই হোক না কেন, এখন তারা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট সন্তান হতে চলেছেন যাদের সবার বয়স ৩০-এর ঘরে। প্রচারণাকালে এরিক ট্রাম্প গত মে’তে এপিকে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে ছেলেমেয়েদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে কোম্পানি, তবে আমরা যদি প্রয়োজন হয় তাহলে একটি ফোন কল দূরত্বে থাকব। এ মানুষটির জন্য আমাদের সব করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন