স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সম্পত্তিতে ‘কনকর্ড গ্রুপ’ নির্মিত ১৮ তলা ভবনটি এতিমখানাকেই বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির রিভিউ আবেদন সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেয়ায় এতিমখানাই ভবনটির মালিকানা পেলো বলে জানিয়েছেন রিটের পক্ষের অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রিভিউ আবেদনটি খারিজ করে দেন। কনকর্ডের পক্ষে রিভিউ শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ. ওয়াই মসিউজ্জামান ও ব্যারিস্টার আখতার ইমাম।
এর আগে ২০১৮ সালের ১২ মার্চ রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার জায়গায় আবাসন প্রতিষ্ঠান কনকর্ড নির্মিত ১৮ তলা ভবন এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে জারি করা এক রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার এবং বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের তৎকালিন ডিভিশন বেঞ্চ ঢাকার আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার জায়গায় কনকর্ড নির্মিত ১৮ তলা ভবন এতিমখানাকে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে চার দফা নির্দেশনাও দেন। চার দফা নির্দেশনা হচ্ছে (ক) আজিমপুর এতিমখানার সম্পত্তি সংরক্ষণ করতে হবে। (খ) এতিমখানার সম্পত্তি হস্তান্তর সম্পর্কে ২০১৩ সালের ২২ জুলাইয়ের দলিল এবং ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিলের আম মোক্তারনামা দলিল বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, কারণ সেগুলো শুরু থেকেই বাতিল। (গ) এতিমখানার জায়গায় কনকর্ডের তৈরি ১৮ তলা ভবন এতিমখানার পক্ষে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। (ঘ) কনকর্ডকে ৩০ দিনের মধ্যে স্থাপনা ও সম্পত্তি এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। ব্যর্থতায় সরকারকে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এতিমখানার প্রয়োজনে ডেভলপ করার নির্দেশ দেয়া হয়। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে কনকর্ড।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ১৯০৯ সালে ঢাকার নবাব ‘সলিমুল্লাহ এতিমখানা’ স্থাপন করেন। পরে সরকারের কাছ থেকে আজিমপুর সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন সময় জমি লিজ নিয়ে পরিচালনা করে আসছে। ২০০৩ সালের ২২ জুলাই এতিমখানার সভাপতি শামসুন্নাহার ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জি এ খান আহসান উল্লাহ এতিমখানার ২ বিঘা জমি ডেভলপার কোম্পানি কনকর্ডের কাছে হস্তান্তর করেন। এতিমখানার সম্পত্তি অবৈধ হস্তান্তর সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পায়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে চার জন ছাত্রের পক্ষে রিট করেন মনজিল মোরসেদ। পরে ওই রিট পিটিশনে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পক্ষভুক্ত হয়।
রিটে উল্লেখ করা হয়, এতিমখানার সম্পত্তি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া এবং লিজ চুক্তিতে এতিমখানার সম্প্রসারণের জন্য বিনামূল্যে দেয়া হয়। শর্ত ছিল প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো কাজে জমি ব্যবহার করা যাবে না। এরপরও এতিমখানার সভাপতি ও সেক্রেটারি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হয়ে এতিমখানার সম্পত্তি কনকর্ড গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন