মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মুক্ত বাণিজ্য নীতিতে খাদ্য সঙ্কটের সমাধান হবে না

ডব্লিউটিও ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন ১৩-১৫ জুন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) আগামী ১৩ থেকে ১৫ জুন ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এতে বিশ্ব খাদ্য সঙ্কট বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে জি-৭ নেতারা ও বিশ্বের ধনী দেশগুলো আরও মুক্ত বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকছে। তবে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে তাদের এ সিদ্ধান্ত যথাযথ নয়।
কয়েক দশকের বাধাহীন বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণের কারণে স্থানীয় অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে, গ্রাম অঞ্চলে বেড়েছে দরিদ্রতা, তীব্র হয়েছে কৃষি সম্পর্কিত দ্বন্দ্ব-সংঘাত, প্রকট হয়েছে অভিবাসী সঙ্কট, ত্বরান্বিত হয়েছে ক্ষুধা। তাই সব দেশে খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার জন্য একটি আমূল পরিবর্তনের সময় এখনই।
জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন, করোনা মহামারি ও সবশেষ রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ আন্তর্জাতিক কৃষি বাজার ও খাদ্য ব্যবস্থায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কৃষি উৎপাদনে ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে কৃষি পণ্যের দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হয়েছে। বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কিছু আমদানি নির্ভর দেশ অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
ট্রান্সন্যাশনাল এগ্রিবিজনেস করপোরেশনগুলো অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের চেয়ে মজুত করে রফতানি করতে পছন্দ করছে। কখনো কখনো ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ মূল্য নিয়ন্ত্রণে জাতীয় সরকারগুলোকে রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য করে।
বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা মুক্ত বাণিজ্য ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির ফলে টিকে রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ সংকটে এটি এখন গভীর সঙ্কটে পড়েছে। তারপরও বিশ্বের ধনী দেশগুলো অধিকতর মুক্ত বাণিজ্যে জোর দিচ্ছে।কিন্তু বাস্তব সমাধান সবসময় উপেক্ষা করা হয়েছে।
খাদ্য সার্বভৌমত্ব নীতিরভিত্তিতে জাতীয় পাবলিক নীতিতে সমর্থন করে আসছে বিশ্বব্যাপী কৃষক আন্দোলন। স্থানীয় উদ্যোগের মাধ্যমেই সংকট মোকাবিলা করা যায়, যেটা এখন দেখা যাচ্ছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে খাদ্য বাণিজ্যের বিশ্বায়নের পরিবর্তে দেশগুলোর স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন রক্ষা, প্রচার, কৃষি বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মজুতে অধিকার থাকা উচিত।
২০১৩ সালে বালিতে মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন হয়। তখন থেকেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাটি একটি স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করে আসছে। এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব এখনো ঝুলে আছে। অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশ স্থায়ী সমাধানের পক্ষে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ম অনুযায়ী, খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে মুক্ত-বাজার বাণিজ্য ব্যবস্থায় বাধ্য থাকতে বাধ্য করে। এমনকি অনেক সময় তাদের জাতীয় আইন পরিবর্তনেও বাধ্য করে।
ডব্লিউটিওর মতো যে আন্তর্জাতিক সংস্থা শুধু উন্নত ও ক্ষমতাধর দেশের পাশে থাকে তার প্রয়োজনীয়তা কি? এখনই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাটির সংস্কার করা দরকার। গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো। ক্ষুধায় ভুগছে দুই কোটি ৭০ লাখ মানুষ। ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানেও ক্ষুধার প্রকোপ বেড়ে নয় দশমিক এক শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে শ্রীলঙ্কা, লেবানন, মিশরসহ বিভিন্ন দেশে।
খাদ্য সার্বভৌমত্বের পথ তৈরি করতে পারে এমন দৃঢ় পদক্ষেপ রয়েছে। ডব্লিউটিওর যেসব নিয়ম দেশগুলোকে পাবলিক ফুড স্টকহোল্ডিং সিস্টেমের বিকাশ করতে ও তাদের স্থানীয় কৃষকদের সমর্থন করতে বাধা দেয় তা অবিলম্বে স্থগিত করা উচিত। ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে আমদানি ও রফতানিকারকদের মধ্যে স্বচ্ছ আলোচনা হতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তায় স্থিতিশীলতা আনতে চাইলে খাদ্য শাসন ও রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র আকারের খাদ্য উৎপাদকদের বিশ্বব্যাপী খাদ্য শাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা উচিত। কৃষকদের অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রে বর্ণিত অধিকারগুলোকে আইনত বাধ্যতামূলক উপকরণ হিসাবে প্রয়োগ করা উচিত। পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষিবিদ্যা ও কৃষি সংস্কার অবশ্যই টেকসই খাদ্য উৎপাদনের অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠতে হবে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা মানুষের আস্থা হারিয়েছে। সব দেশের সরকারের উচিত কৃষি বিষয়কে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বাইরে রাখা। খাদ্য সার্বভৌমত্বকে সামনে রেখে বিকল্প বাণিজ্য ব্যবস্থা ও কৃষি নীতি গড়ে তোলা উচিত।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন