কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা নদী তীরবর্তী হাজারো মানুষ। ইতোমধ্যে নদী ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রামসহ বসতবাড়ী, আবাদি জমি ও স্থাপনা। বর্ষা আসার আগেই হঠাৎ করে ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বসতবাড়ী, গাছপালাসহ আধাপাকা বোরো ধান ক্ষেত। গত দেড় মাসে অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনে শত শত বিঘা আবাদি জমি, গাছপালা, পুকুর ও মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী ভাঙনে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিশেহারা হয়ে পরেছে তিস্তা পাড়ের মানুষ। তিস্তা বাধ এখন খুবি জরুরি হয়ে পড়েছে।
রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার শেষ সীমানা থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার ব্যাপি তিস্তা নদীর অবস্থান। এই দীর্ঘ নদী পথে মাত্র দুই কিলোমিটার জায়গায় স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও বাকী ৪১ কিলোমিটার জায়গা উন্মুক্ত রয়েছে। এসব উন্মুক্ত অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করায় নদীর পাড় রক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রতি বছর নতুন নতুন জায়গায় ভাঙন শুরু হওয়ায় বাড়িঘর, গাছপালা, আবাদি জমি ক্রমশ: হারিয়ে যাচ্ছে। চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও মন্দির মসজিদ। বর্তমানে রাজারহাটের ঘরিয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে তিস্তা নদীতে ৬ কিলোমিটার এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে। অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু বগুড়া পাড়া, রামহরি, খিতাবখাঁ ও বুড়িরহাটে তীব্র ভাঙনে কয়েক দিনে ১৭টি বাড়ী নদীগর্ভে চলে গেছে। যারা ভাঙনের মুখে রয়েছে তারা ভাঙন প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আর্জি জানান।
খিতাব খাঁ গ্রামের মন্ডল আলী জানান, ‘নদীর কাচারে পরি আছি, নদীর কোন ব্যবস্থা নাই; বস্তার কোন ব্যবস্থা নাই। আমরা যে কিভাবে থাকবো আমার কোন বুদ্ধি নাই। গতকাল থাকি তিস্তা নদীর ঢলে পাড় বহুদূর ভাঙ্গি বহুদূর আউগাইছে। কিন্তুক আমরা সরকার থাকি কোন ব্যবস্থা পাচ্ছি না। এই কারণে আমরা কিন্তু বর্তমানে বাঁশের থোপে, রাস্তার ধারে পরি পরি আছি। কাইল থাকি ফির যে ভাঙন শুরু হইছে আমরা কি থাকতে পারবো কি পারবের নই তার নিশ্চয়তা নাই।’
রামহরি গ্রামের মেহেরন জানান, ‘নদী আমার সউগ কিছু নিয়া গেইছে। আবাদী জমি গেইছে। দুই বিঘা ধানি জমিত গাছ লাগাইছিলাম ভাঙন শুরু হওয়ায় পানির দরে গাছগুলা বেছি দিতে হইছে। ৫ লাখ টাকার গাছ নদী ভাঙনের কারণে ৮০-৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করি দিছি। এখন বাড়িটা ভাঙলে আমরা নিঃস্ব হয়া যাবো।’
১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার আব্দুল বাতেন জানান, ‘এই এলাকায় গতিয়াসাম থেকে চতুরা পর্যন্ত প্রায় ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার জায়গায় তিস্তা নদীতে ভাঙন চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিলেও তা অপ্রতুল। এদিকে রক্ষা করলে আরেক দিকে ভাঙন শুরু হয়। এভাবে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানো যাবে না। এজন্য দরকার বেশি বেশি জিও টিউব ব্যাগ। তাহলে ভাঙন থেকে এলাকা রক্ষা পাবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ইনকিলাবকে জানান, তিস্তা নদীর বেশ কিছু জায়গা আমরা প্রটেক্ট করেছি। এখন নতুন নতুন জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সাধ্যমতো ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করছি। তবে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হলে তিস্তা নদী শাসন করা সম্ভব হবে।
এদিকে,
টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে আবারো সুনামগঞ্জের সুরমাসহ নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পয়েছে। গতকাল দুপুরে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আবারও সুনামগঞ্জে বন্যা দেখা দিতে পারে। এদিকে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার জেলা সদরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে৷ জানা গেছে, তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে তিনটি স্থানে ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন পর্যটকরাসহ সাধারণ মানুষ। গত বন্যায় জেলার বিভিন্ন সড়ক প্লাবিত হয়ে ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ওইসব এলাকার লোকজন। এছাড়া হাওর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষের ঘরে দুয়ারে পানি প্রবেশ করেছে। ভোগান্তি চরমে পড়েছে হাওরবাসী৷
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুদ্দোহা ইনকিলাবকে বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী ২৪ ঘন্টা ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন