প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, বিরোধীদলের অংশগ্রহণ ছাড়া স্বচ্ছ নির্বাচনও গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে। নির্বাচনটা হওয়া দরকার অংশগ্রহণমূলক। যেভাবেই হোক যদি মূল বিরোধীদল নির্বাচনে না আসে, তাহলে নির্বাচন স্বচ্ছ বা অস্বচ্ছ হোক, সেটার কিন্তু গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমে যাবে। কারণ ডেমোক্রেসির মূল কথাই হচ্ছে পজিশন এবং অপজিশন। আমরা চাই নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হোক।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনী বিধি মোতাবেক নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সহযোগিতা করতে বাধ্য। নির্বাচনকালীন সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের ধরন পাল্টে যাবে। তখন সরকার শুধু পলিসি নিয়ে কাজ করবে। বিশ্বের সব দেশেই এটা আছে। নির্বাচনী কাজে সরকার আমাদের সহায়তা দেবে। আইন অনুযায়ী এটা দিতে সরকার বাধ্য। সব নির্বাচনে আমরা সরকারের সহায়তা চাইবো। সরকারও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে আশা করি।
সিইসি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের কাছ থেকে মূলত তিনটি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রয়োজন। অন্য কোনো মন্ত্রণালয় নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর দরকার নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ করে, পুলিশ প্রশাসন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে। সরকারের এ তিনটি মন্ত্রণালয় নির্বাচনকালীন ইসিকে সহযোগিতা দেবে।
টিআইবির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, উনাদের বলেছি, আপনারা সরাসরি রাজনীতি না করলেও রাজনীতির ঊর্ধ্বে আপনাদের একটা অবস্থান আছে। প্রতিদিনের আক্রমণাত্মক মন্তব্যগুলো থেকে সরে এসে টেবিলে মুখোমুখি বসলে আলোচনা হবে গঠনমূলক। টেবিলের বাইরে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণাত্মক বক্তব্য পারস্পরিক বিরুদ্ধাচারণই বাড়াবে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমবে না। আমরা এ ধরনের দূরত্ব ঘোচাতে চাই।
তিনি বলেন, আইনে আমাদের কী ক্ষমতা তা আমাদের জানা। আমরা কিন্তু সে সহায়তা নিতে পারবো। পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। সহিংসতার কারণে নির্বাচন বিঘ্নিত হলে যে কোনো কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। আমরা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবো। পরিবেশ যেন বিরূপ না হয়, ভোটাররা যেন কেন্দ্রে যেতে পারে এবং নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেটা আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। কোথাও বড় ধরনের সহিংসতা হলে নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বরতরা ভোট স্থগিত বা আসন বাতিল করে দিতে পারবেন।
নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে জানতে চাইলে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে সেটাই নির্বাচনকালীন সরকার। অপজিশন থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ যেসব দাবি করা হচ্ছে এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। এগুলো আমাদের বিষয়ও নয়। এটা সাংবিধানিক বিষয়। রাজনৈতিক নেতারা একমত হয়ে এগুলো দেখবেন। আমরা শুধু চাই, বিধি মোতাবেক নির্বাচনকালীন সরকার ইসিকে সহযোগিতা করুক।
কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারের এলাকা ছাড়তে ইসির চিঠি সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সিইসি বলেন, এমপিদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো কি না জানি না। উনাকে (এমপি বাহার) চিঠি দিয়েছিলাম যেন উনি এলাকায় না থাকেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে বলা হয়েছে- সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবেন না। তিনি (এমপি বাহার) আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে, আমরা উনাকে চিঠির মাধ্যমে এলাকা ছাড়তে বলেছিলাম। উনি এলাকা ছাড়েননি।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সব দেশেই তো এটা হচ্ছে। ভারতে হচ্ছে, যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রেও দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হচ্ছে। সরকার তো সরকারই। দল ভিন্ন জিনিস। আমরা সরকার ও দলের মধ্যে এ পার্থক্য এবং বিভাজনটা স্পষ্ট করতে পারলে সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। কারণ, একটি দেশের সরকার পক্ষপাতিত্ব না করার শপথ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। সরকার সবসময়ই সম আচরণ করে। আমার বিশ্বাস, সরকার তার শপথটা ভালো করেই জানে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন