এবারের বাজেটে প্রথমবারের মতো দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই টাকা দেশে ফেরত আনা হবে কীভাবে, সেটি এখনও পরিষ্কার নয় অনেকের কাছে। তাই বিভ্রান্তি দূর করতে শিগগিরই একটি নির্দেশনা দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে কেউ সরকারের দেয়া সুযোগটি নিতে পারবেন। প্রবাসীরা যে প্রক্রিয়ায় দেশে রেমিট্যান্স পাঠান, একইভাবে কেউ পাচার করা টাকা দেশে আনতে পারবেন।
প্রথমে টাকার অঙ্ক বৈধ করার ঘোষণা দিতে হবে। তারপর ঘোষিত অর্থ বৈধ উপায়ে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনতে হবে। ওই টাকা দেশে আসার পর নিজ নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে জমা করতে হবে।
এনবিআর বলছে, ব্যাংকে টাকা জমা হওয়ার পর প্রযোজ্য হারে চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে আগে কর পরিশোধ করতে হবে। ১০০ টাকা নগদ আনলে ৭ টাকা কর দিতে হবে সরকারকে।
নগদ টাকার বাইরে বিদেশে যদি বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ থাকে, সেটিও বৈধ করা যাবে প্রযোজ্য হারে কর দিয়ে। এ জন্য সম্পদের মূল্য ঘোষণা করতে হবে। তবে কোনো অবস্থাতেই সম্পদের মূল্য ক্রয় করা দামের চেয় কম দেখানো যাবে না।
এনবিআর সূত্র বলেছে, সুবিধাভোগী তার ঘোষিত অর্থ বার্ষিক আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবেন। তবে অবশ্যই কর পরিশোধের প্রমাণপত্র রিটার্নের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কেউ বাড়ি, গাড়ি অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ঘোষণা করতে চাইলে অবশ্যই ‘বাজারমূল্য’ দেখাতে হবে এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দাখিল করতে হবে। কেউ যদি মিথ্যা সম্পদের হিসাব দেন, সন্দেহ হলে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে এনবিআর।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়, বিদেশে থাকা যেকোনো সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে এনবিআরসহ অন্য কোনো সংস্থা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবে না। স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ, অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং নগদ টাকা আনতে চাইলে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করা যাবে।
চলতি বছরের জুলাই থেকে আগামী ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগ দেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যারা টাকা ফেরত আনবেন তাদের শতভাগ গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে।
এনবিআরের একটি সূত্র বলেছে, এবার যে সুযোগটি দেয়া হয়েছে, তা অনেকেই গ্রহণ করবেন বলে তাদের প্রত্যাশা। এই সুবিধার আওতায় কমপক্ষে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার দেশে আসবে, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই টাকা দেশের অর্থনীতির ‘মূল স্রোতে’ যোগ হলে চাঙা হবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি। নতুন বাজেটে অর্থ পাচারকারীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার ফলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। সমালোচনাকারীদের মতে, এই সুযোগ দিয়ে অর্থ পাচারকারীদের পুরস্কৃত করল সরকার। তবে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পাশ্ববর্তীসহ অন্যান্য দেশেও অর্থ পাচারকারীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয় বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের ১৭টি দেশ পাচার করা টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে ইন্দোনেশিয়া। এই সুযোগ দেয়ার ফলে দেশটিতে প্রায় ৯৬০ কোটি ডলার দেশে ফেরত এসেছে। কেন এত সাড়া পাওয়া গেল- এ প্রশ্নের জবাবে রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় ট্যাক্স রেট ছিল মাত্র ৩, ৪, ও ৫ শতাংশ। এ জন্য ভালো সাড়া পাওয়া গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন