হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্প থেকে বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদে হাইকোর্টের দেয়া ৪ দফা নির্দেশনা ৯ দফা সুপারিশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)র স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত হাইকোর্টের আদেশই বহাল রাখেন। সেই সঙ্গে আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। আগামী ২৭ জুন এটির শুনানি। চেম্বার জাস্টিস এম. ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
গতকাল রোববার আদেশের বিষয়ে এ তথ্য জানান ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। চেম্বার কোর্টে রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার ইমাম হাসান।
এর আগে চলতিবছর ২৪ মে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ ৪ দফা নির্দেশনা ও ৯ দফা সুপারিশ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। এছাড়া বর্তমানে পরিচালিত ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চলাচল বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, রাজধানীর হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনোরূপ ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না। প্রতিটি ফোঁটা পানি অতি মূল্যবান। পানির চেয়েও তথা সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং প্রতিটি ফোঁটা পানির দূষণ প্রতিরোধ করা একান্ত আবশ্যক।
রায়ে বলা হয়, একটাই পৃথিবী। আমাদের দ্বিতীয় কোনো পৃথিবী নেই। পৃথিবী ব্যতীত আর কোনো গ্রহে পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে এক ফোঁটা পানি এ পৃথিবীর বাইরে থেকে আনতে সক্ষম হয়নি। অথচ উক্ত খরচের শত ভাগের এক ভাগ টাকা খরচ করলে আমরা আমাদের গ্রহের পানিকে দূষণমুক্ত ব্যবহারযোগ্য রাখতে সক্ষম। হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনোরূপ ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না।
রায়ে রিটটি ‘চলমান’ হিসেবে অব্যাহত থাকবেÑ মর্মে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া যেসব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া হাতিরঝিল ও পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক প্রচারণা ও সোচ্চার ভূমিকা পালন করে চলেছে রায়ে তাদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
হাতিরঝিল সম্পর্কে রায়ে বলা হয়, হাতিরঝিলসহ তেজগাঁও এলাকায় অনেক ভূ-সম্পত্তি ভাওয়াল রাজার এস্টেটের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজার হাতিরপাল এই ঝিলে স্নান করত এবং পানিতে বিচরণ করত বলে কালপরিক্রমায় এর নাম হয় ‘হাতিরঝিল’।
প্রসঙ্গত: বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ১ হাজার ৯৭১.৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৩০২ একর জমির ওপর এ প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠিত। প্রকল্প এলাকার মোট ১৬ কি.মি. রাস্তায় কোনো বাস অথবা মিনিবাস চলাচলের অনুমতি ছিল না। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৫/২০০৯তম সভায় অনুমোদিত লে-আউটে প্রস্তাবিত ওয়াকওয়ে ও রোডওয়ে এলাইনমেন্ট ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। প্রকল্পটি ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, বৃষ্টি, বন্যাজনিত পানি ধারণ, বৃষ্টির পানি পয়ঃনিষ্কাশন ও নগরের সৗন্দর্য বৃদ্ধি করে। সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। খালগুলোর জন্য প্রস্তাবিত সুবিশাল লেকটি একটি নিয়ন্ত্রিত ‘হাইড্রোলিক সিস্টেম’ হিসাবে কার্যকর হয়। এতে ওই এলাকা ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি পায়, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় ও সৌন্দর্যমণ্ডিত পাবলিক স্পেসের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।
এর আগে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টে লে-আউট প্ল্যানের নির্দেশনার বাইরে কতিপয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে রাজউকের নিষ্ক্রিয় থাকার প্রতিবেদন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টম্বর ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’ জনস্বার্থে রিট করে। শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১০সেপ্টম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে ২০২১ সালের ৩০ জুন ওই রুল চূড়ান্ত করেন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাজউক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন