বর্ষার শুরুতে টানা বর্ষণ আর জোয়ারে পানিবদ্ধতায় চট্টগ্রামে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। অবিরাম বর্ষণের মধ্যে ফের পাহাড় ধসের ঘটনায় এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া একটি ভবনের নীচতলায় বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত না হলেও আগের রাতে টানা বর্ষণে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বিকেলে ফের এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় অনেক এলাকা। পানিবন্দি লোকজনকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। নগরীর বাকলিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় রাস্তার নৌকা চলাচল করতে দেখা যায়। তলিয়ে যাওয়া সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। অনেক গাড়ি পানিতে ডুবে বিকল হয়ে যায়। তাতে সড়কে যানজট লেগে যায়।
নগরীর অনেক এলাকায় বাসা বাড়িতে পানি উঠে যায়। গতকালও বহদ্দারহাটের বাসায় পানি উঠে যাওয়ায় পানিবন্দি ছিলেন খোদ সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এই কারণে নগর ভবনে তার পূর্ব নির্ধারিত সাতটি বৈঠক ও সভা বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাসা বাড়ির পাশাপাশি গুদাম আড়তে পানি ঢুকে পড়ে। তাতে মালামাল বিনষ্ট হয়। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৮ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। একই সময়ে নগরীর আমবাগান আবহাওয়া অফিস ২৬৫ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। আজ মঙ্গলবারও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হয় কাল থেকে বৃষ্টিপাত কমতে পারে।
এদিকে অতিবৃষ্টির মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে ফের পাহাড়ধসে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত মো. রায়হান (১২) স্থানীয় ভাসমান চা দোকানি দীন মোহাম্মদের ছেলে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তাদের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ নিয়ে তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা পাঁচজন হল।
তুমুল বৃষ্টিপাতের মধ্যে রোববার রাতে নগরীর পাঁচলাইশ থানার গ্রিনভ্যালি আবাসিক এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার জানান, গ্রিনভ্যালি আবাসিক মসজিদের পেছনে পাহাড়ের পাদদেশে দীন মোহাম্মদের একটি ভাসমান চা দোকান আছে। রাতে ওই দোকানে ঘুমিয়েছিল রায়হান। বৃষ্টির মধ্যে রাতের কোনো একসময় পাহাড়ধসে পড়ে দোকানের ওপর। ঘুমন্ত অবস্থায় মাটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারায় রায়হান। ভোরে দীন মোহাম্মদ দোকান খুলতে গিয়ে এ ঘটনা দেখেন। স্থানীয়রা মিলে মাটি সরিয়ে রায়হানের লাশ উদ্ধার করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মামুন নামে সাবেক এক যুবলীগ নেতা কয়েকবছর ধরে গ্রীণভ্যালী আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এর ফলে প্রায়ই বৃষ্টিতে কাটা পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ে। এর আগে, শুক্রবার রাতে নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকায় দু’টি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত ও ১১ জন আহত হন।
অপরদিকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে কাতালগঞ্জে খান হাউসের নিচতলায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, আবু তাহের (বাড়ির কেয়ারটেকার) ও মোহাম্মদ হোসেন (ড্রাইভার)। চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে কাতালগঞ্জের খান হাউসের নিচতলায় হাঁটু পরিমাণ পানি উঠে। সেখানকার সিঁড়ির পাশেই ছিল আইপিএসের সংযোগ। পানি উঠায় কেয়ারটেকার আবু তাহের আইপিএস বন্ধ করতে গেলে বিদ্যুৎতায়িত হয়ে আটকে যান। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ড্রাইভার হোসেনও বিদ্যুৎতায়িত হন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন