বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

এরদোগান ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন

তুরস্কে সংবিধান সংশোধনীর প্রস্তাব

দি গার্ডিয়ান | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তুর্কি পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনের বিতর্কিত প্রস্তাবে জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন ও ২০২৯ সাল পর্যন্ত তার ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি তাদের অনুমোদনের ইঙ্গিতের মাধ্যমে তুরস্ককে একটি প্রেসিডেন্ট-নেতৃত্বাধীন প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করার অভিযাত্রায় রজব তাইয়েব এরদোগাানকে বিরাট সমর্থন দেয়া হয়েছে।
বসন্তে সম্ভাব্য ঐতিহাসিক জাতীয় গণভোটের ভিত্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপে জাতীয়তাবাদী জোটের নেতা দেভলেত বাহচেলি মঙ্গলবার বলেন যে তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে আরো ক্ষমতা প্রদানের প্রস্তাবিত সংশোধনী অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। এরদোগানের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) আগামী মাসগুলোতে সংবিধান বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে। জাতীয়তাবাদীদের সমর্থনে তা এখন অনুমোদিত হবে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মিডিয়ার কাছে ফাঁস হওয়া সংশোধনীর বিশদ বিবরণ অনুসারে এ প্রস্তাবে এরদোগান ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।
কর্মকর্তারা আরো বলেেেছন, প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলোপ করা হবে। নির্বাহীনীতি কার্যকর করতে বৃহত্তর ক্ষমতার পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের দু’জন নির্বাহী থাকবে। তার দলের সাথে প্রেসিডেন্টের সম্পৃক্ততাও থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর তার রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক রাখেন না বলেই ধরে নেয়া হয়।
জাতীয়তাবাদী দলগুলো সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করতে তাদের ইচ্ছার ইঙ্গিত দেয়ার পর তুরস্কের সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সামনে চলে আসে। তবে বিরোধী দলগুলো তা প্রত্যাখানের শপথ ব্যক্ত করেছে। অভ্যন্তরীণ বিতর্কের জন্য গত সপ্তাহে প্রস্তাবিত বিলটির খসড়া জাতীয়তাবাদীদের কাছে পাঠানো হয়।
ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণের ভিত্তিতে সরকারি কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে দেশকে প্রেসিডেন্ট নেতৃত্বাধীন প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করার যুিক্ত প্রদর্শন করে বলে আসছেন যে, অতীতে জোট সরকারগুলোর ভেতর ভাঙন প্রবণতা তুরস্ককে পিছনে নিয়ে গেছে।
এদিকে এ পরিবর্তনে বিরোধীরা এ ব্যবস্থাকে এরদোগানের ক্ষমতা সংহত করার আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। যারা মনে করেন, তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃহত্তর কর্তৃত্ববাদী শাসন চালাচ্ছেন। তারা জুলাই মাসে অভ্যুত্থানের পর ব্যাপক সংখ্যায় সরকারি কর্মচারী বরখাস্ত ও মিডিয়ার ওপর দমনের কথা উল্লেখ করেন। সরকারের সমালোচকরা বলেন, এটা অভ্যুত্থান দমনের ক্ষেত্র ছাড়িয়ে গেছে এবং তা ক্ষমতাসীন দলের শক্তি সংহত করার একটি চেষ্টা।
এ সপ্তাহে আরেক দফা বরখাস্তের ঘটনা ঘটেছে। ফতেউল্লাহ গুলেনের সাঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সরকার ১৫ হাজার সরকারি কর্মচারী, পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে।
সরকার সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিরোধী মিডিয়ার ওপর দমন চালিয়েছে এবং সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে কুর্দি সংসদ সদস্যদের গ্রেফতার করেছে।
এ শুদ্ধি অভিযান তুরস্কের পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দু’টি বৃহত্তম গ্রুপের নেতারা এ জন্য তুরস্কের সাথে সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বৃহত্তম উপদল মধ্যপন্থী দল ইউরোপীয়ান পিপলস পার্টির প্রধান ম্যানফ্রেড ওয়েবার বলেন, তুরস্কের প্রতি আমাদের বার্তা অত্যন্ত পরিষ্কার: ইইউতে অন্তর্ভুক্তির আলোচনা বন্ধ করা উচিত। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল সোস্যালিস্ট গ্রুপের নেতা জিয়ান্নি পিটেলা তার কথার প্রতিধ্বনি করে বলেন, আমরা তুরস্কের ইইউতে অন্তভুর্ক্তির আলোচনা বন্ধ চাই।
তবে এরদোগান অনমনীয়। তার প্রাসাদে পুলিশের এক সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা জানি তাদের সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করা যায়নি। তারা এখনো আমাদের সামরিক, পুলিশ বাহিনী ও বিচার বিভাগে রয়েছে। আমরা আমাদের দেশটাকে তাদের হাতে ছেড়ে দেব না, আমরা তাদেরকে জাতিকে গ্রাস করতে দেব না। আমরা যা প্রয়োজন তাই করব।
২০১৯ সালে এরদোগানের প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ শেষ হলে তিনি দ্বিতীয়বার নির্বাচন করবেন। জয়ী হলে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন।    
খসড়া বিলটির একটি কপি রয়টারস দেখেছে। তাতে আছে যে গণভোটের অব্যবহিত পরই তিনি প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। তবে ২০১৯ সালে নির্বাচনী ঘড়ি পুনর্বিন্যস্ত করা হবে এবং তাকে আরো দু’দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনুমোদন দেয়া হবে।   

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন