কথিত গণকমিশনের শ্বেতপত্রে উল্লেখিত ১১৬ জন শীর্ষ আলেমের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ। আজ বৃহস্পতিবার বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ১১৬জন বিশিষ্ট আলেমের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু করা হলে দেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে মারাত্মকভাবে ব্যাঘ্যাত ঘটাবে। যাহা এই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান মেনে নিতে পারে না। দেশের সম্মানিত আলেম সমাজের বিরুদ্ধে আনিত মিথ্যা অভিযোগ সমূহ অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত গণকমিশনের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
পীর সাহেব চরমোনাই : ১১৬ আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে বানোয়াট শ্বেতপত্র প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন ‘এর আইনী কোন ভিত্তি নেই’ তাহলে দুদক কোন ভিত্তিতে আলেমদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে? এর জবাব কে দিবে? এমন প্রশ্ন করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।
আজ এক বিবৃতিতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, কথিত গণকমিশনের শ্বেতপত্র অনুসরণ করে যদি ওলামায়ে কেরাম ও মাদরাসার বিরুদ্ধে কোন ধরণের কল্পকাহিনীর আশ্রয় নেয়া হয়, তবে দেশের ওলামায়ে কেরাম ও দেশপ্রেমিক ঈমানদার জনতা নিরবে বসে থাকবে না।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে সর্বপ্রথম আলেম সমাজ, মাদরাসার শিক্ষক ছাত্র, সর্বোপরি ইসলামপন্থিরাই দাঁড়িয়েছে। এখনও তারা কাজ করছে। এমতাবস্থায় ‘এর আইনী কোন ভিত্তি নেই’ বক্তব্যের পর সরকারি প্রতিষ্ঠান দুদককে নতুন করে কে মাঠে নামাচ্ছে? তার জবাব সরকারকে দিতে হবে। তিনি বলেন, দেশের আইন আদালত থাকার পর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্বেতপত্র তৈরি করে যারা আইন লঙ্ঘন করেছে, তাদেরকে আইনের আওতায় না এনে উল্টো ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তদন্তে দুদকের তদন্ত গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ। এ চক্রান্ত থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে। অন্যথায় ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা বসে থাকবে না, তারা ময়দানে নেমে আসতে বাধ্য হবে।
ইসলামী ঐক্যজোট : দেশের আলেম সমাজের মান মর্যাদা রক্ষার্থে সরকারের দায়িত্বশীল মহলের প্রতিশ্রুতির পর ১১৬ জন আলেমের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুর রকিব ও মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুল করিম।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ১১৬জন আলেমের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান দেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে মারাত্মকভাবে ব্যাঘ্যাত ঘটাইবে। যাহা এই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান মেনে নিতে পারে না। দেশের সম্মানীত আলেম সমাজের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগসমূহ অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং দেশে সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত গণকমিশনের ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তারা বলেন, আলেম সমাজ নবী (সা.) এর ওয়ারেশ। আলেম সমাজের সাথে বেয়াদবি কোনো ভাবেই বরদশত করা হবে না।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি : দেশের খ্যাতিমান ১১৬ জন আলেমের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত শুরু করার সংবাদে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর আল্লামা সারওয়ার কামাল আজিজি ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার। এক বিবৃতিতে নেজামে ইসলাম নেতৃদ্বয় বলেন, গণকমিশনের এই ষড়যন্ত্রে দুদক পা দিলে দেশের মানুষের মাঝে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এদেশের আলেম ওলামার ইজ্জত রক্ষা করতে জনগণ ফুঁসে উঠলে এর দায় সরকার এড়াতে পারবে না।
নেতৃদ্বয় অবিলম্বে অনুসন্ধানের নামে এই তামাশা বন্ধ করে শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টের অপচেষ্টাকারী কথিত গণকমিশন নেতৃবৃন্দকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর আহবান জানান। নইলে সরকারকে এর চরম খেসারত দিতে হবে বলেও নেতৃদ্বয় হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। নেতৃদ্বয় আরো বলেন, দেশে মেগা দুর্নীতি চলছে। সুইস ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি ডলার পাচারের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মুষ্টিমেয় বাংলাদেশীর লক্ষ কোটি টাকা পাচারের ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে। এসব রাঘব বোয়াল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দুদককে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা উচিত।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস : ১১৬ আলেমের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান তদন্ত কমিটি গঠনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
একযুক্ত বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, গণকমিশন যে শ্বেতপত্র দিয়েছে তা নিয়ে দেশের আলেম ওলামা ও তৌহিদী জনতা প্রতিবাদ করেছে। শ্বেতপত্র যারা তৈরি করেছে তাদের আয়ের উৎস খুঁজে বের করতে হবে। তারা যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে তা কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। সুতরাং তাদের গ্রেফতার করে এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
নেতৃদ্বয় আরও বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন গণকমিশনের শ্বেতপত্রের আইনি কোনো ভিত্তি নেই। যে অভিযোগের কোনো প্রমাণ নেই সে অভিযোগ আমরা আমলে নেই না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে আলেম সমাজ ও দেশের মানুষ আশ্বস্ত হয়েছিলো। কিন্তু দুদক এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধান তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যা দেশের আলেম সমাজ ও সাধারণ জনগণকে ভাবিয়ে তুলছে। তারা দুদকের তদন্ত কমিটি বাতিল করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় দেশের আলেম ওলামা ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির দাবিতে জনগণ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। এবং কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
খেলাফত মজলিস : ১১৬ জন আলেম ও ইসলামী বক্তার লেনদেন অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি গঠনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। খেলাফত মজলিসের আমীর প্রিন্সিপাল মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড: আহমদ আবদুল কাদের এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, একটি ভূঁইফোড় সংগঠন দেশের ১১৬ জন সম্মানিত আলেম ও ইসলামী বক্তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগ আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তার আস্থার জায়গাটি নষ্ট করে ফেলেছে। দুদকের উচিত ছিল কারা দেশের সাম্প্রদায়িক স্থিতিশীলতা বিনষ্টে ধর্মপ্রাণ মানুষকে উস্কে দিচ্ছে তার কারণ খুঁজে বের করা। তারা বলেন, আর্থিক তদন্তের নামে আলেম উলামাদের বিরুদ্ধে এমন হয়রানির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সরকারকে এই বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন