রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বর্জ্য অব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বেশি শিকার বস্তিবাসী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বর্জ্য অব্যবস্থাপনার নেতিবাচক প্রভাব ও ক্ষতির সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন নগরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা বস্তিবাসী। বস্তির ৩৪ শতাংশ মানুষ নানা জটিল রোগে ভোগেন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার সরাসরি কোনো বাজেট দেয় না, মন্ত্রণালয়গুলো কিছু প্রকল্প দেয়। অন্যান্য দেশের মতো আমরা কার্বন নিঃসরণ করি না, কিন্তু মিথেন গ্যাস নিঃসরণ করে আমরা জলবায়ুর ক্ষতি করছি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হয় ঢাকা শহর থেকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। ডিএসকে কনসোর্টিয়াম এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওরের (কাপ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান-ইয়াত। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত প্রভাবের মূল প্রবন্ধ করেন ঢাকা কলিং প্রজেক্টের কারিগরি উপদেষ্টা সুমন আহসানুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বাজেটের বিষয়ে বক্তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে দেশের জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেয়া উচিত কিন্তু আমাদের দেশে দেয়া হচ্ছে ১ শতাংশ। আমরা চাই এই বরাদ্দ ২ শতাংশ করা হোক।
বক্তারা আরও বলেন, বর্জ্য অব্যবস্থাপনার ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। এক গবেষণায় দেখা যায়, বস্তির ২৭ শতাংশ মানুষ ময়লা পানির জন্য এবং ১৯ শতাংশ জলাবদ্ধতার কারণে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তাই টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওরের নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার রেবেকা সান ইয়াত বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন ৬ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। যার এক তৃতীয়াংশই সংগ্রহ করা হয় না। সাধারণত বস্তি এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় না। উল্টো তারা যেখানে বসবাস করে যেমন খাল, বিল, নদী ও ডোবার আশেপাশে অন্য জায়গা হতে ময়লা এনে স্তুপ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, নগরে যে বর্জ্য উৎপাদিত হয় তার ৭০ ভাগ পচনশীল। বর্জ্য পচে যাওয়ার পর যে পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হয় তার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে এ জনগোষ্ঠীর মানুষের ওপর।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. লেলিন চৌধুরী বলেন, সরকার ২০২১ সালে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালার প্রঞ্জাপন জারি হয়েছে কিন্তু এর বাস্তবায়ন কেউ করছে না।
ঢাকা কলিং প্রজেক্টের কারিগরি উপদেষ্টা সুমন ইসলাম বলেন, ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর তারা বস্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৮ ধরনের মানুষের সঙ্গে কথা বলে একটি গবেষণা করেছেন। সে গবেষণায় দেখা গেছে বর্জ্য অব্যস্থাপনার কারণে বস্তির মানুষ জন্মের সময় প্রতিবন্ধকতা ও প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও ক্রনিক ডিজঅর্ডারে ভোগেন। সর্দি, জ্বর, কাশি, জন্ডিস, ফ্লু, ইউরিন ইনফেকশন ও হেপাটাইটিস বি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তারা বস্তি এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহসহ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনাসহ বেশকিছু দাবি জানান।
অন্যান্য দাবিগুলো হলো, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে তাদের নিজ নিজ কর্ম পরিসরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য দুর্ভোগ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরসনে কাজ করতে হবে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে, প্রান্তিক নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও তার আশু সমাধানে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিলে যৌথ পরিকল্পনা ও মনিটরিং কার্যক্রম গ্রহণ, বিদ্যমান আইনগুলোর সমন্বয়, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের কৌশল গ্রহণ করা, বর্জ্যরে কারণে জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিরূপণ করে তা সমাধানে কাজ করা ও নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি, ঋতুকালীন প্যাড কিভাবে পরিবেশ সম্মতভাবে সেগুলো অপসারণ করা হবে সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন