রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

বাংলাদেশে ইসলাম-বিদ্বেষ : কিছু ভাবনা

মারজান আহমদ চৌধুরী ফুলতলী | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে ইসলাম-বিদ্বেষ বৃদ্ধির নতুন উদাহরণ ঘাদানিকের এক হাস্যকর তালিকা, যাতে কিছু আলিম-উলামার নামে অপবাদ আরোপ করা হয়েছে। যদিও ওসব তালিকা কেউ গুরুত্বের সাথে নেয় না, তবুও কথা হচ্ছে, কিছু অচল-অকর্মণ্য চেতনা ব্যবসায়ী আজ কীভাবে দেশের আলিম সমাজের ওপর অপবাদ আরোপ করছে? তাদের এ স্পর্ধার উৎস কোথায়?
সামনে এগুনোর পূর্বে মুহতারাম ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। সব পিছুটানের উর্ধ্বে উঠে শুধু আল্লাহর দ্বীনের জন্য তিনি ইসলাম-বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করে যাচ্ছেন, বারবার জিতেছেন এবং উম্মাহ’র মুখ উজ্জ্বল করেছেন। যদি লেখাটি তাঁর চোখে পড়ে, তবে তিনি যেন আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করেন।
যা বলতে চাচ্ছিলাম, আলিম-উলামার প্রতি চেতনা ব্যবসায়ীদের বিদ্বেষ চিরকালই ছিল। তবে ইদানিং তাদের যে নগ্ননৃত্য দেখা যাচ্ছে, তার পিছনে আলিমরাও কিছুটা দায়ী। আমরা এত বেশি বিভক্ত যে, আমাদের নাকের ডগায় পা রাখতেও শত্রু দুবার ভাবে না। ফিরকাগত অনৈক্য আমাদের শক্তি, সাহস, সময় ও যোগ্যতা খেয়ে দিয়েছে। অথচ ঐক্য মানে হুবহু ‘এক’ হওয়া নয়। নিজের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বাঁচিয়ে রেখেও দ্বীনের স্বার্থে এক টেবিলে বসা যায়। ওয়াযের মাঠে ‘আমরা এক’ বলে হুংকার না দিয়ে জরুরি ইস্যুকে কেন্দ্র করে মাঝেমধ্যে একসাথে বসা, এক হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া, এক হয়ে প্রতিবাদ করা, হাতে হাত রেখে দ্বীনের স্বার্থে কিছু আদায়ের জন্য মাঠে নামা– ঐক্য দেখানোর জন্য একটি স্থায়ী প্লাটফর্ম তো থাকতে হবে। আল্লাহওয়ালাদের ঐক্য বাতিলের বুক কীভাবে কাঁপিয়ে দেয়, তা দেখার জন্য বেশি দূর যেতে হবে না। গত কয়েক বছরে এক সিলেটেই এর বহু নজির দেখা গেছে।
দ্বিতীয়ত, নিজেদেরকে আমরা কীভাবে প্রস্তুত করছি, তাও দেখা প্রয়োজন। ইসলাম-বিদ্বেষীদের সাথে ডিবেটের কথাই ধরুন। বাংলাদেশে কজন আলিম আছেন, যারা যে কোনো জায়গায় বুক ফুলিয়ে ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন? চেতনাবাজদের কুযুক্তি শুনে কেবল গড়পড়তা জবাব-ই দেবেন না, বরং পাল্টা প্রশ্ন করে তাদের মুখ তেতো করে ফেলবেন? ইলমে দ্বীনে বুৎপত্তি আছে, ইতিহাস ভালো জানেন, আইন ও দর্শনে বেসিক ধারণা আছে, যুক্তি ও ভাষাজ্ঞানে সাবলীল, উম্মাহ’র জন্য অন্তর কাঁদে, চোখ ফেলে আসা বিজয়ী অতীতের পুনরাবৃত্তির স্বপ্ন বুনে– এমন আলিম কজন পাওয়া যাবে? সব ফিরকা মিলিয়ে ২০ জনও হবে না। অথচ বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বড় তাফসীরের রচয়িতারা তো বাংলাদেশেই বাস করেন! কদিন পরপর শুনি, একেকজন কয়েক লাখ খণ্ডের তাফসীর মার্কেটে আনছেন। যে জাতি আজ পর্যন্ত কুরআন শরীফ অর্থসহ পড়েনি, তাদের সামনে এ ধরণের বাকওয়াস দাবী করার কোনো মানে হয়?
তৃতীয়ত, নিজেদের সময় এবং শ্রমকে আমরা কোথায় খাটাচ্ছি, তাও খতিয়ে দেখা চাই। ইসলাম-বিদ্বেষীদের একটি প্রশ্নের জবাব দেয়ার মুরদ নেই, পাল্টা প্রশ্ন তো দুরের কথা। অথচ অহেতুক বিষয়ে ফিরকাগত বাহাস মুনাযেরার ডাক দিন, একপাল তার্কিক এসে হাজির হবে। সমস্ত পড়ালেখা, সময় ও শক্তি নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাসাইল নিয়ে ঝগড়া করেই শেষ! প্রত্যেক রামাদানের আগে তারাবীর রাকাত সংখ্যা নিয়ে কয়েকশ বাহাস হবেই হবে। এ এক অন্তহীন যাত্রা। ওসব বাহাসের ফলে আজ পর্যন্ত কজন হানাফি আহলে হাদীস হয়েছে এবং কজন আহলে হাদীস হানাফি হয়েছে, আল্লাহ মা’লুম। তারাবীহ একটি উদাহরণ মাত্র; এরকম আরও আছে।
বিশ্বব্যাপী উম্মাহ’র করুণ দশার মধ্যে যারা নিশ্চিন্তমনে ওসব বাহাস নিয়ে দিনরাত পার করে, তারা উম্মাতের প্রতিনিধিত্ব কী করবে? এরা কুরআনের সহজ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর করতে পারত, হাদীস, সীরাত ও সাহাবার জীবন নিয়ে আলোচনা করতে পারত, আমল-আখলাক-তাযকিয়ার দারস পারত, নাস্তিকদের যুক্তির বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষে দলিল-প্রমাণ পেশ করতে পারত, উম্মাতের দুরাবস্থা নিয়ে জনসাধারণকে শিক্ষিত করতে, এবং এর ইতিহাস, কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলাপ করতে পারত। কিন্তু এগুলোতে যে লাইক কম আসবে!
চতুর্থ কথা হচ্ছে ওয়াইযদের নিয়ে। ঘাদানিকের তালিকার সবাই কিন্তু গ্রহণযোগ্য আলিম নন। প্রতিটি মাসলাকে কিছু বক্তা আছে, যারা ইসলামের নামে এমন বিকৃত সব ন্যারেটিভ হাজির করে, যার দরুন ইসলাম-ই মানুষের কাছে হাসির পাত্রে পরিণত হয়। অরুচিকর হাসিঠাট্টা, ভাঁড়ামো এবং সর্বোপরি বানোয়াট কেচ্ছা দিয়ে এদের গুযারা চলে। অথচ মুত্তাকী, শিক্ষিত এবং বাগ্মিতায় পারদর্শী ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশে আছেন। আজ খুব, খুব এবং খুব বেশি প্রয়োজন এদেরকে ওয়াযের ময়দানে এগিয়ে আসা। ওয়ায নাসীহাত কোনো হেলাফেলার কাজ নয়। এটি সব নবী-রাসূলের সুন্নাহ। লাইলা-মজনুর প্রেমালাপ, ফিরকাগত ঝগড়া-হুংকার এবং অকাজের আষাঢ়ে গল্প অনেক হয়েছে। এবার আসুন ফিরি আল্লাহর কিতাবের দিকে, রাসূলুল্লাহ এর সুন্নাহ ও সীরাতের দিকে, আসলাফের জীবনের দিকে। আসুন, বাতিলের তোষণ পরিহার করি। আসুন, দ্বীন প্রচার করি। কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দ্বীনের পতাকা উড়ানোর স্বপ্ন দেখি। আমার যোগ্যতা নেই, তাকওয়া তো নেই-ই। তবুও এই কথাগুলো আপনাদের এক ভাইয়ের পরামর্শ হিসেবে ভেবে দেখবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Dr. Mohammad Ziaul Hoque ৩০ জুন, ২০২২, ৫:১০ এএম says : 0
ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ইসলাম বিদ্বেষীতার উদ্ভব হয়। রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি থেকেও ধর্ম ও ধার্মিকদের বিরুদ্দে কুৎসা ছড়ানো হয়। বাংলাদেশে আশংকা জনক ভাবে মোনাফেকী চর্চা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকরা ইসলামে আগ্রহী না হলে ধর্মদ্রোহী চিন্তা-চেতনা বেড়ে যাবে।
Total Reply(0)
Md.Shamsuzzaman ২৭ জুন, ২০২২, ৬:৫৫ এএম says : 0
Alhamdulillah , আমি আপনার সাথে একমত পোষণ করছি,হে আল্লাহ আপনি আমাদের সকল মুসলমান ভাইদের এক সাথে একমত হয়ে আল্লাহর হুকুম ও নবীর সুন্নত তরিকায় চলার তৌফিক দান করুন এবং সেই সাথে আমাদের দীনের দাওয়াত নিয়ে সারা বিশ্বে সফর করার তৌফিক দান করুন, আল্লাহুম্মা আমিন
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন