শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত

মুফতি মুহাম্মদ আনিসুর রহমান রিজভি | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

প্রাককথন : হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। স্বাধীন এবং সামর্থ্যবান নারী-পুরুষদের জন্য জীবনে একবার হজ ফরজ। হাজীগণ হলেন আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া কবুল করেন। তাদের গুনাহ ক্ষমা করেন। মানুষের হায়াত এবং মাউতের যেহেতু কোন গ্যারান্টি নেই, তাই কারো উপর হজ ফরজ হওয়ার সাথে সাথে তা আদায় করে ফেলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আজকের প্রবন্ধে হজের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি।
হজের পরিচয় : হজ আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো সংকল্প করা। আর পরিভাষায়, নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট কার্যাবলীর মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থান তথা বাইতুল্লাহ্ শরীফ যিয়ারত করা অথবা নির্দিষ্ট পদ্বতিতে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে বাইতুল্লাহ যাওয়ার সংকল্প করাকে হজ বলা হয়। (মুফতি আমীরুল ইহসান (রহ.), কাওয়ায়েদুল ফিকহ, পৃষ্ঠা-২৫)
জীবনে একবার হজ ফরজ : হজ স্বাধীন সামর্থ্যবান নারী-পুরুষদের জন্য জীবনে একবার ফরজ। সামর্থ্যবান বলতে আর্থিক ও দৈহিক সামর্থ্য উভয় বুঝায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, লোকসকল! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। হযরত আকরা ইবনে হাবিস (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি প্রত্যেক বছর ফরজ? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম তবে ফরজ হয়ে যেত। আর যদি প্রতি বছর হজ ফরজ হয়ে যেত তবে তা তোমরা সম্পাদন করতে সক্ষম হতে না। হজ জীবনে একবারই ফরজ। কেউ যদি একাধিক করে তবে তা হবে নফল হজ। (বুখারি: ৭২৮৮)
হজ দৈহিক ও আর্থিক ইবাদতের সমন্বয় : ইবাদত সাধারণত তিন ধরনের। ১. ইবাদতে বদনী তথা দৈহিক ইবাদত যেমন সালাত, রোজা। ২. ইবাদতে মালী তথা আর্থিক ইবাদত যেমন যাকাত। ৩. ইবাদতে মুশতারিকাহ তথা দৈহিক ও আর্থিক উভয়ের সমষ্টি যেমন হজ। হজ শরীরের সুস্থতা যেমন প্রয়োজন তেমনি আর্থিক স্বচ্ছলতারও প্রয়োজন। সুতরাং হজের মধ্যে দৈহিক ও আর্থিক উভয় প্রকারের ইবাদত বিদ্যমান। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম।
হজের গুরুত্ব ও ফজিলত : হজের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনায় অসংখ্য কুরআনের আয়াত ও হাদিস বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে হজের গুরুত্ব ও ফজিলতের ব্যাপারে হাদিসে পাকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক বর্ণনা রয়েছে। যেমন হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ করল এবং এ সময় অশ্লীল কাজ ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকল সে নবজাতক শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে। (বুখারি: ১৫২১, মুসলিম: ১৩৫০)। অপর হাদিসে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা হজ ও উমরাহ সাথে সাথে করো, কেননা এ দু’টি দারিদ্র্য ও গুনাহ এভাবে দূর করে, যেভাবে হাঁপর লোহা,স্বর্ণ ও রৌপ্যের ময়লা দূর করে। আর মকবুল হজের বিনিময় জান্নাত ব্যতিত কিছুই নয়। (ইবনে মাজাহ: ২৮৮৭)
হাজীগণ হলেন আল্লাহর মেহমান : হাজীগণ হলেন আল্লাহর মেহমান। মেহমানের চাহিদা পূরণ করা, মেহমানের দোয়া কবুল করা মেজবানের কর্তব্য। হাদিস শরীফে হাজীগণকে আল্লাহর প্রতিনিধি দল বলা হয়েছে এবং তাদের দোয়া কবুল ও মাগফিরাতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, হজ ও উমরাহকারীগণ হলেন আল্লাহর প্রতিনিধি দল। তারা যদি তাঁর কাছে প্রার্থনা করে তিনি তা কবুল করেন আর তারা যদি তাঁর কাছে ক্ষমা চান তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। (ইবনে মাজাহ: ২৮৯২)
হজের বিনিময় একমাত্র জান্নাত : হজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, হজ করলে আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন এবং হাজীগণ আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ লাভ করে। বান্দাগণ হজের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করতে পারে। আর তা হলো জান্নাত লাভের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। যেমন হাদিসে এসেছে, মাবরুর হজ তথা মকবুল হজের প্রতিদান হলো একমাত্র জান্নাত। (তারীখুল কবীর: ১/১৩৩)
হাজীদেরকে সালাম ও মুসাফাহার নির্দেশ : যেহেতু হজ দ্বারা হাজীগণ গুনাহ মুক্ত ও নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরেন তাই তাদের সাথে সাক্ষাৎ ও মুসাফাহা করে তাদের কাছে দোয়া চাইতে হাদিস শরীফে উৎসাহিত করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তুমি কোন হাজীর সাক্ষাত পাবে তাকে সালাম করবে, তার সাথে করমর্দন করবে এবং তাকে অনুরোধ করবে যেন তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তার ঘরে প্রবেশের পূর্বে। কেননা হাজীকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (ইবনে হিব্বান, আল-মাজরুহাইন: ২/২৭৪)
হজ সর্বোত্তম আমল : সাধারণত যে কাজে কষ্ট বেশি সে কাজের সাওয়াব ও ফজিলতও বেশি। তাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনার পর জিহাদ ও হজকে সর্বোত্তম আমল বলেছেন। যেমন হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। প্রশ্ন করা হলো-তারপর কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো-এরপর কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, মাবরুর হজ তথা মকবুল হজ। (বুখারি: ১৫১৯, মুসলিম: ৮৩)
হজ দ্বারা গুনাহ মাফ হয় : হজ দ্বারা বান্দার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। হজের মাধ্যমে হাজীগণ মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়া নবজাতক শিশুর ন্যায় মাসুম তথা নিষ্পাপ হয়ে যায়। যেমন হাদিস শরীফে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ওমর (রা) কে বললেন, হে ওমর! তুমি কি জাননা? নিশ্চয় ইসলাম মুসলমানদের পূর্বের সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হিজরত মুহাজিরদের পূর্বের সব গুনাহ মুছে দেয় এবং হজ হাজীদের পূর্বের সব গুনাহ ঝেড়ে ফেলে। (আত-তারগীব ওয়াত তারহীন:২/১৬৫)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন