হঠাৎ করে নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় চলমান কাজগুলোর মূল্য সমন্বয় এবং নতুন রেট সিডিউলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ঠিকাদার ঐক্য পরিষদ। পরিষদের নেতারা জানান, বর্তমানে প্রতিটন রডের বর্তমান দাম ৯০ হাজার টাকা থেকে ৯৫ হাজার টাকা হয়েছে যা ২০২১ সালের মার্চ মাসে ছিল ৫৫-৬০ হাজার টাকা। অর্থ্যাৎ শতকরা বৃদ্ধির হার ৬০ শতাংশের বেশি। চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমদানীকৃত সব নির্মাণ মালামালের ও যন্ত্রপাতির মূল্যও ক্রমান্বয়ে আশংকাজনক হারে বাড়ছে। নির্মাণ সামগ্রীর সীমাহীন অসহনীয় উর্দ্ধগতিতে ঠিকাদাররা মারাত্মকভাবে আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা। এমন অবস্থায় আমদানি নির্ভর নির্মাণ সামগ্রীর কাঁচামালের আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে হলেও স্থগিত করাসহ সাত দাবী জানিয়েছে ঠিকাদার ঐক্য পরিষদ। তাদের এসব দাবি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে দেয়া হয়। এ সময় তিনি দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় গতকাল এসব বিষয় তুলে ধরে বাংলাদেশ ঠিকাদার ঐক্য পরিষদ। আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’য় এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ঠিকাদার ঐক্য পরিষদের সভাপতি রফিক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ম. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বাসি) ডিরেক্টর হাসান মাহমুদ বাবু, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. বশির আহমেদ, সম্রাট এন্টারপ্রাইজের মোয়াজ্জেম হোসেনসহ দেশের নামকরা ঠিকাদারি কোম্পানির স্বত্বাধিকারী ও মনোনীত প্রতিনিধিরা।
সভায় ঠিকাদার ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, উন্নয়নবান্ধব বর্তমান সরকারের দুরদর্শিতা এবং কার্যকর পদক্ষেপসমূহের কারণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের কাতারে সমাসীন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বিগত এক বছরের অধিক সময় ধরে নির্মাণ প্রকল্পের মূল উপকরণসমূহ যেমন- লৌহ ও লৌহজাতীয় দ্রব্য, সিমেন্ট, পাথর, ইট, বিটুমিন, ডিজেল, অ্যালুমিনিয়াম, বিল্ডিং ফিনিশিং আইটেম ইত্যাদি দ্রব্যাদিসহ এ খাতের প্রায় সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিক ও লাগামহীনভাবে বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তারা জানায়, বর্তমানে প্রতিটন রডের শতকরা বৃদ্ধির হার ৬০ শতাংশের বেশি। পানি সরবরাহ, পয়নিষ্কাশন, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ইলেক্ট্রো ম্যাকানিক্যাল দ্রব্যের দামও ৪০-৯৪ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়াও এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক, সুপারভাইজার ও দক্ষ জনবলের মজুরিও শতকরা ৬০-৭০ শতাংশ বেড়েছে। জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেলের মূল্য ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা হওয়ার ফলে নির্মাণ সামগ্রি পরিবহন ও যন্ত্রপাতি চালন ব্যয় বেড়েছে। পাশাপাশি, চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমদানীকৃত সকল নির্মাণ মালামালের ও যন্ত্রপাতির মূল্যও ক্রমান্বয়ে আশংকাজনক হারে বেড়েছে। এ ছাড়া নির্মাণ প্রকল্পে ব্যবহৃত পানি ও বিদ্যুত বিল চুক্তিকৃত দামের সঙ্গে সন্নিবেশিত না থাকায় ঠিকাদারকে তা পরিশোধ করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পের অগ্রগতিতে অতি মন্থরতা দেখা দিয়েছে, বাস্তব অগ্রগতি খুবই হাতাশাব্যঞ্জক। কাজের স্বাভাবিক অগ্রগতি অর্জিত না হওয়ায় ঠিকাদাররা বিল পাচ্ছেন না। ফলে গৃহীত ব্যাংক ঋণ পরিশোকধ রাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এতে ব্যাংক হতে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্যতা অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে এবং ঠিকাদারদের আর্থিক সক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রীর সীমাহীন অসহনীয় উর্দ্ধগতিতে ঠিকাদাররা মারাত্মকভাবে আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন