ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলন করতে চরম ভোগান্তিতে পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। এই অফিসে অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, নম্বরপত্র ও সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে ভোগান্তিসহ নানা ধরণের সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, এটি কোন নতুন সমস্যা নয় কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অভিযোগ করেও তাদের টনক নড়েনি। নিয়ন্ত্রণের বাহিরে থাকায় দিনের পর দিন কর্মকর্তাদের টেবিলে ঘুরতে হয়। মাঝে মাঝে জমাকৃত আবেদনপত্রেরও হদিস মেলেনা। সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা যায়, ইবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিসে শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র তোলার জন্য জরুরী ভিত্তিতে আবেদনের ৫ দিন এবং জরুরী বাদে ১৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আবেদনের পর নির্ধারিত সময় পার হলেও পাওয়া যায়না কাঙ্খিত কাগজপত্র। এছাড়া আবেদনপত্র জমা দিয়ে গেলে কয়েকদিন পরেই আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে গোপনীয় শাখায় ঢুকে হাতে হাতে কাজ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। অভিযোগ রয়েছে, বাড়তি টাকার বিনিময়ে নিয়ম ভেঙে কাজ করে থাকেন কর্মচারীরা। নিয়মমাফিক আবেদনের কাজ করা হয় ধীরগতিতে। এছাড়া কাজ করতে গেলে কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ হাজার শিক্ষার্থীদের সনদ লেখার জন্য লিপিকুশলী রয়েছেন মাত্র একজন। স্বাভাবিকভাবে আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষার নম্বরপত্র বা সনদ দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা পেতে বিলম্ব হচ্ছে কয়েকমাস। এছাড়াও গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ঘুষ গ্রহণ করার অভিযোগে দফতরের কর্মচারী জিল্লুর রহমান, মনিরুল ইসলাম ও মুরাদ হোসেনকে শোকজ করা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, দুপুর একটা বাজার আগেই লাপাত্তা হয়ে যায় দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পৌনে তিনটার আগে তাদের আর দেখা মেলে না। নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে টাকা দিলে দ্রুত সেবা পাওয়া যায়। তাছাড়া অধিকাংশ সময় তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল-মাসুদ বলেন, সার্টিফিকেট তুলতে কর্মক্ষেত্র ঢাকা থেকে এসেছি কিন্তু চারদিনেও সার্টিফিকেট হাতে পাইনি। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এতো হয়রানি কেন থাকবে?
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্রী জানান, ট্রান্সক্রিপ্ট, ফল প্রকাশের তারিখ ও সনদসহ প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র উত্তোলনের জন্য গত ১ সপ্তাহ ধরে ঘুরছি। পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখানকার কর্মকর্তারা ঠিকমতো অফিস করে না।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন বিভাগ খোলা হচ্ছে। চাহিদার সাথে আলোকে সেকেলে সিস্টেমকে আপডেট করা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, পিয়ন ও কর্মচারী পদে নিয়োগ পেয়ে অনেকে পদোন্নতি পেয়ে কর্মকর্তা হয়ে গেছে। ফলে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মকর্তা থাকলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নেই। এছাড়াও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী থেকে পদোন্নতি পেলেও অনেকে সংশ্লিষ্ট কাজ করতে পারে না। তবে লোকবল সঙ্কট থাকলেও সুুষ্ঠু নিয়মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকটাই নিরসণ করা সম্ভব।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক একে আজাদ লাভলু বলেন, লোকবল ও পর্যাপ্ত জায়গার সঙ্কটের কারণে আমরা কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছি না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবগত করেছি।
এ বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে করে বাকিরাও সতর্ক হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন