শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাব দিয়েছে ইউনূস সেন্টার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২২, ১২:১১ এএম

নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দিয়েছে ইউনূস সেন্টার। গতকাল বুধবার সেন্টারের প্রশাসন প্রধান মো. জহীর উদ্দিনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। এই অভিযোগগুলির অনেকগুলিই কয়েক বছর আগেও করা হয়েছিল এবং আমরা তখন এগুলির জবাবও দিয়েছিলাম। যেহেতু একই অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী আবারও করছেন এবং এর সঙ্গে নতুন আরো অভিযোগ যুক্ত করেছেন, সাংবাদিকবৃন্দ এবং অন্যরাও এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য জানতে চাচ্ছেন, তাই এগুলির জবাব ও আমাদের বক্তব্য তুলে ধরছি।
৬০ বছর বয়সের পরেও এমডি থাকা অভিযোগ: এ বিষয়ে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক এর ঋণগ্রহীতারা। একটি আলাদা আইনের মাধ্যমে কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য সনিড়ববেশ করে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো, ফলে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এর সাথে এর পার্থক্য আছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয় এর পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে একটি চুক্তির অধীনে। এই নিয়োগের জন্য কোনো বয়সসীমা আইনে বা পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে উল্লেখ ছিলো না। প্রফেসর ইউনূস ৬০ বছর বয়সে পদার্পণ করলে তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পরিচালনা পরিষদকে জানান যে, যেহেতু তাঁর বয়স ৬০ বছর হয়েছে তাঁরা একজন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। পরিচালনা পরিষদ অন্য কোনোরূপ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকেই দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেন। পরিচালনা পরিষদ তাঁর বর্তমান নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবার পর তাঁকেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পুনঃনিয়োগ প্রদান করেন। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ৬১ বছর ৬ মাস। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিয়মিত পরিদর্শন প্রতিবেদনগুলির একটিতে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিলে গ্রামীণ ব্যাংক বিষয়টি ব্যাখ্যা করে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে আর কোন পর্যবেক্ষণ করা হয়নি।
জিও বিষয়ে বলতে হয়, বিদেশ ভ্রমণের জন্য তাঁকে কখনো জিও নিতে হয়নি কারণ তিনি সরকারী কর্মচারী ছিলেন না। এব্যাপারে সরকার কোনো সময় আপত্তি তোলেনি।
প্রফেসর ইউনূস তাঁর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরি রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শত্রুভাবাপনড়ব আচরণ করেছেন, যেমনটি প্রধানমন্ত্রী বার বার অভিযোগ করছেন - বিষয়টি মোটেই তা নয়। প্রফেসর ইউনূস যা নিয়ে উদ্বিগড়ব ছিলেন তা ছিল ব্যাংকটির আইনি মর্যাদা রক্ষা। কেননা তিনি সবসময় বিশ্বাস করতেন যে, যে আইনি কাঠামোয় তিনি বিগত সকল সরকারের সহায়তায় গ্রামীণ ব্যাংক গড়ে তুলেছিলেন তা দারিদ্র নিরসনে একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যাংকটিকে সফল করে তুলতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর চাকরি বিষয়ে বলতে হয়, প্রফেসর ইউনূস ৬০ বছর বয়সে পদার্পণের পর তিনি কয়েকবারই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিচালনা পরিষদ প্রতিবারই তাঁকে দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছিলেন। ৬০ বছর পার হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকও এ নিয়ে কোনো প্রশড়ব করেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের বিরদ্ধে মামলা এবং এমডি রাখতে হিলারি ক্লিনটন, শেরি ব্লেয়ারকে দিয়ে ফোন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা বন্ধে জড়িত: এ বিষয়ে প্রফেসর ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী যে প্রতিμিয়া সৃষ্টি হয় তা একটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কাহিনী। দূর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধে বিশ্ব ব্যাংকের সতর্কসংকেতের ঘটনা একই সময়ে ঘটেছিল। একই সময়ে চলমান দুটি আলোচনার বিষয়কে মিশিয়ে ফেলে একটা সম্পূর্ণ ভিনড়ব কাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে প্রফেসর ইউনূস চাপ প্রয়োগ করেছেন এ বিষয়টি প্রথমবার যখন উল্লেখ করা হয় তখনই প্রফেসর ইউনূস এ বিষয়ে একটি সুষ্পষ্ট বক্তব্য দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সকল মানুষের দীর্ঘদিনের একটি স্বপড়ব- এবং তিনিও এস্বপেড়ব বিশ্বাসী। এই স্বপড়ব বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির কোনো প্রশড়বই আসে না।
জবাবে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত-গ্রহণের কঠিন জগৎ দুই বন্ধুর খেয়াল-খুশী বা একজন পত্রিকা সম্পাদকের সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার উপর নির্ভর করে না। প্রফেসর ইউনূস যত “গুরুত্বপূর্ণ” ব্যক্তিই হোন না কেন, তাঁর যত “প্রভাবশালী বন্ধুই” থাকুক না কেন, একটি ৩০০ কোটি ডলারের প্রকল্প শুধু এ-কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে না যে, তিনি চাইছিলেন এটা বাতিল হয়ে যাক। প্রফেসর ইউনূস পদ্মা সেতু বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে কখনও কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ জানাননি। সুতরাং বিষয়টি নিতান্তই কল্পনা প্রসূত।
গরিবের কাছ থেকে প্রায় ৪৭ ভাগ ইন্টারেস্ট নিত: এর জবাবে বলা হয়, এটি মোটেই সঠিক নয়। ব্যবসা ঋণের উপর সুদ বরাবরই ২০%। গ্রামীণ ব্যাংক বরাবরই সরকার নির্ধারিত সুদের হার থেকে অনেক কম সুদে ঋণ দিয়ে গেছে। এছাড়া অন্যান্য সুদের হার আরো অনেক কম। গৃহঋণের উপর ৮%, সদস্যদের ছেলে মেয়ের শিক্ষা ঋণের উপর শিক্ষাকালে ০% এবং শিক্ষা সমাপান্তে ৫%, হত- দরিদ্রের জন্য ০%। গ্রামীণ ব্যাংকে ৪৭% সুদ কখনো ছিল না এখনো নেই।
গ্রামীণ ব্যাংকের যত টাকা সব কিন্তু সে নিজে খেয়ে গেছে। নইলে একজন ব্যাংকের এমডি এত টাকার মালিক হয় কিভাবে? দেশে-বিদেশে এত বিনিয়োগ করে কিভাবে? এর জবাবে ইউনূস সেন্টার বলেছে, প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো টাকা “খেয়ে” ফেলেননি। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তাঁর কর্মকালীন সময়ে তাঁর বেতনের বাইরে তিনি আর কোনো অর্থ ব্যাংক থেকে গ্রহণ করেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Islam Aminul ৩০ জুন, ২০২২, ৬:০৭ এএম says : 0
মেধাবী,সম্মানিত লোকের যারা অপমান করতে চায় তাদের জন্য মহান আল্লাহ্'ই যথেষ্ট। বাংলাদেশের গর্ব ডঃ ইউনূস লোভী 'নয় , ওয়ান ইলেভেনের সময় ইচ্ছে করলে দেশের ক্ষমতা'ভার নিতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেন'নি।
Total Reply(0)
Muhammad Moznu ৩০ জুন, ২০২২, ৬:০৭ এএম says : 0
আমরা বাঙালিরা গুণীর কদর করি না বলেই চাটুকার আর দালালদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে!
Total Reply(0)
Nizam Uddin ৩০ জুন, ২০২২, ৬:০৮ এএম says : 0
অনেক বড় গুনীজন ওনি নোবেল জয়ী। বার্সেলোনাকে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দেয়, করোনায় বাংলার গরীব সামান্য সহযোগিতা পায় না উলটো অভাবিদের ঘরের চাল খুলে নিয়ে যায় কিস্তির জন্য । হিলারি ক্লিন্টনকে চার মিলিয়ন দেয় আর এইদিকে সিলেটের মানুষ না খাই মরে। সত্যি কারের দেশপ্রেমিক গুনীজন আমরা গর্বিত
Total Reply(0)
Kamal Mia ৩০ জুন, ২০২২, ৬:০৮ এএম says : 0
অন্ধ ভক্তরা দেশে দেশে একজন ভালো শাসককেও অহংকারী ও স্বৈরাচারী করে তুলে। তাদের পায়ে তৈল দিয়ে ঐ স্বৈরাচারের হাতের চুঁইয়ে পড়া মধু চাটে। আর মৃত্যু হয় সুবিচারের। বিবেকের।।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন