শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আইএস মোকাবেলায় ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগিতা দেবে বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : আইএস মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্রিটিশ সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের জন্য জঙ্গিবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরুর পরামর্শ দেয়া হয়েছে সফররত ব্রিটিশ মন্ত্রীকে। বাংলাদেশ সফরকালে
যুক্তরাজ্যের অভিবাসনমন্ত্রী জেমস ব্রোকেনশায়ারকে এ সহযোগিতার কথা বলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা।
জেমস ব্রোকেনশায়ার দুই দিনের সফরে গত রোববার ঢাকায় এসে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দিনভর বৈঠক করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের আইএসে যোগদানের তথ্য জানিয়ে তাঁর সরকারের পক্ষে ওই সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ-তরুণীদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিয়েছে। দেশটির আশঙ্কা, আইএসে যোগ দেয়া ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে বাংলাদেশের কারো না কারো যোগাযোগ আছে। এই প্রবণতা ঠেকাতে দেশটি বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতাও চেয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের আইএসে যোগদান বা নিরুদ্দেশ হওয়া নিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের খবর এবং বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে ভ্রমণ সতর্কবার্তা দেয়ার ঘটনার মধ্যে ব্রিটিশ ওই মন্ত্রী ঢাকায় এসে বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বর্তমান সরকারের কঠোর অবস্থান তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেয় না। বাংলাদেশি বা বংশোদ্ভূত তরুণরা যদি যুক্তরাজ্য থেকে আইএসে যোগ দেয় তাহলে বুঝতে হবে সেখান থেকে যোগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি রোধ করতে যুক্তরাজ্যেরই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
তবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন, আইএসে যোগ দেয়া ব্যক্তিরা বাংলাদেশের কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে কি না বা ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের জঙ্গি তৎপরতায় বাংলাদেশের কারো যোগসাজশ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্রিটিশ সরকারকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। বৈঠকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদবিরোধী বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের জন্যও জঙ্গিবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরুর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রিটেনে বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক রয়েছেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী যোগসূত্র রয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে তারা জড়িয়ে গেলে উভয় দেশেই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে দুই দেশ মিলে কিভাবে এই হুমকি মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে ঢাকায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা শুরু করেছেন ব্রিটিশ এই মন্ত্রী।
জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে ব্রিটিশমন্ত্রীর আলাদা বৈঠকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের আইএসে যোগ দেয়ার বিষয়টি স্থান পায়। ব্রিটিশ অভিবাসনমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রসচিবকে জানান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের অনেকে আইএসে যোগ দিয়েছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের একই মতাদর্শের অনুসারী ব্যক্তিদের যোগাযোগ থাকতে পারে। তাই এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে তিনি বাংলাদেশকে অনুরোধ জানান। সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ কী করছে সেটিও তাদের আগ্রহের বিষয়। এই নিয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি সহযোগিতাও তিনি চান। বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসন রোধ করে এটি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
এদিকে, ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন জানিয়েছে, ব্রোকেনশায়ারের বাংলাদেশ সফরকালে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানসহ বিভিন্নজনের সাথে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি অবৈধ অভিবাসন, সংগঠিত অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ এবং এভিয়েশন নিরাপত্তা নিয়ে দুদেশের সহযোগিতার বিষয়ে আলোকপাত করেন। এছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে ব্রিটিশ মন্ত্রী অবৈধ অভিবাসন রোধে গতবছর ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সরবরাহকৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করেন।
জেমস ব্রোকেনশায়ার বলেছেন, বাংলাদেশ সফর করতে পেরে আমি আনন্দিত। এটা বাংলাদেশে আমার প্রথম সফর। নতুন নির্বাচিত সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের কোনো মন্ত্রীরও এটা প্রথম সফর।
ব্রিটিশমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের অংশীদার ও বন্ধু। জনগণের পর্যায়ে জোরালো সম্পর্কের কারণে আমি বিশেষভাবে গর্বিত। যুক্তরাজ্যে পাঁচ লাখ বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত থাকার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্কসহ আমাদের মধ্যে স্পন্দনশীল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে। এই সফরে আমরা বৈশ্বিক সন্ত্রাসের হুমকি এবং অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে যৌথ প্রচেষ্টা চালাতে পারব।
উল্লেখ্য, জেমস ব্রোকেনশায়ার অভিবাসন নীতি ও আইন, ইইউ, পাসপোর্ট দফতর, আশ্রয়প্রার্থী, বর্ডার ফোর্স, অভিবাসন বিধির প্রয়োগ, ব্যক্তিগত মামলার সিদ্ধান্ত, যুক্তরাজ্যের ভিসা, অভিবাসন ও প্রত্যর্পণ এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তার বিষয়াদি দোখাশোনা করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন