হজ সর্বোত্তম আমল : সাধারণত যে কাজে কষ্ট বেশি সে কাজের সাওয়াব ও ফজিলতও বেশি। তাই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনার পর জিহাদ ও হজকে সর্বোত্তম আমল বলেছেন। যেমন হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। প্রশ্ন করা হলো-তারপর কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো-এরপর কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, মাবরুর হজ তথা মকবুল হজ। (বুখারি: ১৫১৯, মুসলিম: ৮৩)
হজ দ্বারা গুনাহ মাফ হয় : হজ দ্বারা বান্দার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। হজের মাধ্যমে হাজীগণ মাতৃগর্ভ হতে ভূমিষ্ট হওয়া নবজাতক শিশুর ন্যায় মাসুম তথা নিষ্পাপ হয়ে যায়। যেমন হাদিস শরীফে এসেছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ওমর (রা) কে বললেন, হে ওমর! তুমি কি জাননা? নিশ্চয় ইসলাম মুসলমানদের পূর্বের সব গুনাহ মিটিয়ে দেয়, হিজরত মুহাজিরদের পূর্বের সব গুনাহ মুছে দেয় এবং হজ হাজীদের পূর্বের সব গুনাহ ঝেড়ে ফেলে। (আত-তারগীব ওয়াত তারহীন:২/১৬৫)
হাজীদের সুপারিশ করার সুযোগ : হাজীদের তাওয়াফের মাধ্যমে আল্লাহ পাক তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হাজীগণ তাওয়াফ করার সময় যাদের জন্য দোয়া করবেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে একজন হাজী চারশত পরিবারের জন্য সুপারিশ করতে পারবেন অথবা একজন হাজীর সুপারিশ চারশত পরিবারের হকে কবুল হবে। (মাযমাউদ যাওয়ায়েদ: ৩/২১৪, বাযযার: ৩১৯২)
তাড়াতাড়ি হজ করার তাগিদ : যাদের উপর হজ ফরজ হয়েছে যত দ্রুত সম্ভব হজ্ব আদায় করা উত্তম। কারণ, হজ বছরে নির্দিষ্ট সময়ে একবার আদায় করতে হয়। যেখানে মানুষের হায়াত-মাউতের এক সেকেন্ডেরও বিশ্বাস নেই, সেখানে দীর্ঘ এক বছর অনেক লম্বা সময়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি হজ করার ইচ্ছা করেছে সে যেন তাড়াতাড়ি হজ করে নেয়। (সুনানু আবি দাউদ: ১৭৩২)
বদলী হজ : হজ দৈহিক ও আর্থিক উভয়ের সমষ্টি ইবাদত। এতে বিনা কারণে প্রতিনিধিত্ব জায়েয নেই, তবে ওমর থাকলে প্রতিনিধি হিসেবে অন্য কেউ আদায় করে দিলে হয়ে যাবে। আর এই ওযরটি স্থায়ী হতে হবে। যেমন যার উপর হজ ফরজ হয়েছে সে যদি স্থায়ী রোগে আক্রান্ত হয় কিংবা মৃত্যুবরণ করে এমতাবস্থায় তার পক্ষে অন্য কেউ হজ্ব আদায় করতে পারবে। এ বিষয়ে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খাসআম গোত্রের এক মহিলা জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূল্লাল্লাহ! আমার বৃদ্ধ পিতার উপর হজ ফরজ হয়েছে। বাহনের উপর বসার ক্ষমতা নেই। আমি কি তার পক্ষে হজ আদায় করতে পারবো? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ,পারবে। আর এই ঘটনাটি ঘটেছে বিদায় হজের সময়। (বুখারি: ১৫১৩, মুসলিম: ১৩৩৪)। অপর হাদিসে এসেছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, আমার বোন হজ করার মানত করেছিল। কিন্তু হজ করার পূর্বে ইন্তেকাল করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তার উপর যদি ঋণ থাকতো তাহলে তুমি কি তা আদায় করতে? সে বলল, হ্যাঁ আদায় করতাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে আল্লাহর ঋণ আদায় করো। কারণ তাঁর হক আদায় করা অধিক প্রয়োজন। (বুখারি ও মুসলিম, সূত্র: মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-২২১, হাদিস নং-২৩৮৮)
হজ পরিত্যাগ করার পরিণাম : হজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। বিনা কারণে পরিত্যাগ করা মারাত্মক গুনাহ। হজ পরিত্যাগকারী সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এই ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। যেমন হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি বাইতুল্লায় পৌঁছার পথ খরচের মালিক হয়েছে, অথচ হজ করল না, সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করুক অথবা নাসারা হয়ে এতে কিছু আসে যায় না। (তিরমিজি: ৮১২, আদ-দুয়াফাউল কবীর:৪/৩৪৮)। হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, যে ব্যক্তি সুস্থ ও ধনী হওয়া সত্বেও হজ না করে মৃত্যুবরণ করবে কেয়ামত দিবসে তার কপালে ‘কাফির’ শব্দ লেখা থাকবে। (জালাল উদ্দিন সুয়ূতী (রহ.), দুররে মনসুর)
হজ বিলম্বে সামর্থ্যবানদের নানা অজুহাত : অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তিকে দেখা যায় তারা বিভিন্ন অজুহাতে হজ বিলম্ব করে কিংবা হজ থেকে বিরত থাকে। কেউ বলে আগে একটা বাড়ি করি তারপর হজ করবো। কেউ বলে আগে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়ে পরে হজ করবো আবার কেউ বলে এত তাড়াতাড়ি হজ করলে করলে রাখতে পারবো না বয়স হোক তারপর হজ করবো ইত্যাদি। কিন্তু এসব অজুহাত শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। বরং ধন,স্বাস্থ্য হায়াত চিরস্থায়ী নয় বিধায় যথাসম্ভব হজ তাড়াতাড়ি আদায় করা উত্তম। (মাযমাউদ যাওয়ায়েদ, তাবরানী কবীর, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব)
আমরা কেন হজ করবো : হাজীগণ হলেন মহান আল্লাহর মেহমান। হাজীদের দোয়া কবুল করা হয়। এছাড়াও হজ আল্লাহ পাকের নির্দেশ। হজ করলে বান্দার গুনাহ মাফ হয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যায়। জান্নাতের মালিক হওয়া যায়। সর্বোপরি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় বিধায় হজ ফরজ হওয়া মাত্রই আমরা বিলম্ব না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হজ আদায় করে নেব। হজের ব্যাপারে বিলম্ব ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ বিলম্বে হজ করবে, কিন্তু হজ না করে মারা গেলে গুনাহগার হিসেবে গন্য হবে।
সমাপনী : পরিশেষে বলতে পারি, হজ মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশ এবং মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোনভাবেই এই মহান ইবাদতকে পরিত্যাগ করা উচিত নয়। তাই, যাদের উপর হজ ফরজ হয়েছে তারা যেন দ্রুত হজ আদায় করে নেয়। বিভিন্ন অজুহাতে হজকে বিলম্ব করা মোটেও উচিত নয়। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণে হজ আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা মুমিন-মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আল্লাহ পাক আমাদেরকে জীবনে একবার হলেও হজ আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন