তৃণমূলের কর্মীরাই আওয়ামী লীগকে ধরে রেখেছে বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শত নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সংগঠন কিন্তু সব সময় শক্তিশালী। আওয়ামী লীগ বিশেষ করে আমাদের মাঠকর্মীরা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। তারা কিন্তু পার্টিটাকে ধরে রাখছে। এই কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে।
গতকাল একদিনের টুঙ্গিপাড়া সফরকালে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনি এলাকা কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়েকালে এসব কথা বলেন।
তৃণমূলের কর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা-মার দোয়া আছে, উপরে আল্লাহ আছেন। আর আমার সব থেকে বড় শক্তি কিন্তু আপনারাই। প্রত্যেকটি কাজ আমরা পরিকল্পিতভাবে করে যাচ্ছি বলে আজকে বাংলাদেশের মানুষ ভালো আছে।
সফলভাবে করোনা মোকাবিলা প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, এই করোনার সময় উন্নত দেশ, যাদের অনেক টাকা— কই তারা তো কেউ বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয়নি। কিন্তু আমরা দিতে পেরেছি। সবাই মিলে একযোগে কাজ করতে পেরেছি বলে আজকে করোনা মোকাবিলা, বন্যা মোকাবিলাসহ যেকোনও অবস্থা আমরা মোকাবিলা করতে পারি। এই দেশটা তো আমি চিনি। দেশটা জানি। জাতির পিতা কিন্তু নিজের জন্য দল করেননি। নিজের ক্ষমতার লোভে বা অর্থ সম্পদের দল করেননি। তিনি দল করেছেন দেশের সাধারণ মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, কাজেই আমার যেটুকু আছে তা যদি একটা মানুষকে দিতে পারি। আর সে যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এটাই আমার স্বার্থকতা। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে চলতে হবে। পচাঁত্তরের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা তো ক্ষমতায় এসেছে খাওয়া পার্টি হিসেবে, দেওয়ার জন্য নয়। আর আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকে মানুষকে দিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জন্য করে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য। মানুষের শক্তিটাই আমার কাছে বড় শক্তি। অন্য কোনও শক্তি নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বার বার হত্যার চেষ্টা করেছে, মারার চেষ্টা করেছে; পারেনি। বেঁচে গেছি। আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ হায়াত দেন তাকে দিয়ে কিছু কাজ করাতে। আমি হয়তো সেই হায়াত পেয়েছি বলেই কাজ করতে পারছি। আজকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে চলে আসছি। বাবা-মা সব হারিয়ে এই মানুষের কাছেই তো আসছি। মানুষের ভালোবাসা-দোয়া না থাকলে এতদূর আসতে পারতাম না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই, এই দেশের কোনও মানুষ গরিব থাকবে না। কোনও মানুষ না খেয়ে থাকবে না। পদ্মা সেতু হয়ে গেছে। আমাদের দক্ষিণাঞ্চলটা অর্থনৈতিকভাবে যাতে উন্নত হয়। দেশের জন্য যতটুকু কাজ করা দরকার, ততটুকু করে যাবো; এটা হচ্ছে আমার অঙ্গীকার।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ জুন উদ্বোধনের পর গতকাল প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তার পৈতৃকনিবাস পরিদর্শন করেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে প্রার্থনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে ফাতেহা পাঠ করেন ও জাতির পিতা এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাযজ্ঞের অন্যান্য শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাতে যোগ দেন।
শেখ হাসিনা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু এবং দেশের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেও দোয়া করা হয়। এরআগে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর, তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী এরআগে তিন ঘণ্টারও বেশি সময়ে সড়ক পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান। টুঙ্গিপাড়া যাওয়ার পথে শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পদ্মাসেতুর উপরে কিছুক্ষণ সময় কাটান। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ এসময় মা শেখ হাসিনা ও ভাই সজীব ওয়াজেদকে নিয়ে সেলফি তোলেন। সজীব ওয়াজেদ জয় সে ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। পরে জাজিরা পয়েন্টের সার্ভিস এলাকায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন ।
এদিকে সড়ক পথে টুঙ্গিপাড়ায় আসার পথে পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন জনসাধারণ। সকাল থেকেই পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চর, সূর্যনগরসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের দুইপাশে শুভেচ্ছা জানাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায় হাজারো মানুষ। সড়ক পথে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ পদ্মা সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়ের দুইপাশ জুড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। স্লোগানে মুখর করে তোলেন মহাসড়ক। এদিকে মহাসড়কজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তাও রয়েছে চোখে পড়ার মতো।
কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারী জানান, স্বপ্নের পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম সড়ক পথে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছেন। আমরা জেনেছি, তিনি সপরিবারের নিজ বাড়িতে যাচ্ছেন। শিবচরবাসী তাকে শুভেচ্ছা জানাতে সকাল থেকেই মহাসড়কে অবস্থান করে। অসংখ্য মানুষ প্রধানমন্ত্রীর এই সড়কযাত্রা দেখতে এ্যাপ্রোচ সড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরবর্তীতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে সড়কপথে পদ্মা সেতু হয়ে মাত্র দুই ঘণ্টায় গণভবনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গণভবনে পৌঁছান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন