সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ড্যাপ অনুমোদন যে কোন দিন

রাজউকের সার-সংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রীর সই

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

আধুনিক ও বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে ২০ বছর মেয়াদি ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান তথা ড্যাপের সার-সংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব এবং বেজ ফার নির্ধারণ করা, রাস্তা প্রশস্তকরণ এবং সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি বিধান যুক্ত করে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী ও ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ চূড়ান্ত। গত ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ জুন অনুমোদন দিয়েছেন। এখন কাজ শেষ হয়েছে। আজ বৃস্পতিবার না হলে এ মাসেই গেজেট প্রকাশ করা হবে। কোনো পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ড্যাপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কারো প্রতি যদি অবিচার করা হয়ে থাকে তাহলে তা অবশ্যই বিবেচনায় নেয়া হবে। গত বছর মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে রিভিউ সংক্রান্ত গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ড্যাপ চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রিভিউ সংক্রান্ত গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার আয়োজন করা হয়েছে এবং উপস্থিত সকলের সিদ্ধান্তক্রমে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. বরকাতুর রহমানের গত ২৩ জুনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে অনুমোদনের তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত রূপরেখা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) (২০১৬ -২০৩৫) সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) ২০১৬ -২০৩৫ গেজেট আকারে প্রকাশের নিমিত্তে গেজেটের খসড়া অতিসত্বর এ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এখন এ বিষয়ে শিগগিরই গেজেট প্রকাশ করা হবে। সব এলাকায় তো একই ঘনত্বে মানুষ বসবাস করবে না। কারণ, সব এলাকার বৈশিষ্ট্য এক নয়। যদি ধানমন্ডি এলাকার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে রায়েরবাজারের বৈশিষ্ট্য মেলান, তাহলে তো হবে না। ধানমন্ডিতে সুপ্রশস্ত রাস্তা আছে, কিছু পাবলিক স্পেসও আছে। যদিও জনসংখ্যার তুলনায় এগুলোও কম। মানে ধানমন্ডিতেই কম, আর রায়েরবাজারের কথা তো চিন্তাই করা যায় না। একটি গাড়ি ঢুকলে আরেকটি বের হতে পারে না। এটি শহরের পরিবেশ হতে পারে না।’ এরআগে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর প্রকল্পটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর ভূমি ব্যবহারে ২০ বছর মেয়াদি ড্যাপ প্রণয়ন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(রাজউক)।
ড্যাপ প্রকল্প সংশ্লিরা জানান, বর্তমানে ড্যাপে শ্রেণির পরিবর্তনের আবেদন বিবেচনা করার সুযোগ নেই। মন্ত্রিসভা কমিটি থেকে ড্যাপ রিভিউয়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে সেই বিষয়ে সবাইকে অবহিত করা হবে।
প্রস্তবিত ড্যাপে রাজউকের আওতায় মোট এক হাজার ৫৮২ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে ৪৬৮টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকবে ১৯৮ কিলোমিটার জলাধার। ঢাকার চারপাশের ৫৬৬ কিলোমিটার নদীপথ সচল, এক হাজার ২৩৩ কিলোমিটার সড়ককে হাঁটার উপযোগী করে তোলা, শহরের বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে স্কুলভিত্তিক উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকায় সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সড়ক, জল ও রেলপথকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সমন্বিত যোগাযোগ মাধ্যম গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে।
নগর অঞ্চল পরিকল্পনা (১৯৯৫-২০০৫) প্রণয়ন করা হয়। ২০০৪ সালে ড্যাপের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। ২০১০ সালের ২২ জুন এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ড্যাপে ঢাকার মোট আয়তন ধরা হয় এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার বা ৫৯০ বর্গমাইল। রাজধানীতে এখন ভবন নির্মাণ করা হয় ২০১০ সালের ড্যাপ ও ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে। ২০০৮ সালে করা এই বিধিমালায় জমির আয়তন অনুযায়ী কত তলা বা উচ্চতার ভবন নির্মাণ করা যাবে, তা উল্লেখ আছে। এই বিধিমালার কারণে বেশি উচ্চতার আবাসিক ভবন নির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়। ১৯৯৬ সালের বিধিমালায় ধানমন্ডিতে যে জমিতে ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা যেত, ২০০৮ সালের বিধিমালার ফলে সেই জমিতে ১৪ তলা ভবন হচ্ছে। অবশ্য নতুন খসড়া ড্যাপে প্রস্তাব করা হয়েছে, গণপরিসর বা সাধারণ মানুষের জন্য জায়গা না ছাড়লে ব্যক্তি পর্যায়ে ধানমন্ডিতে ৮ তলার ওপরে আর ভবন নির্মাণ করা যাবে না। নতুন ড্যাপে আবাসিক ভবনের উচ্চতাসংক্রান্ত প্রস্তাবটি শুধু ধানমন্ডি নয়, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ঢাকা শহরের সব এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে। আর রাজউকের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকায় আবাসিক ভবন হবে সর্বোচ্চ ৬ তলার। আবার ২০০৮ সালের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, ২০ ফুট সড়ক সংলগ্ন ৫ কাঠা জমিতে সর্বোচ্চ ৮ তলাবিশিষ্ট ভবনে মোট সাড়ে ১৩ হাজার বর্গফুট নির্মাণের অনুমতি মিলত। আর প্রস্তাবিত বিধিমালা বাস্তবায়িত হলে সমপরিমাণ জায়গায় নির্মাণ করা যাবে সর্বোচ্চ ৫ তলাবিশিষ্ট মোট ৯ হাজার বর্গফুটের ভবন। তবে ২০ ফুটের চেয়ে কম প্রশস্তের সড়কের ক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা ৩-৪ তলার বেশি হবে না। জানা যায়, প্রস্তাবিত ড্যাপ নিয়ে রাজউকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে ১৫-২০ বার বৈঠক করেছেন রিহ্যাবের নেতারা। তবে বিষয়টির সুরাহা হয়নি। ২০১০ সালের জুনে ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ হলেও তাতে নানা অসঙ্গতি দেখা দেয়। পরে ড্যাপ পর্যালোচনার জন্য সাত মন্ত্রীকে নিয়ে একটি ‘মন্ত্রিসভা কমিটি’ গঠন করা হয়। এ কমিটিকে ড্যাপ রিভিউ কমিটি বলা হয়। পরে আবারও ড্যাপ সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আব্দুস সামাদ ১৯ জুলাই, ২০২২, ১২:২৩ এএম says : 0
নতুন নীতিমালা গরীব মারার নীতিমালা।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন