পদ্মা সেতু চালুর পর আনন্দ আর স্বস্তির ঈদযাত্রা হওয়ার কথা থাকলেও স্বস্তি মিলছে না। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দ্রুত গতিতে যানবাহন চললেও পদ্মা সেতুমুখি যানবাহন ঢাকার যাত্রাবাড়ি, ধোলাইপাড় ও বাবুবাজার এলাকা পাড় হতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম মুখি যানবাহন যাত্রাবাড়ি সায়েদাবাদের যানজট পেরুতেই ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে যাচ্ছে। গাবতলী এলাকায় মানিকগঞ্জ ও উত্তরাঞ্চলগামী বাসকে যানজট ঠেলে যেতে হচ্ছে। মহাখালি থেকে টাঙ্গাইল হয়ে রংপুর-দিনাজপুর রুটের যানবহানকে চন্দ্রা অতিক্রম করতে হচ্ছে ধীর গতিতে। আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে ময়মনসিংহগামী গণপরিবহণকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়াও ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পার্শ্বে ধীরগতিতে চলছে যাবনাহন। গতকাল এ রুটে ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত যানবাহনের সারি দেখা গেছে। ঢাকা-সিলেট রুটে ৬ কিলোমিটার যানজটের খবর পাওয়া গেছে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মহাসড়কে বাড়ছে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদের তিনদিন পূর্বে বাড়ি ফিরতে যাওয়া ঘরমুখো মানুষ।
পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানী ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় চলাচল করা কোনো বাসই নির্ধারিত সময়ে যাতায়াত করতে পারছে না। যে সব যানবাহন পদ্মা সেতুর দিকে যাচ্ছে সেগুলোর ঢাকার যানজট ঠেলে থেকে বের হতে এক থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগছে। আবার যে সব যানবাহন পদ্মা সেতু পেরিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে ঢাকায় ফিরছে যাত্রী নেয়ার জন্য সেসব বাস কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-মানিকগঞ্জ প্রতিটি সড়কের ঢাকা প্রবেশ মুখে যানজট। ফলে যানবাহন রাজধানীতে ঢুকতে এবং বের হতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে। রেলে সিডিউল বিপর্যয় ঘটলেও কোনো কোনো ট্রেন ঠিক সময়ে ছাড়ছে। তবে ট্রেনের ছাদ ও ইঞ্জিনে তিল ধরণের ঠাঁই নেই।
পরিবহন সংকটে যাত্রীরা : গাবতলী, মহাখালি, সায়েদাবাদ, কল্যানপুর এলাকায় দূর পাল্লার বাসগুলোর কাউন্টারে দেখা গেছে মানুষের টিকেটের জন্য হাহাকার। যানবাহন নেই অথচ হাজার হাজার যাত্রী গ্রামে ফেরার জন্য হাজির হয়েছেন। কেউ দ্বিগুন, তিনগুন বেশি টাকা দিয়ে দালালদের কাছ থেকে টিকেট কিনে গ্রামে যাচ্ছেন। যাদের ভাগ্যে সেটা জোটেনি তারা ট্রাকে করে যাত্রা করছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় অনেক মানুষ ঈদের ছুটিতে গ্রামে ফিলতে ঘর থেকে বের হয়ে টিকেট না ফেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আশায় আছেন যদি টিকেট পাওয়া যায়। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়েই পথে নেমেছেন গ্রামে ফিরতে। শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত গাজীপুর জেলার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি হয়ে গেছে। একযোগে ছুটি হওয়ায় মহাসড়কে উত্তরবঙ্গগামী ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। এদিকে সড়কে বাস কম থাকায় যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে পরিবহনগুলোর চালক ও সহকারীদের।
গাজীপুর কালিয়াকৈর উপজেলার ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় গতকাল ঘরমুখো কয়েক হাজার মানুষকে বাসের জন্য সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে কেউ কেউ গাড়ি পেলেও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছে পরিবহনগুলো। যেসব গাড়িতে যাত্রী উঠাচ্ছে সেগুলোতেও রয়েছে যথেষ্ট ঝুঁকি।
স্বাভাবিক দিনে যেখানে ভাড়া ৪০০ টাকা, সেই ভাড়া এখন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা নিচ্ছে পরিবহনগুলো। এছাড়াও বাস না পেয়ে পিকআপ ও ব্যক্তিগত গাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন যাত্রীরা। মহাসড়কে আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে অনেক স্থানে মোটরসাইকেল চলতে দেখা গেছে।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘শিল্পকারখানা একসঙ্গে ছুটি হওয়ায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সড়কে মানুষ আর যাত্রীবাহী পরিবহনের চাপ থাকবে। যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া রোধ করতে সাদা পোশাকের পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
সাভার থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও একই চিত্র দেখা মেলে। তীব্র যানজটে প্রচণ্ড গরমে বাস যাত্রীরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে। সেই সাথে মহাসড়কে ধুলা বালিতেও অতিষ্ট হয়ে পড়েছে মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা। অনেকেই যানজট এড়াতে পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
গতকাল ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। সকাল থেকে সাভার-আশুলিয়ার সড়কগুলোতে তেমন যানজট না থাকলেও দুপুর হতেই বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট শুরু হয়। বাসযাত্রী ও চালকরা জানায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের গেন্ডা থেকে সাভার বাসষ্ট্যান্ড, নয়ারহাট, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। বাইপাইল ত্রি-মোড়ের সিগন্যালের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়তি গাড়ির চাপের কারণে অল্প সময়ের ভেতর গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। বাইপাইল এলাকার উত্তরবঙ্গগামী টিকিট কাউন্টারগুলোতে এক একটি দূরপাল্লার পরিবহন এলোপাথারীভাবে থামিয়ে যাত্রী তোলার কারণে অন্য যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করছে ফলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জামগড়া এলাকায় সড়কে বৃষ্টির পানি জমে সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় গাড়ি ধীরগতিতে চলার কারণে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শাখা সড়ক সিএন্ডবি-আশুলিয়া সড়কের কলমা, চারাবাগ ও বিশমাইল জিরাবো সড়কের কাঠগড়া এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। অসহনীয় এই যানজটে দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
পোশাক কারখানা ঈদের ছুটির কারণে শ্রমিকদের রিজার্ভে ভাড়া করা গাড়িগুলো ইতোমধ্যে সড়কে নেমে যাওয়ায় জিরাবো এলাকায়ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম ইনকিলাবকে বলেন, যানজট নিরসনে একাধিক পুলিশের টিম কাজ করে যাচ্ছে। তবে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং ও যাত্রী উঠা-নামানার কারণে যানজট দেখা দেয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে মদনপুর পর্যন্ত গতকাল থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে ভুলতা পর্যন্ত যানবাহনের সংখ্যাধিক্য দেখা দেয়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। তবে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন শিশু এবং বৃদ্ধরা। জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ এড়াতে মানুষ গ্রামের দিকে ছুটছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট আর তীব্র গরমে দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় ঘরমুখী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। যাত্রীরা জানান, যেখানে কাঁচপুর থেকে মদনপুর যেতে সর্বোচ্চ ১০-১৫ মিনিট লাগে। সেখানে ঘণ্টা খানেক মদনপুর সিগন্যালে বসে আছি।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ নবীর হোসেন জানান, যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ছুটছে মানুষ। বাসের পাশাপাশি ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ ব্যক্তিগত যানবাহনে নাড়ির টানে বাড়ির দিকে যাচ্ছেন তারা। এ কারণে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড়ে বেড়েছে যানবাহনের চাপ।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড় থেকে রাবনা বাইপাস পর্যন্ত উত্তরবঙ্গগামী লেনে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। পরে বেলা বাড়ার সাথে সাথে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বর্তমানে মহাসড়কে গাড়ির চাপ রয়েছে। বর্তমানে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত গাড়ির চাপ রয়েছে। ফলে ধীর গতিতে চলছে যান বাহনগুলো।
পুলিশ, যানবাহন চালক ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল করে। এতে একটি যান বিকল হলে তা অপসারণ করতে যেটুুকু সময় লাগে, ওই সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনা শিকার যানবাহনের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয় এই মহাসড়কে। প্রশিক্ষণবিহীন চালকরা ট্রাফিক সিগনাল ও সড়ক আইন না মেনে গাড়ি চালান। এলোমেলো, অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানোর কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়।
দিনাজপুরগামী বাসচালক রশিদ মিয়া বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে এ মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও প্রশিক্ষণ ছাড়া চালক গাড়ি নিয়ে বের হয়। এছাড়াও তাদের এলোমেলো গাড়ি চালানোর ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত আস্তে আস্তে গাড়ি নিয়ে আসতে হয়েছে।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সড়কে ধীর গতি ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্বাভাবিক হচ্ছে। বিকেলে গাড়ির চাপ আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটে আটকে থাকা শহরের রাবনা বাইপাস, রসুলপুর, পৌলিং ও এলেঙ্গায় গাড়ী চালক ও যাত্রীরা জানান, প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে এই মহাসড়কে যানজটে আটকে আছি। এতে করে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে পানি ও ক্ষুধায় কষ্ট করতে হচ্ছে। উত্তরবঙ্গগামী লেনে দিনাজপুরগামী বাসের যাত্রী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশিতা আক্তার জানান, আড়াই ঘণ্টা যাবৎ রসুলপুরে যানজটে আটকে আছি। কখন যানজট ছাড়বে জানি না। কেউ কিছু বলতে পারছে না। পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ করার জন্য বাড়ি যাচ্ছি। কখন বাড়ি পৌছাবো তাও জানি না। অন্য দিকে এলেঙ্গায় রাজশাহীগামী বাসের যাত্রী আশিকুর রহমান জানান, প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে এলেঙ্গায় আটকা পড়ে আছি। গাড়ির যাত্রীরা সবাই সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে গাড়ীতে থাকা নারী ও শিশুদের অবস্থা বেশি করুণ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম জানান, ফিটনেসবিহীন বিকল হওয়া কয়েকটি যানবাহন রেকার করে সরাতে সময় লেগেছে। এছাড়া, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এদিকে, উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী লেনে যানবাহন চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সকল জারি-জুরি, নানান বুলি আওড়িয়েও শেষ রক্ষা হলো না। রাতভর জ্যামে যাত্রীদের নাকাল অবস্থা। মহাসড়ক ছেড়ে লিংক রোড ধরে সিরাজগঞ্জ শহরের ভিতর দিয়ে অনেক যানবাহন পার হয়েছে রাতভর। গত বুধবার রাতে শুরু হয় যানজট। সিরাজগঞ্জ পোষ্ট অফিসের ডাকের গাড়ির ড্রাইভার আব্দুল্লাহ জানান, রাত ১১টায় ঢাকা থেকে গাড়ি ছেড়ে জ্যামে পড়েন তিনি। বাইপাইল, চন্দ্রার মোড়, মির্জাপুর আর টাঙ্গাইল হয়ে যমুনা নলকা সেতু হয়ে হাটিকুমরুল পর্যন্ত জ্যাম আর জ্যাম। এ জ্যাম পাড়ি দিতে সময় লাগে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, কোরবানি ঈদের দিন যতই এগিয়ে আসছে ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে যানজট ততই
বাড়ছে। গতকাল এই মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ মোড়, হাটিকুমরিল, শেরপুর, বনানী, মোকামতলা পয়েন্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকালের দিকে কিছুটা যানজট মুক্ত পরিবেশ থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথেই বাড়তে থাকে যানজট। বগুড়া রোডস এ্যান্ড হাইওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রাতের বেলায় শুধুমাত্র দূরপাল্লার নৈশকোচ, গরু ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে থাকে। অন্যদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন রুটের আন্তঃজেলা বাস ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন সড়কে নেমে এলে স্বাভাবিকভাবেই মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যাধিক্য দেখা দেয়। একারণেই সৃষ্টি হয় যানজট। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে ফিটনেসবিহীন অনেক যানবাহন সড়কে নামানো হয়। এই ধরনের যানবাহন রাস্তায় দু-একটি অকেজো হয়ে গেলে সেটা সরাতে সরাতেই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। কয়েকজন বাস চালক বলেন, এই মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া অংশে ফোরলেন রোড প্রজেক্টের ধীরগতির কারণে ১৫/১৬টি স্থানের নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপের কারণেও চলমান যানবাহনকে থেমে যেতে হয়। আর তখনই রাস্তায় থেমে যায় শতশত যানবাহন। সৃষ্টি হয় যানজট। তবে হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছেন, তাদের তৎপরতার কারণে এবার এখন পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে যায়নি।
ট্রেন যাত্রা : ঈদ যাত্রার তৃতীয় দিন ছিল গতকাল। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন লাখো কর্মজীবী মানুষ। সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। গত দু’দিন কয়েকটা ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। গতকালও কিছু ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর ছেড়ে গেলেও অনেক ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়লেও সিট পাওয়া যাত্রীরা খুশী। যারা স্ট্যান্ডিং টিকেট কেটে সিট পানটি তারা ক্ষুব্ধ। প্রতিটি ট্রেনে যাত্রীদের ঝুলতে দেখা যায়। প্রতিটি ট্রেনেই বিশেষ করে ইঞ্জিনের সামনে অর্ধশত যাত্রী দাঁড়িয়ে যাত্রা করছেন। সরকারি-বেসরকারি অফিসের শেষ কর্মদিবস হওয়ায় দুপুরের পর থেকে যাত্রীদের চাপ আরো বেড়ে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ট্রেন সময় মতো ছেড়ে যাচ্ছে। দু’একটি ট্রেন ছাড়ছে সামান্য দেরিতে। প্ল্যাটফর্মগুলোতে নির্দিষ্ট লাইনে যাত্রার অপেক্ষা করছে ট্রেন। আগে থেকে লাইনে অবস্থান করায় যাত্রীরাও নির্দিষ্ট আসনে বসতে পারছেন সহজে। আবার অনেকে প্ল্যাটফর্মে বসে রয়েছেন নির্দিষ্ট ট্রেনের অপেক্ষায়। যারা টিকিট পাননি তারাও স্ট্যান্ডিং বা সিটবিহীন টিকিট কেটে ট্রেনের অপেক্ষা করছেন। টিকিট ছাড়াও দু’একজনকে ট্রেনে উঠতে দেখা গেছে। তবে রংপুর এক্সপ্রেসে রংপুরের পীরগাছা থেকে গতকাল ঢাকায় আসা যাত্রী মো. সউধো জানালেন, রংপুর এক্সপ্রেস বুধবার তিনঘন্টা দেরিতে রংপুর স্টেশন ছেড়েছে। ঢাকায় পৌঁছেতে ৩ ঘন্টা দেরিতে।
কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী রাজশাহী কমিউটার, চট্টগ্রামগামী চট্রলা এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী বনলতা এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ও সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস।
রাজশাহী কমিউটারের যাত্রী মো. বেলাল আহমদ বলেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম। এখন সময় মতো ট্রেন ছাড়ায় খুব ভালো। সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। এই ট্রেনের আরেক যাত্রী জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় দু’দিনে অন্তত ৩২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কেটেছিলাম। কী সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল বলে বুঝাতে পারব না। ট্রেন দেখলাম শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। সব মানুষই ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে বাড়ি যাচ্ছে। আমরা চাই মানুষের এই মানুষের ঈদযাত্রা যেন স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়। আমরা সেই লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।
শিডিউল বিপর্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও বড় ধরনের শিডিউল বিপর্যয় হয়নি। তবে দু’একটা ট্রেন দেরিতে আসায় দেরিতে ছেড়ে যাচ্ছে। এটাকে শিডিউল বিপর্যয় বলা যায় না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন