ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে সরর্কা কিন্তু সরকারের সে নির্দেশনা তোয়াক্কা করছে না বাইকাররা। দূরের রাস্তায় পুলিশের প্রহরা এড়িয়ে নানা ক্ষমতার মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াত এখনও চলছে।
সরেজমিনে গিয়েও মহাসড়কে গণহারে দুই চাকার বাহনটির চলাচল লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সাভার ও আশুলিয়া এলাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের ঢাকা-আরিচা ও উত্তরবঙ্গের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে অসংখ্য মোটরসাইকেলের চলাচল দেখা গেছে। ঢাকা-চিটাগাং রোড়েও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে।
বাইপাইল মোড় এলাকায় আবার মোটরসাইকেলে করে যাত্রী পরিবহন চলছে। ওই এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চালকরা যাত্রী নিয়ে চন্দ্রার দিকে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, পরিবার নিয়েও নিজ গন্তব্যের দিকে যাচ্ছেন বাইকাররা।
অবশ্য, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এসব মহাসড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা কিছুটা কম। আরোহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই নিষেধাজ্ঞার ভয়ে এসব সড়কে চলাচল করছেন না।
মহাসড়ক ব্যবহারে করে যারা বাড়ি যাচ্ছেন, নিজেরা তো নিয়ম ভঙ্গ করছেনই। অভিযোগ তুলছেন পুলিশের দিকেও। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, মহাসড়কে পুলিশ দায়িত্ব পালন করলেও তারাও সরকারের বেধে দেওয়া নিয়ম মানছেন না। কোথাও কোথাও কয়েকটি মোটরসাইকেল আটকাচ্ছেন তারা। অনুরোধ করা হলে তাদের ছেড়েও দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর উত্তরা থেকে ঈদ করতে পরিবার নিয়ে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছেন মো. মিল্লাত হোসেন। মোটরসাইকেল নিয়ে বাইপাইল মোড় এসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় কথা হলে তিনি বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। বাসা থেকে বের হয়ে বেড়িবাঁধ দিয়ে আসার সময় পুলিশ ধরেছিল। বলেছি বাড়ি যাবো। পরে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আমাকে ছেড়ে দিলেন। এর মধ্যে আর পুলিশ ধরেনি। সামনে কি হবে বলতে পারছি না। তবে আমি বাড়ি যাওয়ার কথাই বলবো। এতে যেতে দিলে দিবে না দিলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাস্তায় থাকবো।
মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ দেওয়ার পরও কেন এভাবে যাচ্ছেন- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বুধবার আমার অফিস ছুটি দিয়েছে। ভেবেছিলাম বাসে যাবো। কিন্তু টিকিট তো পাই না। যেটা পেয়েছিলাম তার ভাড়াও অনেক বেশি। মোটরসাইকেলে স্বাধীনভাবে যেতে পারব।
ভাড়ায় মোটরসাইকেলে চালান লিখন মিয়া। সাভারের মধ্যেই তিনি যাত্রী আনা নেওয়া করছেন। এখন পর্যন্ত তাকে ট্রাফিক পুলিশ বা সাধারণ পুলিশ আটকায়নি বলে জানালেন। মহাসড়কে ওঠার ভয়ও আছে তার। বলছেন, ভেতর দিয়ে বাইকে যাত্রী আনা নেওয়া করছি। দূরে কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা নেই। পুলিশ ধরলে সব শেষ।
মহাসড়কে মোটরসাইকেল খরা না থাকলেও আছে গণপরিবহনের। সংকট এতটাই বেশি, দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও নিজ গন্তব্যে যাওয়ার গাড়ি পাচ্ছেন না অনেকেই। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রথমত গাড়ি নেই। দ্বিতীয়ত, যেগুলো আছে; স্টাফরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন। কোনো ক্ষেত্রে তিনগুণ ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলছে বাস চালক ও স্টাফরা।
সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, আমরা দুই পয়েন্ট মোটরসাইকেলে জন্য চেকপোস্ট বসিয়েছি। সকাল থেকে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা মোটরসাইকেল দেখলে আটকে দিচ্ছি। অনুমতি নিয়ে আসলে সেই মোটরসাইকেলগুলোর কী করা হচ্ছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এখন পর্যন্ত অনুমোদনসহ কোনো মোটরসাইকেলে পাইনি। পুলিশ সুপারের অনুমতি নিয়ে এলে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে, যাদের অনুমতি নেই; তাদের মহাসড়কে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। শনিরআখড়ায় শহিদুল ইসলাম নামের এক বাইকার জানান, গত ঈদে যাত্রী বহন করে ঈদ করেছি। এবার সরকার হাজার হাজার বাইকারের সংসারের কথা চিন্তা না করেই মোটরসাইকেল বন্ধ করে দিয়েছে। এটা অমানবিক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন