আরাফা শব্দের অর্থ হলো পরিচিতি, হযরত দ্বাহহাক (র.) বলেন, হযরত আদম (আ.) কে হিন্দুস্তানে এবং হাওয়া (আ.) কে জেদ্দায় বেহেশত থেকে অবতরণ করা হয়েছিল। অবতরণের পর তারা পরস্পর পরস্পরকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে একদিন উভয়ে আরাফাতের ময়দানে আরাফার দিনে মিলিত হলেন এবং একে অপরের মধ্যে পরিচয় ঘটলো। এ কারণে ঐ স্থানের নাম হলো আরাফাত আর ঐ দিনের নাম হলো আরাফার দিন।
আরাফার দিনের ফজিলত সম্পর্কে বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে, ইহুদিগণ হযরত ওমর (রা.) কে বললো যে, আপনারা এমন একটি আয়াত পড়ে থাকেন তা যদি আমাদের উপর নাজিল হতো, তবে আমরা সেটাকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করে দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতাম। হযরত ওমর (রা.) বললেন, এটা কখন এবং কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে আর নাজিলের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) কোথায় ছিলেন তা আমি জানি। আল্লাহর শপথ! আমরা সবাই এ সময় আরাফাতে ছিলাম। এ দিন আমাদের জন্য দুইটি ঈদ ছিল, প্রথমত সেদিন ছিল জুমাবার যাকে আমরা ঈদ হিসেবে উদযাপন করি, দ্বিতীয়ত সে দিন ছিল ইয়াওমে আরাফা যাকে হাদিসে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। (বুখারি: হাদিস: ৪২৫১)
আরাফার দিনে আরাফাতের ময়দানে নবীজি এবং সাহাবায়ে কেরাম যখন উকুফে আরাফা করছিলেন তখনই আল্লাহ তাআলা নবীজি (সা.) এর উপর কুরআনুল কারীমের সর্বশেষ আয়াত নাজিল করে দ্বীনকে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। আর সেটি হলো সূরা মায়েদার ৩ নং আয়াত। এই আয়াত নাজিল করে আল্লাহ তাআলা বলেন, আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য চূড়ান্ত দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। এ আয়াত নাজিলের পর নবীজি (সা.) মাত্র একাশি দিন পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন। (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া: ২/২৪২)
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, আরাফা দিবসের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই। এই দিনে আল্লাহ তাআলা পৃথিবীবাসীকে নিয়ে গর্ব করে বলেন, তোমরা আমার ওইসব বান্দাদেরকে দেখো, যারা বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো চুল নিয়ে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আমার রহমতের আশায় এবং শাস্তির ভয়ে আমার কাছে এসেছে। সুতরাং আরাফা দিবসের চেয়ে বেশি দোযখ থেকে মুক্তির আর কোনো দিন নেই। এই দিনে যে পরিমাণ লোক দোযখ থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে অন্য কোনো দিন করবে না। (সহীহ ইবনে হিব্বান: হাদিস: ৩৮৫৩)
হযরত নাফে (রা.) হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা আরাফা দিন স্বীয় বান্দার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। যার অন্তরে বিন্দুমাত্র ঈমান থাকবে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেয়া হবে। হযরত নাফে (রা.) বলেন, আমি ইবনে ওমর (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, এই ক্ষমা কি সকল ঈমানদারের জন্য নাকি শুধু আরাফাবাসীদের জন্য খাস? উত্তরে তিনি বলেন, এই ক্ষমা সকল ঈমানদারের জন্য। ( ইবনে রজব হাম্বলী (র.), লাতায়েফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা-৪৭১)
আরাফার দিনে অসংখ্য মানুষদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। হযরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবীজি (সা.) এরশাদ করেন, আরাফা দিবসের চেয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য অন্য কোন দিন নেই। (সহীহ ইবনে খুজাইমা: ৪/৪৪২)। সহীহ মুসলিম শরীফে আবু কাতাদা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবীজি (সা.) এরশাদ করেন, আরাফা দিবসে রোজা রাখলে আশা করি আল্লাহ তায়ালা রোজাদাহরের এক বছরের আগের ও এক পরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
(মুসলিম: হাদিস: ১১৬২)।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। আরাফাতের ময়দানে হাজিগণ হাজির হয়ে আল্লাহর রহমত তালাশ করে। সমবেত সকলে এবাদত-বন্দেগী ও গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করে আল্লাহর জিকির, দোয়া, মুনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকে। আর আল্লাহ তাআলাও বান্দাদের ইবাদত-বন্দেগি এবং কান্না-কাটি মিনিময় হিসেবে তাদেরকে ক্ষমা ও জান্নাত লাভের ঘোষণা দেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জীবনে অন্তত একবার হলেও আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের তৌফিক দান করুন, আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন