জাতীয় হƒদরোগী ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসকের অজ্ঞতায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকারের অধীনে ভর্তিকৃত চামেলি দাস নামের এক রোগীর ২১ নভেম্বর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় চিকিৎসকের অজ্ঞতা এবং অবহেলার অভিযোগ উঠলে ২৩ নভেম্বর হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এস টি এম আবু আজম হাসপাতালের কার্ডিওলজির অধ্যাপক মো. আফজালুর রহমানের নেতৃত্বে এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, তদন্ত কমিটির বিষয় জানতে চাইলে কমিটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি কিছু বলবো না। ডা. প্রদীপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রদীপ এই হাসপাতালের একজন জুনিয়র চিকিৎসক। সে আমার কাছে এর বেশি কিছু নয়। আমি এই হাসপাতালে কাউকে দু’নম্বরি করতে দেই না। ডা. প্রদীপ এখানে প্রভাবশালী এবং আপনার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সে এখানে অন্যায় কাজ করছে। এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এটা মিথ্যা কথা। আমার নাম কোড করে এখানে কেউ কিছু করতে পারে না।
রোগীর নাম চামেলি দাশ (৪৫) এনজিওগ্রাম করার সময় রোগীর হƒদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকার পরেও রিং পরানোর জন্যই মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন তার স্বামী বজেন্দ্র চন্দ্র দাশ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পিএলআরে যাওয়া কর্মচারী বজেন্দ্র চন্দ্র দাশ জানান, হার্টে সমস্যা নিয়ে গত ১৫ নভেম্বর হƒদরোগ হাসপাতালে ভর্তি হন চামেলি দাশ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার রোগীকে রিং পরাতে হবে জানান। সেই মতো ২১ নভেম্বর দুপুর ১টায় রোগীরকে এনজিওগ্রাম করা হয় এবং রিং পরানো হয়। রাত ৮টায় রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি জানান, এ বিষয়টি হাসপাতালে পরিচালক অধ্যাপক ডা. এসটিএম আবু আজমকে জানানো হয়। তিনি রোগীর চিকিৎসার বিভিন্ন ধাপ দেখেন এবং অনেক কম হƒদ স্পন্দন থাকার পরেও কেন রিং পরানো হলোÑ এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মৃতের স্বামী বজেন্দ্র চন্দ্র দাশ আরো বলেন, উক্ত চিকিৎসক নিজেই রিং পরাতে অতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি রিং কোম্পানীর লোকজন নিয়ে আসেন, এবং একজনের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় আমাকে দিয়ে রিং কিনিয়ে নেন। এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত চিকিৎসক প্রদীপ কুমার কর্মকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসায় কোন সমস্যা ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এই ঘটনার পরে হাসপাতাল পরিচালকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অনেক চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, প্রদীপ কুমার জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও অনেক সিনিয়রকে ডিঙ্গিয়ে তাকে ইউনিট দেয়া হয়েছে। এমনকি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য হাসপাতালে একজন উপ-পরিচালক থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত ক্ষমতাবলে ডা. প্রদীপই সব কাজ করে থাকেন। তার ইউনিটে ভর্তি রোগীদের এনজিওগ্রাম করতে হলে রিং পরানো একপ্রকার বাধ্যতামূলক। হাসপাতলের অন্য চিকিৎসকরা বলেন, প্রদীপ কর্মকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের আরো অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু পরিচালক এসব বিষয় সবসময় এড়িয়ে যান।
তদন্তের বিষয়ে জানতে কমিটির সভাপতি ডা. মো. আফজালুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন