শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লোডশেডিংয়ে বেড়েছে আইপিএস ও জেনারেটর বিক্রি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

আষাঢ় মাসে ভ্যাপসা গরম। কোথাও কোথাও বৃষ্টি হলেও গরমে অতিষ্ট মানুষ। এ অবস্থায় সরকার প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের ঘোষণা দিয়েছে। হঠাৎ করেই লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় আপদকালীন বিকল্প হিসেবে আইপিএস ও জেনারেটরের দিকে ঝুঁকছেন রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের শহরের সচ্ছল মানুষদের অনেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই সপ্তাহে এই দুটি পণ্যের বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। অনেকে কেনার জন্য খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে জেনারেটরের চেয়ে আইপিএসের প্রতি আগ্রহটা বেশি দেখা যাচ্ছে।
ঈদুল আজহার আগে সাধারণত ফ্রিজ বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে আইপিএস। রাজধানীর কাপ্তান বাজারের ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকায় আপিএসের বিক্রি অনেকটাই কমে গিয়েছিল। যাদের ঘরে পুরনো আইপিএস ছিল, অনেকে তা বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দেওয়ায় ফের আইপিএসের বিক্রি বেড়েছে।
গত ১৫ দিনে ব্যক্তিগত ক্রেতা পর্যায়ে আইপিএসের বিক্রি তুলনামূলক ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তারা বলছেন, কোরবানির ছুটির কারণে অনেকে আইপিএসের দাম জানতে আসছেন। ঈদের পর কেনার আগ্রহ প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে সপ্তাহখানেক পর বিক্রি আরও বাড়তে পারে।
নবাবপুর রোড, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ও কাপ্তান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আইপিএস। এর মধ্যে অন্যতম লুমিনাস ও মাইক্রোটেক। এর পরেই রয়েছে লিভগার্ড, এমাজি, ইউটিএল ডামা প্লাস, এক্সাইডের মতো কিছু প্রতিষ্ঠানের পণ্য। দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের আইপিএসও বেশ ভালো বিক্রি হতে দেখা গেছে। এমন একটির নাম সেপটি প্লাস। এ ছাড়াও মিস্ত্রিদের হাতে বানানো আইপিএসও ভাল বিক্রি হচ্ছে।
সেপটি প্লাসের বিক্রেতা মো. শাহেদ জানান, ধরন ভেদে আইপিএসের দাম ৫ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ছোটগুলো। ৫টি ফ্যান ও ৫টি লাইটের ক্ষেত্রে ৭ হাজার টাকা, ৪ ফ্যান ও ৪ লাইট ৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৩ ফ্যান ও ৩ লাইটের উপযোগী একটি আইপিএসের ৫ হাজার ৫০০ টাকা।
পাশের দোকানের মালিক পরিচয় দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, আইপিএসের ক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত শ্রেণির। সিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে নিম্নবিত্তরা এটি কেনার কথা ভাবতে পারছে না। যারা দাম জেনে চলে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যাই বেশি।
এদিকে, নবাবপুরের বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে জানা গেছে, জেনারেটরের বিক্রিও কিছুটা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ৫ কিলোহর্স জেনারেটর। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ছোট আকারের এসব জেনারেটর কিনছেন অনেকে। তবে আইপিএসের প্রতি মানুষের ঝোঁক বেশি থাকায় বিক্রি আগের থেকে কম।
বাতিঘরের সেলস ও মার্কেটিং ম্যানেজার নাদিম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, জুন ক্লোজিং এবং ঈদের কারণে জেনারেটর বিক্রি কতটা বেড়েছে, তা এখনই বলা যাবে না। তবে কিছুটা তো বেড়েছেই। অনেকে দামদর জানতেও আসছে। আমরাও বাজার বোঝার চেষ্টা করছি। ঈদের পর হয়তো বিক্রি বাড়বে।
পুরান ঢাকার বাবুবাজারের করিম শেখ এবং অনিক আহমেদ খান নামের দুই ক্রেতা জানান, দীর্ঘদিন লোডশেডিং সেভাবে না থাকায় সার্বক্ষণিক বৈদ্যুতিক সেবা নিয়ে একধরনের অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে ঢাকাবাসীর। এখন হঠাৎ করে ঘনঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হওয়ায় সাময়িক সময়ের জন্য বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে। তবে সামনে শীতের মৌসুম হওয়ায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলেও ধারনা করছেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে আইপিএস-জেনারেটরের বিক্রি কমতে পারে।
যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি মার্কেটে আইপিএস কিনতে আসা জহিরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলছে। অথচ ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উপাদন করতে পারছে না। অথচ কুইক রেন্টাল নামে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের নামে দলীয় ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা গাচ্ছা দিচ্ছে। এই চরম দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে এখন আইপিএস কিনতে হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন লোডশেডিং ঘোষণা দেয়ার পর মানুষ আইপিএসের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন