শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সাড়ে ১০ লাখ পরিবারকে বিএনপির সহযোগিতা

বানভাসিদের পাশে নেতাকর্মীরা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখেছে সিলেট-সুনামগঞ্জবাসী। একই সময়ে নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, ফেনী, জামালপুরেও পাহাড়ি ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়। পানিতে ফসলি জমি, বসত-ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় এখনো অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে রয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। পানিবন্দী এসব মানুষ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছেন। বন্যা দুর্গত এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকেই বন্যার্তদের পাশে দাঁড়তে দলটির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি জাতীয় ত্রাণ কমিটি নেতৃত্বে শুরু হয় তিন ধাপে সহযোগিতা প্রদান। এর মধ্যে রয়েছে- পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে তাদের খাবার সরবরাহ করা। এরপর বন্যার পানি নেমে গেলে তাদের পুনর্বাসন এবং বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে সাড়ে ১০ লাখ বানভাসি পরিবারের কাছে ত্রাণ সামগ্রি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ত্রাণ বিতরণ করেছে এবং এখনো এটি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ড্যাব, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামও দুর্গদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে।

বিএনপির ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ বন্যা কবলিত এলাকায় এখন পর্যন্ত সাড়ে ১০ লাখ বানভাসী পরিবারকে আমরা রিলিফ দিয়েছে। এই রিলিফ দেয়া অব্যাহত রয়েছে। এই রিলিফ আমরা সংগ্রহ করেছি প্রত্যেকটা জেলা ও ইউনিটের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। অনেক সাধারণ মানুষও আমাদেরকে টাকা দিয়েছে। জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমরা বন্যার্তদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। এই দুযোর্গে বিএনপি প্রমাণ করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জনগণের পাশে আছে এবং জনগণের পাশে থাকবে।

সরকারের নানা নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যে বিএনপির নেতা-কর্মী দলের জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতো নিপীড়নের মধ্যেও তৃণমূলে আমাদের সংগঠন আছে, বিএনপি বেঁচে আছে, কর্মীরা মামলা-মোকাদ্দমা মাথায় নিয়ে কাজ করছে। আর সরকারি দলের কোনো সংগঠন নাই। তাদের আছে পুলিশ, কিছু আমলা, কিছু ডিসি, কিছু ওসি আর কিছু হাতুড়ি বাহিনী আছে। তাও আরকি ওসির জোরে সে হলো বাহিনী।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা আমাদের সামর্থ্য নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের বুঝতে হবে আমরা গত ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা নানান নির্যাতনের শিকার। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা। সরকার আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। তারপরও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।

বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিলেট জেলা ও মহানগরে ১৩টি উপজেলার ২ লাখ ৫৩ হাজার পরিবারে মাঝে শুকনো খাবার, ৫ লাখ ৪৬ হাজার মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি, ৩০ হাজার ৬শ’ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান এবং ৩৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে।

সুনামগঞ্জ জেলায় ৬৭ লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান, ১১ হাজার পরিবারের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ ও সাড়ে ৩ হাজার পরিবারে ত্রাণ বিতরণ করেছে। নেত্রকোণা জেলায় ১৯ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি ৩ হাজার ২শ’ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছে।

জাতীয়তাবাদী যুবদল সিলেট জেলা ও মহানগরী এলাকায় ১৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকার ১ হাজার ৭৫ বস্তা ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করে। স্বেচ্ছাসেবক দল সিলেটে ৩৫ হাজার ৫৪০টি পরিবারের মাঝে, মহানগরে ১১ হাজার ৩২০টি পরিবারে এবং নেত্রকোণায় ১ হাজার ৩৫০টি পরিবারে ত্রাণ বিতরণ করেছে। কুড়িগ্রামে বিএনপি ৩শ’ পরিবারে শুকনো খাবার ও ত্রাণ এবং মৎস্যজীবী দল ৫০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে। নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, শাল্লা ও দিরাই উপজেলায় ২ হাজার ৩০০ পরিবারে ত্রাণ বিতরণ করে। কিশোরগঞ্জে বিএনপি নিকলী উপজেলায় ৩ হাজার পরিবারে ত্রাণ দিয়েছে।

কৃষক দল সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট জেলায় ১০ হাজার ৫০০ পরিবারে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। ছাত্রদল সিলেট-সুনামগঞ্জে ৮০ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। মহিলা দল দক্ষিণ সুরমায় ২৫০ বস্তা ত্রাণ দিয়েছে। ড্যাব বন্যার্ত ৫০০ পরিবারে ত্রাণ দিয়েছে।

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন নেত্রকোনায় ১ হাজার অসহায় পরিবারের মাঝে ত্রাণ সমগ্রী ও ওষুধ বিতরণ করেছে।
এদিকে গতকাল গুলশানে বিএনপির ত্রাণ তহবিলে জেলা ও মহানগরের পক্ষে যথাক্রমে ঢাকা মহানগর উত্তরের আমিনুল হক, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তফা জামাল, ঢাকা জেলার দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, খন্দকার আবু আশফাক, গাজীপুর মহানগরে সালাহউদ্দিন সরকার, সোহরাব উদ্দিন, শওকত হোসেন, নারায়গঞ্জ জেলার মইনুল ইসলাম রবি, মামুন মাহমুদ, মহানগরের সাখাওয়াত হোসেন, আওলাদ হোসেন, আবু আল ইউসুফ টিপু, এবং ঢাকা জেলা যুব দলের রেজাউল কবির পল, প্রয়াত মন্ত্রী আবদুল মান্নানের কণ্যা ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নান দলের ত্রাণ তহবিলে অর্থ প্রদান করেন।

সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন