প্রতি বছর ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা’সহ বিভিন্ন ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে আসতে হোটেল-মোটেলে অগ্রিম বুকিংয়ের হিড়িক পড়ত। অনেক সময় অগ্রিম বুকিংয়েও মিলতনা হোটেল কক্ষ। কিন্তু এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে সেই চিত্র একেবারে উল্টো। এবার অগ্রিম হোটেলে-মোটেল বুকিংয়ে দেখা দিয়েছে মারাত্মক বিপর্যয়। ঈদুল আজহার মাত্র একদিন বাকি। এখনো সর্বসাকুল্যে ২০ শতাংশ হোটেল-মোটেল কক্ষ বুকিং হয়নি বলে জানা গেছে। তবে এই বিপর্যয় কাটাতে হোটেল মালিকরা রোম ভাড়ায় সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট বা ছাড় দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
এমন বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান করতে কাজ করেছেন হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতি। গত বৃহস্পতিবার সকালে জরুরি বৈঠক করেন সমিতির নেতারা। ওই বৈঠকে এই বিপর্যয় কাটাতে রোম ভাড়ায় ছাড় ঘোষণা করেন তারা। বৈঠকে সম্প্রতি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সংঘটিত বন্যা এবং পদ্মা সেতু খুলে দেয়ায় পর্যটকদের কুয়াকাটামুখী হওয়া এবং কক্সবাজার শহরের অসমাপ্ত সড়ক মেরামত কার্যক্রমকে চিহ্নিত করেছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কয়েকজন হোটেল মালিক জানান, সর্বোচ্চ ৪০ ভাগ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে তারা রোম বুকিং নিচ্ছেন। ভালো মানের একটি হোটেলেও পর্যটকরা এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানিয়েছেন, বিগত বছরগুলোতে ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ আগে কক্সাবাজারের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসের প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকড হয়ে যেত। এমনকি কটেজগুলোতেও বুকিংয়ের হিড়িক পড়ত। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। বহু হোটেলে কোন কক্ষ বুকিং হয়নি। যেগুলোতে হয়েছে সেখানে ৩০ শতাংশের নিচে।
কলাতলীর প্রধান সড়ক লাগোয়া স্বপ্নালয় স্টুডিও এ্যাপার্টমেন্টে’র ইনচার্জ কুতুব উদ্দীন জানান, তাদের হোটেলে ৬০টি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৫টি অগ্রিম বুকিং হয়েছে। সুপরিচিত হোটেলগুলোতে ১০ থেকে ২০ পর্যন্ত কক্ষ বুকিং হয়েছে। কিন্তু অনেক হোটেল শূণ্য বুকিংয়ে রয়েছে। হোটেল আইল্যান্ডিয়া›র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নূরুল পাশা জানিয়েছেন, তাদের হোটেলে গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বুকিং ছিল শূণ্য। একই কথা জানিয়েছে ‹গ্র্যান্ড সেন্ডির ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুর রহমান।
হোটেল বুকিংয়ে এমন বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে পর্যটন সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের সাথে কথা জানা গেছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাকে প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া সিলেটসহ দেশের বহুস্থানে সম্প্রতি সংঘটিত বন্যাও অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেকুল্লাহ রফিক বলেন, সবাই কুরবানীর পশু বেচা কেনা নিয়ে ব্যস্ত। ঈদের পরে ঠিকই ভ্রমণপিয়াসুরা কক্সবাজার চলে আসবেন। এছাড়াও বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে তো ডিসকাউন্টে রোম পাওয়া যাচ্ছে। সরকার পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার লক্ষ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দীর্ঘদিনের রেল সংযোগের দাবি পূরণ হতে চলেছে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পুরানো আরাকান সড়ক চার লাইনে করার সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংযুক্ত করে বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে অনেক দূরে গিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন