কাগজে-কলমে ৯ তারিখ থেকে ঈদের ছুটি শুরু হলেও ৮ জুলাই শুক্রবার সাপ্তাহিক হওয়ায় ছুটি আসলে শুরু হয়ে গেছে একদিন আগেই। আর তাই ঘরমুখো মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ছুটছেন আপন গন্তব্যে। তবে পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় ঘরমুখো মানুষের শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকা থেকে ফিরতি খালি গরুর ট্রাক। রাজধানীর বিভিন্ন হাটে গরু পরিবহন শেষে ট্রাকের ফিরতি যাত্রায় এসব মানুষ বাড়ি ফিরছেন। শুক্রবার ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-মানিকগঞ্জ রুটের মহাসড়ক পর্যবেক্ষণ করে এমন চিত্র দেখা গেছে। দেখা গেছে, শত শত মানুষ গণপরিবহণের জন্য অপেক্ষা করছেন। বাস না পেয়ে ট্রাকে করে রওয়ানা দিচ্ছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ককে দেখা যায় প্রতিটি ট্রাকে অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন মানুষ যাত্রা করছেন। পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর ছাদেও উঠেছেন মানুষ। রোদের তাপ থেকে বাঁচতে ব্যবহার করছেন ছাতাও। কেউবা গামছা মাথায় দিয়ে বসে আছে। নারী, পুরুষ, শিশু এ যাত্রায় সামিল হয়েছেন। কেউ কেউ উঠেছেন বাসের ছাদেও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেসব ট্রাক গরু নিয়ে ঢাকার পশুর হাটে আসছেন। সেই ট্রাকগুলো ফিরে যাচ্ছেন যাত্রী নিয়ে। শহিদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জানান, তিনি গাবতলীতে বাসেটর টিকেট না পাওয়ায় সাভার এসেছেন। সেখানে ট্রাকে উঠেছেন বগুড়া যাবেন। এতে ভাড়া গুনতে হবে ৬শ টাকা। ট্রাকের অপর একজন যাত্রী নুবায়েত প্রত্যয় বলেন, গত রাত ২টায় রাজধানী থেকে রওনা হয়েছি। এখন দুপুর ১২টা পর্যন্ত আমার অবস্থান টাঙ্গাইল বাইপাস রোডে। শুধুমাত্র চন্দ্রা পার হতে সকাল ৭টা বেজেছে। অসহনীয় যানজট রয়েছে রাস্তায়। তবুও দশ দিনের ছুটিতে বাড়িই একমাত্র আমাদের ভরসা। তিনি আরও বলেন, রাত থেকে দেখেছি এমন কোনো ফিরতি ট্রাক নেই যে খালি যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকেই কম-বেশি মানুষ বাড়ি ফিরছে। এর জন্য ট্রাক চালকদের কষ্ট করতে হয়নি। খালি ট্রাক দেখলেই যাত্রীরা চালককে গন্তব্য জিজ্ঞেস করে উঠে পড়ছে। আমিও গতরাতে বাস পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে ট্রাকেই ঈদ যাত্রা শুরু করেছি। তবে ঢাকামুখি ঢাকা-টাঙ্গাইল রোড পুরোটাই খালি। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পরপর একটি দুটি বাস ঢাকার দিকে ছুটছে।
আরেক ট্রাক যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, রাত ১১টায় মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়েছি। কিন্তু সেখানে কোনো বাসে আমি উঠতে পারিনি। আসন সংখ্যার বাইরেও লোক ওঠাচ্ছে বাসগুলো। পরে বাসে উঠতে না পেরে আমি আমার গন্তব্যের একটি ট্রাকে দেড় ঘণ্টা পরে উঠতে সক্ষম হয়েছি। ভাড়া নিয়ে সমস্যা না, অন্তত যেতে পারবো এটাই হচ্ছে মূল কথা।
ট্রাক চালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিনই গরু নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাটে পৌঁছাই। কিন্তু হাটে গরু নামিয়ে বাড়ির পথ ধরতে অন্তত রাত ১২টা বাজে। এ সময় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় চলতে দেখেছি। অনেকে দলবদ্ধ হয়ে ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে গন্তব্য জিজ্ঞেস করে। গন্তব্য মিলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তারা ট্রাকে উঠে পড়ে। এর জন্য আমাকে কোনো ডাকাডাকি করতে হয়নি। ঈদের সময় তো মানুষ যাবেই। ভাড়াও যে যেমন দিচ্ছে নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, শুধু আমি না প্রতিটি ট্রাকই যাত্রী পরিবহন করছে। নিজ এলাকার মানুষ বাড়ি যাওয়ার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। মানবিক কারণে হলেও তাদের নিয়ে যেতে হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন