শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বীমা কর্মকর্তার কত প্রভাব?

অনুসন্ধান ছাড়াই দুদক দিলো দায়মুক্তি আইডিআরএ’র আদালত অবমাননা!

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি:র কোম্পানি সেক্রেটারি ও আইন কর্মকর্তা মো. জহিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা (ক্রিমিনাল মিসেলিনিয়াস নং-৩৩৭৪৫/২০২০) চলছে। বিচারপতি মো. রেজাউল হক এবং বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের ডিভিশন বেঞ্চে হয়েছে মামলাটির শুনানি। মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত (এফআইআর নং-২৪৭/২০১৭) মামলা থেকে উৎপত্তি এই সি.এম.পি.এখন বিচারাধীন।

এছাড়া আরেকটি মামলা (ক্রিমিনাল মিস কেন নং-৬৮৪১/২০১৮) পৃথক একটি বেঞ্চে বিচারাধীন রয়েছে। ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত মামলা {নং-১১(০৪)১৭} থেকে শেষোক্ত মামলাটির উৎপত্তি। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি:র কোম্পানি সেক্রেটারির পক্ষাবলম্বন করতে গিয়ে হাইকোর্টে বিচারাধীন দু’টি মামলার অস্তিত্বই অস্বীকার করা হয়।
জানাগেছে,বীমা কর্মকর্তা মো. জহিরউদ্দিন আগে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নামক একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, চুরি, জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে পৃথক ৩টি মামলা করেন। এর মধ্যে একটি মামলা বিচারিক আদালতে খারিজ হয়ে যায়। আরও দু’টি মামলা বিচারিক আদালত খারিজ করে দিলেও খারিজাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন বাদীপক্ষ। এর ফলে দু’টি মামলাই এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। পরবর্তীতে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে নিয়োগ পেতে বিরুদ্ধে ওঠা ফৌজদারি অপরাধ এবং মামলার তথ্য গোপন করেন জহিরউদ্দিন। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে বাগিয়ে নেন নিয়োগ। অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা, জালিয়াতি, চুরিসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের তথ্য তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়ের হয়। একই অভিযোগ দায়ের করা হয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)র দফতরে।
তবে কোনো প্রকার অনুসন্ধান ছাড়াই জহিরউদ্দিনকে দায়মুক্তি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনও।এক ‘জরুরি পত্র’ মারফত তাকে এই দায়মুক্তি দেয়া হয়। দুদক সচিব তথা কমিশনকে পাশ কাটিয়ে গত ৭ জুনের এই ‘জরুরি পত্র’টি (স্মারক নং-০০.০১.০০০০.৫০৩.২৬.১৯৭.২২-২০৯৬০) ইস্যু করেন সংস্থার ‘দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল’ সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক (পরিচালক) উত্তম কুমার মণ্ডল। দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে দেয়া ‘জরুরি’ পত্রটিতে (স্মারক নং-০০.০১.০০০০.৫০৩.২৬.১৯৭.২২-২০৯৬০) স্বাক্ষর করেন ‘দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল’ সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক (পরিচালক) উত্তম কুমার মণ্ডল। অভিযোগটি দুদকে জমা পড়ে চলতিবছর ২৮ ফেব্রুয়ারি। এটি সংস্থাটির অভিযোগ যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক)র হাতে আসে চলতি বছর ১ মার্চ। অনুসন্ধান না করে আইডিআরএ‘র কাছে ফেরত পাঠানো (দায়মুক্তি) হয় ৭ জুন। অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে এ কাজগুলো সম্পাদন করে দুদক। অথচ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে ‘ব্যবস্থা’ নিতে বলার কোনো বিধান দুদকের কার্যবিধিতে নেই। তবে সংস্থাটি যদি মনে করে নির্দিষ্ট একটি অভিযোগ অন্য কোনো সংস্থাকে দিয়ে অনুসন্ধান-তদন্ত করাবে সে ক্ষেত্রে কমিশন প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে তদন্তের এখতিয়ার দেবে। বীমা কর্মকর্তা জহিরউদ্দিনের ক্ষেত্রে কমিশন দুদকের বাইরের কোনো কর্মকর্তাকে অনুসন্ধান-তদন্তের এখতিয়ার দিয়েছে বলে জানা যায় নি।
অন্য দিকে জহিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে চলতি বছর ৯ মে। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন আইডিআরএ’ চেয়ারম্যানের দফতরে প্রতিবেদন জমা পড়ে ৮ জুন। তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন কর্মকর্তা হলেন, আইডিআরএ‘র পরিচালক(নন-লাইফ) মো. জাহাঙ্গীর আলম, একই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মুহাম্মদ শামছুল আলম এবং মো. শামসুল আলম খান। তদন্ত প্রতিবেদনে তারা হাইকোর্টে চলমান মামলা দু’টি মামলার অস্তিত্বই অস্বীকার করেন। উল্লেখ করেন, মো. জহিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড‘র পরিচালক ও কোম্পানি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। একটি কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত এবং অন্যটি কোম্পানির পরিচালক বেগম হোসনে আরা নাজ’র ব্যক্তিগত মামলা। মো. জহিরউদ্দিন উভয় মামলার রায়ে অব্যাহতি পান। অর্থাৎ মামলা দু’টি আদালত ডিসচার্জ করে দেন।
প্রতিবেদনের ‘তদন্তের ফলাফল’ অনুচ্ছেদে (৮.২) বলা হয়, মো. জহিরউদ্দিনকে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি. হতে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করার কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। হোমল্যান্ড লাইফ কোম্পানি লি. যথাযথ ছাড়পত্র জমা দিয়ে তিনি প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যোগদান করেন।
এভাবে বিচারাধীন মামলার তথ্য চেপে গিয়ে এবং জহিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি -মর্মে প্রকারন্তে সাফাই গাওয়া হয়। বিনিময়ে দুদক এবং আইডিআরএ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে অদৃশ্য বোঝাপড়ার ভিত্তিতে দু’টি সংস্থাই দায়মুক্তি দেয় এই বীমা কর্মকর্তাকে।
এদিকে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলার তথ্য চেপে গিয়ে প্রকারন্তে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পক্ষাবলম্বন করা হয়েছে কি-না -জানতে চাইলে তদন্ত টিমের সদস্য মো. শামসুল আলম খান বলেন, আমরাতো তদন্ত প্রতিবেদন এখনও দাখিল করিনি। আপনি জানলেন কি করে ? হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষ থেকে সরবরাহকৃত মামলার রেকর্ড প্রাপ্তির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, যেসব রেকর্ডপত্র আমরা পেয়েছি তার ভিত্তিতেই বলেছি যে, জনাব জহিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা ডিসচার্জ হয়েছে। আপনি আমাকে ফোন দিলেন কেন? আমার টিম লিডার রয়েছেন তার সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে কি উল্লেখ করা হয়েছে -তা মনে পড়ছে না।
এদিকে সরকারি কোনো তদন্ত প্রতিবেদনে বিচারাধীন মামলার তথ্য গোপনে স্পষ্টতই আদালত অবমাননা বলে মন্তব্য করেছেন বীমা আইনে অভিজ্ঞ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এম. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সংক্ষুব্ধপক্ষ যদি বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করলে আদালত হয়তো এ বিষয়ে রুলিং দিতে পারেন। কারণ তদন্তটি একটি সরকারি সংস্থা সম্পন্ন করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন