চট্টগ্রামের বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে রফতানি পণ্যের চাপ বাড়ছে। ডিপোর সামনে পণ্যবাহী গাড়ির দীর্ঘ জটে অচলাবস্থতার সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত পণ্যের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডিপো সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন রফতানির পিক সিজন। দেশে রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। ঈদের আগে গার্মেন্টস কারখানাগুলো অগ্রিম শিপমেন্ট করে। এতে কম সময়ে অধিক পণ্য এবং কন্টেইনারের চাপ দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের তৃতীয় বৃহত্তম বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন এবং ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সেখানে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অন্য ডিপোগুলোকে বাড়তি চাপ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাছাড়া দেশে আমদানি-রফতানির পরিমাণ দ্রুত বাড়লেও সে অনুপাতে ডিপোর সংখ্যা বাড়েনি।
এসব কারণে ডিপোগুলোতে পণ্যের চাপ এবং জটের সৃষ্টি হয়েছে। আর তাতে রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাজার হাজার গাড়ি ডিপোতে ঢুকতে না পেরে দিনের পর দিন রাস্তায় অলস দাঁড়িয়ে থাকায় পণ্যবাহী পরিবহনের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই সঙ্কটের কারণে পরিবহন ভাড়া কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এখন বেশি ভাড়ায়ও মিলছে না লরি, কার্ভাড ভ্যান। এতে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন স্থবির হয়ে পড়েছে।
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯২ শতাংশ আমদানি-রফতানি কার্যক্রম হয়। তবে শতভাগ রফতানি পণ্য বেসরকারি ডিপো হয়ে বন্দর ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। অপরদিকে আমদানিকৃত ৩৮ আইটেমের পণ্য ডিপো হয়ে আমদানিকারকের কাছে পৌঁছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সহযোগী হিসাবে বেসরকারি ডিপোগুলো প্রায় ২০ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করে। চট্টগ্রামে ২১টি বেসরকারি ডিপোর মধ্যে ১৭টি পুরোদমে সচল রয়েছে। বিগত ২০১৬ সালের পর নতুন কোন ডিপো চালু হয়নি।
গত ৪ জুন বিএম ডিপোতে ভয়াবহ আগুনের পর কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে। তার চাপ পড়েছে অন্য ডিপোতে। সরেজমিন দেখা যায় পতেঙ্গার বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু করে পতেঙ্গা সৈকত সড়ক, কাটগড় এবং সিটি আউটার রিং রোড এলাকায় শত শত ট্রাক, কাভর্ডভ্যান পার্কিং করে রাখা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে এসব সড়কে পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ। এসব পরিবহন রফতানি পণ্য নিয়ে বেসরকারি ডিপোতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে ডিপোতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় তারা ঢুকতে পারছে না। এতে বাড়ছে কাভার্ডভ্যানের ভাড়া, আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কোন কোন পরিবহন দীর্ঘ ৫ থেকে ৭ দিন অপেক্ষায় আছে। এতে চালকেরা পড়েছেন মহাবিপাকে। তারা বলছেন, পণ্য নামিয়ে দিতে না পারায় তারা এলাকা ছেড়ে যেতে পারছেন না। নতুন ভাড়াও নিতে পারছেন না। আবার গাড়ি ফেলেও যেতে পারছেন না।
পতেঙ্গা এলাকার ইনকনট্রেন্ড কন্টেইনার টার্মিনাল, এসএপিএল, ওসিএল ও ইস্টার্ন লজিস্টিক লিমিটেড ডিপোর সামনে দীর্ঘ লাইন পণ্যবাহী পরিবহনের। একই দৃশ্য চট্টগ্রাম বন্দরের কলোনীর পশ্চিম পাশের এছাক ব্রাদার্স কন্টেইনার ডিপো থেকে বন্দর টোল রোডের টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায়। সেখানেও দীর্ঘ লাইন রয়েছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের। ডিটি রোডের পোর্ট লিংক ও কেডিএস অফডকেও দীর্ঘ লাইন।
চালকরা বলছেন, প্রতিবছর ঈদ আসলে এমন দীর্ঘ জট দেখা যায়। একসাথে অধিক পণ্য নিয়ে পরিবহন আসায় পণ্য লোডিং ও আনলোডিং করতে হিমশিম খায় ডিপোগুলো। এতে চালকদের অপেক্ষার প্রহর বাড়ে।
বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন ডিপোগুলোতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পরিবহন পণ্য লোডিং আনলোডিং করে। কিন্তু এখন ডিপোগুলোর সামনে দিনে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবহন আসছে। এই কারণে লোডিং আনলোডিংয়ে সময় লাগছে। এদিকে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ডিপোগুলোতে এমন অচলাবস্থায় তৈরি পোশাক রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন