বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মুমিনের ভালোবাসা নববীর মসজিদ

তাসনীম আল রাজী | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

মদিনা শব্দের অর্থ শহর বা মহানগর, যা মদীনাতুন নবী নামে পরিচিত , যার অর্থ নবীর শহর। পরবর্তীতে সেটা পরিচিতি পায় মদীনা মুনাওয়ারা তথা আলোকিত নগরী হিসেবে। পূর্ব নাম ছিল ইয়াসরিব। রাসূল সা. নবুয়াত লাভের পর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে নবুয়াতের তের তম বর্ষে আল্লাহর নির্দেশে আট দিনের সংগ্রাম মুখর পথ বেয়ে মদীনার উপকন্ঠে কোবা নামক স্থানে অবতরণ করলেন। সাথী ছিলেন হযরত আবু বকর রা. তাদের আগমনকে সাদর সম্ভাষনে অভিষিক্ত করল ইয়াসরিব বাসী। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করে মদীনার কেন্দ্রস্থল, তার মাতৃবংশ বনু নাজ্জার পল্লীতে আসলেন এবং হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা. এর বাড়িতে অবস্থান করলেন।
মদীনাবাসী আনন্দে মাতোয়ারা হলো। হযরত আনাস রা. বলেন - মদীনার সেদিনের মতো আনন্দোজ্জ্বল সোনলী দিন আমি আর কখনো দেখিনি। কিছুদিন পর রাসূল স. একটি মসজিদ নির্মানের পরিকল্পনা করলেন এবং তার উটনী ’কাছওয়ার’ থেমে যাওয়ার স্খানকে মসজিদের জন্য নির্বাচন করলেন। এ জমির মালিক ছিল সাহল ও সুহায়েল নামক দুই ইয়াতিম বালক। তাদের কাছ থেকে জমি ক্রয়ের পর সেখানে ইসলামের প্রথম মসজিদ নির্মান কাজ শুরু হল। অতপর আনসার ও মুহাজির সাহাবীদের দীর্ঘ সাত মাস পরিশ্রমে কাচা ইটের ভিত, খেজুরের পাতার ছাওনী এবং খেজুর গাছের কান্ড খুটি হিসেবে ব্যবহার করে মসজিদটি নির্মিত হলো। এ মসজিদকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠলো পবিত্র মদীনা নগরী। মদীনা পরিণত হলো ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রভুমি। অবশেষে তা পরিণত হলো নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান পার্লামেন্ট এবং বিচারালয়ে। গড়ে উঠলো তাওহীদের এক বিপ্লবী শিক্ষাকেন্দ্র, যেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সাহাবীরা পৃথিবীর আনাছে কানাছে ইসলামের বিজয় নিশান উড্ডীন করেছিলেন।
কাবা গৃহের পর মুসলিম উম্মাহর ২য় সর্বাধিক আর্কষনীয় স্থান হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতিবিজড়িত মসজিদে নববী। এ মসজিদ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশী হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে যারা উত্তমরুপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন। ( সুরা তাওবা ১০৮)। আল্লামা সামহুদী রহ. বলেন- কুবা ও মদীনা উভায় স্থানের মসজিদ প্রথম থেকেই তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত। উক্ত আয়াতে উভায় মসজিদের কথা বলা হয়েছে। (তারিখুল মাদীনাতিল মুনাওয়ারা)। নববী মসজিদের ফজিলত সম্পর্কে হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- হযরত ইবনে উমার রা. হতে বর্ণিত । তিনি বলেন- আমার এ মসজিদে এক সালাত আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য এক হাজার সালাত আদায় করার চেয়ে উত্তম। (বুখারী ও মুসলিম)। আবু দারদা রা. হতে অপার বর্ণনায় এসেছে : মসজিদে হারােেম এক সালাত এক লাখ সালাতের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক সালাত এক হাজার সালাতের সমান এবং বায়তুল মাকদিসে এক রাকাত সালাত পাচশত সালাতের সমান। (মাজমাউয যাওইয়াদ)। অন্য হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন- তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে (সাওয়াবের আশায়) সফর করা জায়েয নেই। তা হলো- মাসজিদের হারাম, মাসজিদে নববী এবং মসজিদে আকসা (বুখারী ও মুসলিম)। মসজিদে নববীতে সালাত আদায়ের মাধ্যমে নিফাক মুক্ত হয়, এ মর্মে হাদীসে এসেছে- কেউ যদি আমার মসজিদে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ একাধারে আদায় করে, এর মধ্যে কোন নামাজ ছুটে না যায়, তাহলে তার জন্য লেখা হয়, জাহান্নাম থেকে মুক্তি, শাস্তি থেকে পরিত্রাণ এবং সে হয় নেফাক থেকে মুক্ত ( মুসনাদে আহমাদ)।
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে আমার এই মসজিদে কেবল কোন কল্যাণ শেখার জন্য কিংবা শেখানোর জন্য আসবে, তার মর্যদা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য। পক্ষান্তরে যে অন্য কোন উদ্দেশ্যে তা দেখতে আসবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে অন্যের মাল-সামগ্রীর প্রতি তাকায় ( ইবনে মাজাহ)। রাসূল সা. এর ঘর ও মিম্বরের মাঝখানের জায়গাটুকুকে জান্নাতে অন্যতম উদ্যান বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আমার ঘর ও মিম্বরের মাঝের অংশটুকু রওযাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাহ ( জান্নাতের উদ্যান সমূহের একটি উদ্যান)। (বুখারী ও মুসলিম)।
হযরত আয়েশা রা. হুজরার মধ্যে রাসূল স. এর রওজা অবস্থিত। এটি বর্তমানে মসজিদে নববীর অর্ন্তগত। রওজা যিয়ারত সম্পর্কে রাসূল সা. বলেছেন- যে আমার ওফাতের পর আমার রওজা জিয়ারত করল, সে যেন আমাকে আমার জীবদ্দশায় দর্শন করল (বায়হাকি)। তিরমিজি শরীফের হাদীসে এসেছে, রাসূল সা. বলেন- যে হজ্জ করল, কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না; সে আমার প্রতি জুলুম করল (তিরমিজি)। এজন্য প্রত্যেক হজ পালনকারীর জন্য মসজিদে নববী ও রাসূল সা. রওজা যিয়ারত করা আবশ্যক। আর মুমিনের অন্যতম ভালোবাসা হলো নববীর মসজিদ। প্রত্যেক মুমিনকে আল্লাহ তায়াল মসজিদে নববী জিয়ারাতের তাওফিক দান করুন। আমিন

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন