মহান আল্লাহ তায়ালার পরে যার স্থান, সম্মান ও মর্যাদা তিনিই হচ্ছেন আমাদের প্রিয় নবীজী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি জগতবাসীর জন্য রহমত। মানব জাতির পথ প্রদর্শক। দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও মুক্তির দূত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক নিজেই উনার প্রশংসা করেছেন। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। আপনার মর্যাদা সুমহান। মু’মিনগণ নবীকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসেন। তিনি মহা মানব। তিনি সর্বশ্রে মানব। উনার কোন তুলনা হয় না। উনার তুলনা উনিই। যারা আমার প্রিয় নবীজীর (সা.) সাথে অন্যকারো তুলনা করে নবীজীর (সা.) শান, মান ও শ্রেত্ব প্রমাণ করতে চান তাদেরকে সবিনয়ে বলতে চাই, অন্যকারো সাথে নবীজীর (সা.) তুলনা চলে না। এটিই প্রতিটি মু’মিনের বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালবাসা।
এক ফারস্য কবি বলেন, মুহাম্মদ (সা.) কখনো কিছু বলতেন না, যতক্ষন না জিবরাইল (আ.) না বলতেন আর জিবরাইল (আ.) কখনো কিছু বলতেন না, যতক্ষণ না স্বয়ং আল্লাহপাক না বলতেন। হাদিসে এসেছে নবীজী (সা.) বেশ কয়েকবার আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)কে স্বপ্নে দেখেছেন। নবীজী (সা.) পক জিবরাইল (আ.) আম্মাজান আয়েশার (রা.) ছবি দেখিয়ে বলেন, ইনি হবেন আপনার স্ত্রী। উল্লেখ্য, নবীগণের স্বপ্নও ওহি।
সুতরাং, এ কথা নির্দ্ধিধায় বলা যায় স্বয়ং আল্লাহ পাকের ইশারায় নবীজীর (সা.) সাথে উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকার (রা.) নিকাহ সম্পন্ন হয়েছে। অতএব, রাম আর সিতা ও দুনিয়ার কোন পন্ডিত কত বছর বয়সে বিয়ে করেছেন সেই রেফারেন্স টেনে আমার প্রিয় নবীজীর (সা.) সাথে তুলনা করা অবান্তর নয় কী? একজন পচিঁশ বছরের যুবক চল্লিশ বছরের একজন মুতাল্লাকা মহিলাকে বিয়ে করার নজির কোথাও আছে কী? সাধারণত বিয়ে সম্পন্ন হয় মা-বাবা, হয়তো আত্মীয়-স্বজন, নয়তো বন্ধু-বান্ধবের পরামর্শে। আর আমার পিয়ারে হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকার (রা.) নিকাহ সম্পন্ন হয়েছে আমার মহান রবের পরামর্শে। নিশ্চয় সেখানে অনেক কল্যাণ, হিকমত ও রহস্য নিহীত আছে। তখনকার ইহুদী, কাফের, মুশরিক, আবু জেহেলরাও এই নিকাহ মোবারক নিয়ে কোনো আপত্তি তোলেনি। এক কথায় তখনকার সময়ে এ ধরনের প্রচলন ছিল। এখন চৌদ্দশত বছর পরে এসে তথাকথিত মুখপাত্র কুলাঙ্গার, নির্বোধ নুপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দাল আমার প্রাণপ্রিয় নবীজীর (সা.) সাথে আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) শাদী মোবারক নিয়ে আঙ্গুল তুলছে! অবমাননাকর মন্তব্য করছে। এটি নিঃসন্দেহে মূর্খতা, অজ্ঞতা, নির্বুদ্ধিতা ও বিদ্বেষপ্রসূত।
জন্ম, মৃত্যু ও বিয়ে মহান বিধাতার নিয়ন্ত্রিত মহিমা। কে, কখন, কোথায় জন্ম গ্রহণ করবে? কখন, কোথায় কীভাবে মৃত্যুবরণ করবে? কখন বয়ঃসন্ধিতে পৌছবেঁ তা কারো ইচ্ছাধীন নয়। এটি একমাত্র বিধাতার বিধান তারই নিয়ন্ত্রাধীন ও ইচ্ছাধীন। অতএব, যে বিষয়টি মানুষের নিয়ন্ত্রাধীন নয় তা নিয়ন্ত্রণের চো, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত ও বাস্তবসম্মত? কোন ব্যক্তি কী তার জন্ম ও মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করতে পারে? এই শক্তি, ক্ষমতা ও অধিকার কী কারো আছে? আল্লাহপাক জন্মের অনেক আগেই মৃত্যু নির্ধারণ করে রেখেছেন। জন্মের আগেই তার সঙ্গিনী নির্ধারণ করে রেখেছেন। এগুলো মহান রব তথা সৃকির্তার সৃ,ি রহস্য ও মহিমা। এটিই প্রতিটি মুমিনের বিশ্বাস। অতএব, এখতিয়ার বর্হিভূত বিষয় নিয়ে মাতামাতি, প্রশ্ন ও বির্তক বিধাতার বিধানকে চ্যালেঞ্জ করার নামান্তর। বাস্তবতাকে অস্বীকার করা নয় কী?
ঈমান মু’মিনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আর এই ঈমান যার ভাগ্যে নসীব হয় দুনিয়ার সমস্ত দুঃখ ক তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। নবীজীর (সা.) ভালবাসা ঈমান ও আমলে উৎকর্ষতা লাভের অন্যতম পাথেয় এবং আখিরাতে মহা সাফল্য অর্জনের সম্বল। প্রতিটি মু’মিনের টার্গেট হচ্ছে আখিরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফাআত ও সঙ্গলাভ। নবীজী (সা.) বলেন, ব্যক্তি যাকে ভালবাসে তার সাথেই তার হাশর হবে-সহিহ মুসলিম;২৬৪০। মহব্বতের কারণে সকল তিক্ততা মিে পরিণত হয়। আর মিতার স্বাদ সেই পায় যার নিকট আল্লাহ ও তার রাসূলের ভালবাসা সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে থাকে। নবীজী (সা.) বলেন, তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। তন্মধ্যে প্রথম গুণ হল, যার কাছে আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) সবচেয়ে প্রিয় হবে।
দ্বিতীয় গুণ হল আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসা আর আল্লাহর ওয়াস্তে শত্রুতা। তৃতীয় গুণ হল ঈমানের দৌলত লাভের পর কুফুরীতে ফিরে যাওয়াকে এমনভাবে অপছন্দ করা যেমনিভাবে ব্যক্তি জ্বলন্ত আগুণে নিক্ষেপ হওয়াকে অপছন্দ করে - সহিহ মুসলিম। নবীজীর (সা.) ভালবাসার প্রসঙ্গে হাদিসে একটি চমৎকার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এক সাহাবী রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.) কিয়ামত কবে হবে? নবীজী (সা.) পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কিয়ামতের জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছ? সাহাবী জবাব দিলেন আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) ভালবাসা। তখন নবীজী (সা.) বললেন, নিশ্চয় যাকে তুমি ভালবাস কিয়ামতের দিন তার সাথেই থাকবে। আনাস (রা.) বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর আমাদের কাছে সবচেয়ে খুশির বিষয় ছিল নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথা; নিশ্চয় তুমি যাকে ভালবাস কিয়ামতের দিন তার সাথেই থাকবে। আর আমি আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) কে ভালবাসি সাথে আবু বকর ও ওমর (রা.) কেও। তাই আশা রাখি আখিরাতে আমি তাদের সাথেই থাকব। যদিও তাদেরমত আমল আমি করতে পারিনি। (সহিহ মুসলিম : ২৬৩৯।
হুব্বে রাসূল (সা.) ঈমানের রূহ। মু’মিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। এই ইশক ও মহব্বত ছাড়া ঈমানের পূর্ণতা আসে না। নিছক ভালবাসাই যথে নয় বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর ওপর এই ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন আমরা নবীজীর (সা.) সাথে ছিলাম। নবীজী (সা.) ওমরের (রা.) হাত ধরা ছিলেন। ওমর (রা.) বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! আপনি আমার কাছে সব থেকে প্রিয় তবে আমার প্রাণ ব্যতিত। তখন নবীজী (সা.) বললেন, না ওমর হল না। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার কসম! ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণাঙ্গ মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় না হই। পরক্ষণেই ওমর (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম নবীজী (সা.) এখন থেকে আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তখন নবীজী (সা.) বলেন, হ্যাঁ ওমর এখন হয়েছে - সহিহ বুখারী; ৬৬৩২।
আল্লাহ ও রাসূলের ভালবাসা যদি সবকিছুর উপরে না হয় তাহলে মু’মিন পথ চলবে কীভাবে? আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) আদেশের সামনে নিজে সমর্পিত হবে কীভাবে? আজ বাধাঁ হবে সন্তান। কাল স্ত্রী। পরশু পিতা-মাতা। কখনো রাজনৈতিক দল। কখনো নেতা-কর্মী। কখনো বাধাঁ হবে ক্ষমতা। কখনো সম্পদের মায়া। কখনো জীবনের মায়া। আর মু’মিনতো হল সেই, যে আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) মহব্বতে সবকিছু বির্সজন দিতে প্রস্তুত। উহুদ যুদ্ধের ঘটনা রাসূল (সা.) এক নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যার স্বামী ও ভাই উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। লোকেরা যখন তাকে সমবেদনা জানাতে গেল তখন তিনি জানতে চাইলেন নবীজী (সা.) কেমন আছেন? তারা বলল, নবীজী (সা.) ভালো আছেন, আলহামদুলিল্লাহ। তাতেও তার মন শান্ত হল না। বললেন তবুও আমি নিজে দেখতে চাই। আমাকে দেখান। অতপর যখন নবীজী (সা.)কে দেখানো হল তখন তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি নিরাপদে আছেন। আপনার নিরাপত্তার পরে সমস্ত বিপদ আমার নিকট তুচ্ছ- সীরাতে ইবনে হিশাম।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহপাক বলেন, আল্লাহর পথে যে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা স্পর্শ করে, তাদের এমন পদক্ষেপ ও কর্মসূচী যা কাফেরদের ক্রোধের কারণ হয় আর শত্রুদের থেকে তারা যা কিছু প্রাপ্ত হয় এর প্রত্যেকটির বিনিময়ে তাদের জন্য নেক আমল লিপিবদ্ধ হয়- সূরা আত-তাওবা;১২০। প্রিয় নবীজীর (সা.) হাদিস আজ সারা বিশ্বে ভাইরাল শ্লোগান মান সাব্বা নাবিয়্য়ান ফাকতুলুহু। পিতা-মাতাকে গালি দিলে সন্তানের সহ্য হয় না। ছেলে-মেয়েকে কটাক্ষ করলে মা-বাবা বরদাশত করে না। সভানেত্রী ও দেশনেত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করলে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদে রাজপথে বেরিয়ে আসে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। নেতা-নেত্রী, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও নিজ প্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয় আমার প্রাণপ্রিয় নবীজী (সা.)কে নিয়ে কুলাঙ্গাররা অবমাননাকর মন্তব্য করবে আর মু’মিনগণ চুপচাপ নীরব ঘরে বসে থাকবে তাতো ঈমানের পরিচয় বহন করে না। কথায় বলে, রণে আর প্রেমে বিধি-নিষেধ মানে না। বিশ্বনবীর প্রেমে সারা বিশ্ব আজ উজ্জীবিত ও উদ্ভাসিত। ভালবাসার ও নবীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ এই প্রতিবাদ; মিছিল-মিটিং, বক্তৃতা-বিবৃতি, লেখনী ও শানে রেসালত সম্মেলন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা মহান সংসদে এমন দায়িত্বশীল প্রতিনিধি প্রেরণ করেছি যারা বিশ্বমুসলমানের মনের ভাষা বুঝেন না এবং নিজ দেশের জনগণের মুখের ভাষা শুনেন না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন