শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাস্তা নির্মাণে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, কমবে খরচ

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

দেশের রাস্তা নির্মাণে ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ন্যানোপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ করলে যেমনি টেকসই হবে তেমনি সড়ক নির্মাণে খরচও কমবে বলে মনে করছেন সড়ক বিশেষজ্ঞরা। সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদফতরসহ এই জাতীয় সংস্থাগুলো মাসে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব বলেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং কর্মকর্তাগণ প্রত্যাশা করছেন। তারা বলছেন, এক্রিলিক পলিমার একটি ন্যানোপ্রযুক্তি, যা রাস্তা নির্মাণ খরচ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কমাবে এবং অবকাঠামোর স্থায়িত্বের কারণে এর নূন্যতম রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের প্রয়োজন হবে।
সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বে বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে এটি বিশেষ করে রাস্তা নির্মাণের জন্য একটি বিস্ময়কর প্রযুক্তি হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে। ন্যানোপ্রযুক্তির পণ্য এক্রিলিক পলিমারের মাধ্যমে একমাসে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব। তিনি মনে করেন, এক্রিলিক পলিমার একটি পানিরোধী পণ্য যা প্রায় অবিনশ্বর এবং এর মাধ্যমে নির্মিত রাস্তার ভার বহন ক্ষমতা বাড়াবে অনেক বেশি। এটি আমাদের দেশের রাস্তাগুলোর স্থায়িত্ব অন্তত ৫০ বছর বাড়িয়ে দেবে এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নূন্যতম পর্যায়ে নিয়ে আসবে।
বর্ষাকালে দেশের সড়কগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ওইসময়ে বেহাল সড়ক নিয়ে পরিবহণ মালিক ও সড়ক প্রকৌশলীরা একে অন্যকে দোষারোপ করেন। পরিবহণ মালিকরা বলেন, সড়ক নির্মাণে নিন্মমানের মালামাল ব্যবহার করা হয় এবং সড়ক ডিজাইনে ক্রটি থাকায় সড়কের এই হাল। অন্যদিকে, সড়ক প্রকৌশলীরা ওভারলোডকে দায়ী করেন। তবে বেশকিছু অবকাঠামো বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই প্রযুক্তি দেশের সড়কে ব্যবহার করলে তখন আর বর্ষাকালেও সড়কের বেহাল দশা হবে না। এমনকি ওভারলোডেও সড়ককে তেমন ক্ষয়ক্ষতি থেকে বিরত রাখবে। ফজলে রব্বে আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে তার নেতৃত্বে ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ন্যানোপ্রযুক্তির কার্যকারিতা ও সম্ভাব্যতা নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা হয়েছে। রব্বের গবেষণায় সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তারা ২২ জেলার মাটি সংগ্রহ করেন এবং কে-৩১ এক্রিলিক পলিমারের সঙ্গে বিভিন্ন অনুপাতে মিশ্রিত করে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী এলাকায় পরীক্ষা করেন। মাতারবাড়ী কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণ অংশের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত দলনেতা হিসেবে কর্মরত আবুল হোসেন বলেন, তারা ব্যয় নিরীক্ষাও করেছেন এবং তারা দেখেছেন এটি অত্যন্ত বেশি ব্যয়সাশ্রয়ী।
রব্বে বলেন, এটি অত্যন্ত সস্তা, টেকসই এবং সহজ রাস্তা নির্মাণ পদ্ধতি এবং এক্রিলিক পলিমার মিশ্রণের জন্য বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উপযুক্ত। তিনি বলেন, এটি টেকসই ও সাশ্রয়ী নির্মাণ প্রযুক্তি এবং তিনি আরও উল্লেখ করেন, তার দলের সদস্যরা এটিকে বাংলাদেশ সড়ক প্রযুক্তি নামে নামকরণের প্রস্তাব করেছেন।
এই প্রযুক্তির ব্যবহারের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এছাড়া ভারত ও ভুটানও সড়ক নির্মাণে এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে।
প্রযুক্তি কৌশলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রব্বে বলেন, সনাতন নিয়মে ইট ও পাথর চিপ রাস্তার ভিত্তি এবং উপ-ভিত্তি তৈরিতে প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয় কিন্তু এক্রিলিক পলিমার ব্যবহারের কারণে এই প্রধান উপাদানের প্রয়োজন হবে না। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, মাটি এবং বালির সাথে মিশ্রিত করে এক্রিলিক পলিমার রাস্তার ভিত্তি (বেস এবং সাব-বেস) তৈরি করতে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়, যা প্রথাগত সড়ক অবকাঠামোর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, পাশাপাশি রাস্তার কার্পেটিংকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও রাস্তার উপরিভাগের স্তর তৈরিতে ব্যাপকভাবে পাওয়া প্লাাস্টিকের পানির বোতল, পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিটুমিনের মিশ্রণে যা ১৬০ থেকে ১৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মেশানো যেতে পারে। এটি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে বলেন তিনি।
এ বিষয়ে সওজের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান বলেন, আমরা গবেষণার ফলাফল দাফতরিক ভাবে গ্রহণ করেছি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুনঃপরীক্ষার মাধ্যমে আমরা এক্রোলিক পলিমারের কার্যকারিতা যাচাই করবো। এরপর আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের সঙ্গে সভার আয়োজন করবো এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাস্তা নির্মাণে যাব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
হামজা ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:৩৩ পিএম says : 0
দুর্নীতির জন্য করা শাস্তি ব্যবস্থা করা দরকার। তাহলে যদি দুর্নীতি বন্ধ হয়।
Total Reply(0)
হামজা ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:২৯ পিএম says : 0
যত প্রযুক্তি আসুক এ দেশে দুর্নীতি হবেই। কারণ সরকারের তৃণমূলের লোক ভালো না।
Total Reply(0)
হামজা ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:৩১ পিএম says : 0
আগে দুর্নীতি বন্ধ করার ব্যবস্থা করার দরকার, তারপরে এসব উদ্যোগ নিতে হবে। দুর্নীতি না বন্ধ কোনো প্রযুক্তিই সুফলতা আনবে না।
Total Reply(0)
আলিফ ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:৪১ পিএম says : 0
এ দেশ থেকে দুর্নীতি আগে না বন্ধ করলে দেশ কোনো ভাবেই উন্নত হবে না।
Total Reply(0)
কামরুজ্জামান শিশির। ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:৪১ পিএম says : 0
সরকার দেশের সকল ছোট বড় রাস্তায় এই প্রকল্প চালু করা উচিৎ।
Total Reply(0)
Swapan muhuri ১৬ জুলাই, ২০২২, ৬:২২ পিএম says : 0
জাইকা এবং সেনাবাহিনীর পদ্ধতি ব্যবহার করলে কাজ ভালো হবে এবং দুর্নীতি বন্ধ হবে।
Total Reply(0)
আলিফ ১৬ জুলাই, ২০২২, ১২:৩৯ পিএম says : 0
প্রযুক্তি বের করলেই কি দুর্নীতি কমবে, তখন আরো বাড়বে। এর আগে কিভাবে অসৎ ও দুর্নীতিবাজ লোক দল ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আছে, তাদের বের করতে হবে। পরে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন