কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান জুয়েলের হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রটির ছবি ভাইরাল হওয়ার পর শুক্রবার গভীর রাতে আগ্নেয়াস্ত্রটি মনিরুজ্জামান জুয়েলের স্ত্রী ফারজানা হক চৌদ্দগ্রাম থানায় জমা দিয়েছেন। শনিবার দুপুরে দৈনিক ইনকিলাবকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা। কিন্তু ঘটনার পর মনিরুজ্জামান জুয়েলের কোনো খোঁজ পাচ্ছেনা পুলিশ।
এ বিষয়ে ওসি বলেন, মনিরুজ্জামান জুয়েলের হাতে থাকা অস্ত্রটির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অস্ত্রটি থানায় জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করি। এরপর তার স্ত্রী ফারজানা হক শুক্রবার রাতে থানায় এসে ছাড়পত্র নিয়ে ৮৬ রাউন্ড গুলিসহ জার্মানির তৈরি ২ পয়েন্ট ২ বোর অস্ত্রটি আমাদের কাছে জমা দেন।
ওসি আরও বলেছেন, ভাইরাল হওয়া ছবিটি আগের, যখন শাহজালাল মজুমদারের সঙ্গে জুয়েলের ভালো সম্পর্ক ছিল, তখনকার। এ ধরনের অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, কাগজপত্রে তো দেখা গেছে এই অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে সরকার। লাইসেন্সকৃত অস্ত্রটি ২ পয়েন্ট ২ বোরের বলেও জানান তিনি। যেহেতু অস্ত্রটি মনিরুজ্জামান জুয়েলের লাইসেন্স করা, তাই আমরা তার পরিবারকে অস্ত্রটি থানায় জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করি। কেন অস্ত্রটি থানায় জমা দিতে বলা হলো এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, যদি কোনো বৈধ অস্ত্র বেআইনিভাবে প্রদর্শন করা হয় এবং বিষয়টি থানা প্রশাসনকে অবগত করলে অস্ত্রটি থানায় জমা নেওয়া যায়। এরই মধ্যে মনিরুজ্জামান জুয়েলের অস্ত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় জনমনে ভয়ভীতি ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তাই অস্ত্রটি জমা নেওয়া হয়। অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, আপাতত অস্ত্রটি জমা নিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে দেশের অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ জনগণের কাছে এ ধরনের অস্ত্র থাকতে পারে না বলে জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, কুমিল্লায় যুবলীগ নেতার হাতে যে অস্ত্রটি দেখা গেছে, সেটি সাধারণ মানের কোনো অস্ত্র নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অপরাধ দমনে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করে। কুমিল্লার মতো একটি প্রান্তিক এলাকায় এমন আধুনিক অস্ত্র আসা ও বীরে বেশে এর ব্যবহার ও প্রদর্শন সমাজে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করবে। বাংলাদেশের আইনি প্রেক্ষাপটে এ ধরনের অস্ত্রের লাইসেন্স সাধারণ মানুষকে দেওয়ার সুযোগ নেই।
চৌদ্দগ্রামের ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। কিন্তু সেখানে অস্ত্র প্রদর্শনের কোনো সাক্ষী বা ঘটনার প্রমাণ পায়নি বললেও, হামলার শিকার শাহজালাল মজুমদারের দাবি মনিরুজ্জামান জুয়েল অস্ত্র হাতে এ হামলার নেতৃত্ব দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অস্ত্রটি মনিরুজ্জামানের হাতে ছিল। জুয়েলের গাড়িতে সব সময় অস্ত্র থাকে দাবি করে শাহজালাল বলেন, এটা নিয়ে সে সব সময় ঘুরে। মিটিংয়ে গেলেও এটা নিয়ে যায়। মানুষকে ভয় দেখায়। তবে ঘটনার দু’ দিন অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাজালাল মজুমদার বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা করে লাভ নেই। আগামীকাল রোববার আদালতে মামলা করার প্রস্তুুতি নিয়েছি। এ বিষয়টি স্থানীয় এমপি ও সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে চৌদ্দগ্রামের ঘটনা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। যুবলীগের কেন্দ্রীয় দফতর থেকে ঘটনা নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহজালাল মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে দফতরে চিঠি পাঠাব। যুবলীগের দফতর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, এ ঘটনা নিয়ে আমাদের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক একটা সিদ্ধান্ত অবশ্যই জানাবেন। কারণ, যুবলীগ কোনো অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেয় না। আমাদের সংগঠনে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের স্থান নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন