দেশের দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রামে। উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রামের অর্ধেকের বেশি মানুষ বিভিন্ন রোগাক্রান্ত। এ জেলার ৫৪% মানুষ অতিদরিদ্র। চরম দারিদ্র্যে বসবাস করে কুড়িগ্রামের ৫৩.৯% মানুষ। এ জেলায় নদীভাঙন, খড়াও বন্যা বেশি হয়। বিভিন্ন রোগ নিয়ে ঘুরছেন কুড়িগ্রামের প্রায় ৫৭% মানুষ। কুড়িগ্রামের শতকরা ১৬.৭০% শতাংশ পরিবারের প্রধান নারী। সেখানে ভূমিহীন অবস্থায় রয়েছেন ৬০%। দিনমজুর হিসেবে জীবনযাপন করছেন ৩৭ দশমিক ২% বাসিন্দা। তবে জাতীয়ভাবে নারীপ্রধান পরিবার ১২.৫০%, ভূমিহীন ৮%। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে গত বছর শতভাগ ভাতা চালু করেছে। কর্মসংস্থানের জন্য গড়ে তোলা হয়নি কলকারখানা। একটি কটন মিল আছে, সেটিও ২০ বছর ধরে বন্ধ। একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু করেছে। তবে প্রান্তিক ও নিম্নআয়ের মানুষের ছেলে-মেয়ের সরকারি চাকরি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। এ জেলার জন্য আলাদা কোনো কোটা করা হয়নি এবং ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তাসহ সম্ভাব্য সবধরনের সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থাই হলো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী। এটা এমন একটি নিরাপত্তা বেড়াজাল যার মাধ্যমে সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। সংবিধানের ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা হয়েছে। কাগজে-কলমে এ খাতে প্রতি বছর বাজেট বরাদ্দ বাড়লেও প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ আরও কমে যায়। এ বছরের বাজেটেও তা ঘটেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও জিডিপির ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। কিন্তু এর মধ্যে শুধু পেনশনের বরাদ্দ বেড়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাই বাস্তবে এ খাতে বরাদ্দ কমেছে ৩ হাজার কোটি টাকা। এক কথায়, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য প্রস্তাবিত সামগ্রিক বরাদ্দ ২ শতাংশ বেড়েছে, সে তুলনায় পেনশনভোগীদের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে ২১.৪৮ শতাংশ। এ জেলার ছোট ছোট শিল্পকারখানা গড়ে তোলা, শতভাগ বেকার ছেলে-মেয়েদের চাকরি ব্যবস্থা, বিসিএসসে কোটা বৃদ্ধি এবং বন্যা ও নদীভাঙন রোধ এবং পদ্মার মতো তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি করেছেন জাতীয় পাটির কুড়িগ্রাম-২ আসনের এমপি পনির উদ্দিন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এসডিজি অর্জনে সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য রয়েছে এর একটি দারিদ্র্য দূর করা, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ করা। দুটি লক্ষ্যের দিকে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে গেছে। এলাকাভিত্তিক পোভার্টি ম্যাপিং এবং নিউট্রিশন ম্যাপিং করতে হবে, যাতে কোনো এলাকায় কী অবস্থা তা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের সেবাদান পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে, অর্থাৎ কুড়িগ্রামের যে ৭১ শতাংশ মানুষ দরিদ্র, তাদের সাহায্য দিতে হবে। আবার নারায়ণগঞ্জের ৩ শতাংশ মানুষ, এখানেও দরিদ্র ৩ শতাংশকে সাহায্য দিতে হবে।
এসব জেলার প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আরো বড় করার প্রত্যাশা থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার তেমন কোনো নিদর্শনা দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন টিআইবি।
বর্তমানে জনজীবনের ওপর চাপ রয়েছে। বাজেটে প্রত্যাশা ছিল নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হবে, কিন্তু দেওয়া হয়নি। উল্টো বিত্তবানদের কর কমানো হয়েছে দাবি করেছে, বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সম্প্রতি বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আরো বড় করার প্রত্যাশা থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার তেমন কোনো নিদর্শন দেখা যায়নি, বরং সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয়কে বড় করে দেখাতে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ, করোনার অভিঘাত উত্তরণে দেয়া ঋণের সুদ মওকুফকে অন্তর্ভুক্ত করে দেখানো হয়েছে। যেগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশই নয়! এমন বাস্তবতায় বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী কর্তৃক উল্লিখিত চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করার কার্যকর কৌশল নির্ধারণে বাস্তবসম্মত ও নিরপেক্ষ দিকনির্দেশনার জন্য সুখ্যাতি সম্পন্ন বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের জন্য বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটকে ঢেলে সাজানো উচিত।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্তমানে জনজীবনের ওপর চাপ রয়েছে। বাজেটে প্রত্যাশা ছিল নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হবে, কিন্তু দেওয়া হয়নি। উল্টো বিত্তবানদের কর কমানো হয়েছে। বাজেটে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে সুবিধা দেওয়ার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্যমতে, দেশের বর্তমান মোট জনসংখ্যার মধ্যে এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র, দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রামে। এ জেলার প্রতি ১০০ জনের ৭১ জনই দারিদ্র্যে। এর মধ্যে জেলার রাজীবপুর উপজেলার ৭৯ দশমিক ৮০ শতাংশ মানুষই দরিদ্র। এর পরে আছে বান্দরবানের থানছি উপজেলা। এখানে দারিদ্র্যের হার ৭৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। দেশের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাড়লেও উত্তরবঙ্গে দারিদ্র্য পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। করোনাভাইরাস পরবর্তীতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মধ্যে ২০২১ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২৫%। পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালেও দারিদ্র্যের হার ২৫% ছিল। দারিদ্র্য মানচিত্র প্রকাশ করে বিবিএস জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে থেকে কম গরিব মানুষের বসবাস ঢাকা নগরীর গুলশানে। এখানে দারিদ্র্যের হার মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। কুড়িগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি। রাজীবপুরের পরেই সবচেয়ে বেশি গরিব রৌমারিতে ৭৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এর পরে চিলমারিতে ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নাগেশ্বরীতে ৭২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, কুড়িগ্রাম সদরে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ, ভূরুঙ্গামারীতে ৭১ দশমিক ৯ শতাংশ, উলিপুরে ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ, রাজারহাটে ৭০ দশমিক ১ শতাংশ ও ফুলবাড়ীতে ৬৯ শতাংশ মানুষ গরিব। উত্তরবঙ্গের আরেক জেলা দিনাজপুরে প্রতি ১০০ জনে ৬৪ জনই দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে।
গতবছর ৩০ সেপ্টেম্বর বিআইডিএস প্রকাশিত ‘এক্সট্রিম পোভার্টি : দ্য চ্যালেঞ্জেস অব ইনক্লুশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক (ডিজি) ড. বিনায়ক সেন এ তথ্য জানান। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো জুলফিকার আলী ও বদরুন নেসা আহমেদ।
প্রতিবেদনে মূলত অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জেলা কুড়িগ্রামের সঙ্গে অন্যান্য জেলার দারিদ্র্যের হার, রোগব্যাধি সংক্রমণের হার এবং ভূমিহীনদের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি কুড়িগ্রামে। উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রামের অর্ধেকের বেশি মানুষ রোগাক্রান্ত। এ জেলার ৫৪ শতাংশ মানুষ অতিদরিদ্র। চরম দারিদ্র্যে বসবাস করে কুড়িগ্রামের ৫৩.৯ শতাংশ মানুষ। এ জেলায় রোগব্যাধিতে ভোগা মানুষও বেশি। রোগ নিয়ে ঘুরছেন কুড়িগ্রামের প্রায় ৫৭ শতাংশ মানুষ। কুড়িগ্রামের ১৬.৭০ শতাংশ পরিবারের প্রধান নারী। সেখানে ভূমিহীন অবস্থায় রয়েছেন ৬০ শতাংশ। দিনমজুর হিসেবে জীবনযাপন করছেন ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ বাসিন্দা। তবে জাতীয়ভাবে নারীপ্রধান পরিবার ১২.৫০ শতাংশ, ভূমিহীন ৮ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জে অতি দরিদ্রের হার শূন্য শতাংশ। এছাড়া মাদারীপুরে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ, মুন্সীগঞ্জে এক দশমিক ২ শতাংশ, ঢাকায় এক দশমিক ৭ শতাংশ, গাজীপুরে এক দশমিক শতাংশ। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ধরে গবেষণাটি করা হয়েছে। বর্তমানে মোট জনসংখ্যার মধ্যে এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ অতি দরিদ্র। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলো উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অতি দরিদ্রের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে বান্দরবান। সেখানে ৫০.৩ শতাংশ মানুষ অতি দরিদ্র। এছাড়া অতি দরিদ্র দিনাজপুরে ৪৫ শতাংশ, মাগুরায় ৩৭.৭ শতাংশ জামালপুরে ৩৫.৫ শতাংশ । বিবিএস উপজেলাভিত্তিক এই দারিদ্র্য মানচিত্র তৈরি করেছে। যাতে এসব ডেটা ব্যবহার করে দারিদ্র্য নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। দেশের ৪৯২টি উপজেলার সঙ্গে মেট্রোপলিটন এলাকার ৮৫ থানাকে উপজেলা হিসাব করে ৫৭৭ উপজেলার দরিদ্র মানুষের তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে এই মানচিত্রে।
নতুন অর্থবছরে, এমনকি ৫৭ লাখ বয়স্ক এবং বিধবা যারা বর্তমানে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা ভাতা পাচ্ছেন, তাদের ভাতার পরিমাণও বাড়ছে না। সাত বছর আগে নির্ধারিত এই ভাতায় যেসব পণ্য কেনা যেত, এখন তার দাম হবে অন্তত ৬৯১ টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিবন্ধীদের ভাতা ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হলেও অন্য কোনো ভাতা বাড়ানো হয়নি। একই সঙ্গে ৩ লাখ ৬৫ হাজার নতুন প্রতিবন্ধীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ২.০৯ লাখ উপকারভোগীযুক্ত করা হয়েছে। বাজেটের অংশ হিসেবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আনুপাতিক হারে বরাদ্দ কমেছে, তা ২.৭ শতাংশ থেকে ২.৩ শতাংশে নেমেছে। এই বরাদ্দ কমার বিষয়টা কল্যাণমূলক অবস্থান থেকে সরকারের সরে আসার শামিল। প্রান্তিক ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির খাদ্যের ৫০ শতাংশই চাল। ব্যয়ের বড় অংশই খাদ্যে যায়। মূল্যস্ফীতি দেখা দিলে মানুষ খাদ্যে কাটছাঁট করে। ফলে পুষ্টি গ্রহণ কমে যাবে এ শ্রেণির। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো বর্তমান পরিস্থিতির চাহিদার আলোকে হয়নি। মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার কারণে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সামাজিক সুরক্ষা ব্যয় যেখানে দ্বিগুণ করা দরকার, সেখানে বরাদ্দ অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। এই টাকায় সামাজিক সুরক্ষা কতটা দেওয়া সম্ভব সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। এমনিতেই আমাদের দেশে সবাই ভাতা পায় না। বয়স্ক ভাতার কথাই ধরা যাক। এই ভাতাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে পুরুষের বয়স সর্বনিম্ন ৬৫ বছর ও নারীদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৬২ বছর হতে হবে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশে বয়স্ক জনগোষ্ঠী সব মিলিয়ে ৭ শতাংশ। দেশে মোট জনসংখ্যা ১৮ কোটি ধরলেও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ২০ লাখের মতো। আর ভাতার পরিমাণ নিয়ে সমালোচনা তো আছেই। গত ৭ বছর ধরে তারা মাত্র ৫০০ টাকা করে ভাতা পেয়ে আসছেন। ভাতার টাকা বাড়েনি। অথচ আজ থেকে ৫ বছর আগে ৫০০ টাকা দিয়ে একজন বয়স্ক দরিদ্র ব্যক্তি যতটুকু খাবার ও ওষুধ কিনতে পারতেন এখন সেটা পারেন না। কেননা মূল্যস্ফীতির কারণে ওষুধের দামও বেড়েছে প্রতি বছর। তার মানে, প্রকৃত অর্থে ভাতার পরিমাণ কমে গেছে।
সামাজিক নিরাপত্তায় কম বরাদ্দের লজ্জা থেকে বাঁচতে অথবা বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা থেকে সরকার প্রতি বছর এ খাতে অতিরঞ্জন করে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে এমন কিছু খাত ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা আসলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সঙ্গে মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ না। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যে বৃত্তি দেওয়া হয়, সেটাকেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বলছে সরকার। আবার অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ, করোনার কারণে ব্যাংকের সুদ মওকুফ ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য সুদ ভর্তুকিকেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই চার বিষয়ে আগামী অর্থবছরে থাকছে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকার ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র (এনএসএসএস) করলেও অনেক ক্ষেত্রেই এর সঙ্গে চলমান সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী সংগতিপূর্ণ নয়। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ২০১৬ সালেই তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জানিয়েছিল যে দেশের ৬৪ শতাংশ দরিদ্র মানুষ সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচিগুলোর একটির সুবিধাও পায় না। বরাদ্দ কম, মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং সহায়তা পাওয়ার যোগ্যদের সবাই সহায়তা না পাওয়া হচ্ছে অন্যতম সমস্যা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন