রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গণশুনানি ও পূর্বঘোষণা ছাড়াই আবারও খুলনায় পানির দাম বাড়াল ওয়াসা

৭ বছরে ৬ দফা দাম বৃদ্ধি

খুলনা ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ২০১৫ সাল থেকে খুলনায় পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা। ওয়াসার পানির মান নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ থাকলেও প্রায়শঃ ভূ গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার গ্রাহক ওয়াসার সংযোগ গ্রহণ করেছেন। কোন প্রকার পূর্ব ঘোষণা বা গণশুনানি ছাড়াই গ্রাহক পর্যায়ে হঠাৎ আরেক দফায় পানির দাম বাড়িয়েছে ওয়াসা। এই নিয়ে গত ৭ বছরে ৬ দফায় বাড়ল পানির দাম। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। এদিকে, একদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, অন্যদিকে দফায় দফায় পানির দাম বৃদ্ধি-দুইয়ে মিলে চরম অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছেন নগরবাসী। কোন কিছু না জানিয়ে হঠাৎ এভাবে পানির দাম বাড়ানোতে তারা চরম ক্ষুব্ধ। অবশ্য খুলনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, সব ধরণের নিয়ম কানুন মেনেই পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।

খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, নতুন নির্ধারিত দরে আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানি ব্যবহারের জন্য দিতে হবে ৮ টাকা ৯৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক গ্রাহককে দিতে হবে ১৪ টাকা। এর সঙ্গে আছে সার্ভিজ চার্জ, ডিমান্ড চার্জ এবং ভ্যাট। সর্বশেষ মূল্য অনুযায়ী আবাসিক গ্রাহকদের পানির দাম ছিল প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ৯১ পয়সা এবং বাণিজ্যিক দর ছিল প্রতি ইউনিট ১০ টাকা। এ হিসাবে আবাসিকে পানির দর বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য দাম বেড়েছে ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

সূত্রটি আরও জানায়, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি ৪ টাকা ইউনিট ধরে পানির নতুন মূল্যতালিকা অনুমোদন করে ওয়াসা পরিচালনা বোর্ড। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি পানির দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে পানির দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৮০ পয়সা। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে পানির দাম আরও ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে ইউনিটপ্রতি মূল্য দাঁড়ায় ৫ টাকা ৭৬ পয়সা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আরও ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করে ওয়াসা। এতে প্রতি ইউনিট পানির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৬ টাকা ৯১ পয়সা। গত আড়াই বছর এই মূল্যই কার্যকর ছিল।

পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নগরবাসী। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, গ্রাহকদের মতামত ছাড়া ওয়াসা এভাবে পানির দাম বৃদ্ধি করতে পারে না। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট মানুষের ওপর অতিরিক্ত এই দাম মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো বিঁধবে। পানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে আমরা আন্দোলনে যাব। নগর বিএনপির তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এহেতেশামুল হক শাওন বলেন, জনগণের মতামত না নিয়ে এভাবে একটি সিদ্ধান্ত ওয়াসা কোনোভাবেই নিতে পারে না। এটি অন্যায়। সরকারি সিটি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ওয়াসার উচিৎ ছিল দাম বাড়ানোর বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। তারা গণশুনানি করতে পারতো। সাধারণ মানুষের মতামত নিতে পারতো। এভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে দাম বাড়ানোটা আমার দৃষ্টিতে অন্যায়। খুলনার সাংবাদিক নেতা সেখ ইউসুফ আলী বলেন, এটা ঠিক, যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিজের আয়ের উপরে দাঁড়াতে হবে, কিন্তু তাই বলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তা করা যাবে না। পানির অপর নাম জীবন। আমরা আশা করি ওয়াসা তাদের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। আল হেরা মাদরাসার সুপার মাওলানা এহসানুল হক বলেন, বাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে। সংসার চালাতে আমাদের এখন হিমশিম খেতে হয়। এ অবস্থায় পানির দাম বাড়ানোটা আমাদের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতই। খালিশপুর এলাকার ব্যবসায়ী আসলাম শেখ অবাক হয়ে বলেন, ‘পানির দাম বাড়ছে ? আমরা তো কিছুই জানি না। কবে থেকে বাড়ছে ?’

খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ জানান, পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব ওয়াসা বোর্ডে উত্থাপন করা হয় গত মে মাসে। নিয়ম অনুযায়ী সেবা খাতের দাম ২০ শতাংশের ওপরে বাড়ালে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। এজন্য মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গত জুন মাসে এই প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য শহরের তুলনায় খুলনা ওয়াসার পানির দাম কম। এই দাম দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যায় না। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। প্রতি বছরই এই ভর্তুকি কমছে। সর্বশেষ পানির মূল্যবৃদ্ধি ও নিজস্ব আয় না বাড়ালে ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এজন্য ওয়াসা বোর্ড সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন