শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশের অস্ত্রবাহী ইউক্রেনের কার্গো বিমান গ্রিসে বিধ্বস্ত

বিমানে ছিল সেনাবাহিনী ও বিজিবির জন্য কেনা মর্টার শেল : আইএসপিআর ইন্স্যুরেন্স থাকায় আর্থিক ক্ষতি হবে না : পররাষ্ট্র সচিব

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২২, ১১:৫৯ পিএম

সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশ আসার পথে সামরিক পণ্য বহনকারী বিমান কাভালার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে আটজন ক্রু সদস্য নিহত হয়েছেন। সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশ যাওয়ার পথে ইউক্রেনের একটি কার্গো বিমান গ্রিসে বিধ্বস্ত হলে আটজন ক্রু সদস্য নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন যে, তারা ব্যক্তিগতভাবে পরিচালিত অ্যান্টোনভে আগুন দেখেছেন এবং বিস্ফোরণ শুনতে পেয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, বিমানটি শনিবার গভীর রাতে গ্রীক শহর কাভালার কাছে পালেওচরি গ্রামে মাটিতে আঘাত করে একটি দৈত্যাকার আগুনের গোলায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সূত্র উদ্ধৃত করে আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোজসা স্টেফানোভিচ গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে, আমরা যে তথ্য পেয়েছি তা অনুযায়ী, ক্রুদের আট সদস্য দুর্ঘটনায় মারা গেছেন’। স্টেফানোভিচ বলেছেন, আন্তোনভ এন-১২ শনিবার রাত আনুমানিক ৮:৪০টায় একটি বেসরকারী সার্বিয়ান কোম্পানি ভ্যালির নিকট থেকে ‘প্রায় ১১ টন সামরিক শিল্পের পণ্য বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য দক্ষিণ সার্বিয়ার নিস বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আটজন ক্রু ইউক্রেনের নাগরিক। মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেনকো ফেসবুকে বলেছেন, ‘দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হল একটি ইঞ্জিনের অকার্যকারিতা’। বিমানটি পরিচালনাকারী ইউক্রেনীয় এয়ারলাইন মেরিডিয়ানের জেনারেল ডিরেক্টর ডেনিস বোগডানোভিচও জার্মান সম্প্রচারক ডয়চে ভেলেকে বলেছেন যে, ক্রুরা সবাই ইউক্রেনীয়।
একটি স্থানীয় চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজে একটি মাঠের ওপর আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে এবং বিমানটি একটি বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

রাষ্ট্র-চালিত টিভির মতে, সেনাবাহিনী, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং গ্রীক পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মীরা এলাকাটিকে নিরাপদ বলে মনে করার পরে যোগাযোগ করবে, কারণ পণ্যসম্ভারের বিষাক্ততার ভয় তাদের দূরে থাকতে বাধ্য করেছিল।
ফায়ার ব্রিগেড কর্মকর্তা মারিওস অ্যাপোস্টোলিডিস সাংবাদিকদের বলেছেন: ‘ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা বিশেষ সরঞ্জাম এবং পরিমাপ যন্ত্রের সাথে বিমানের আঘাতের বিন্দুতে পৌঁছেছিল এবং মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফুসেলেজ এবং অন্যান্য অংশগুলো ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছিল’।

এলাকাটি নিরাপদ বলে বিবেচিত হলে অনুসন্ধান দলগুলো পরবর্তী কার্যক্রমে যাবে, তিনি যোগ করেছেন।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে তীব্র গন্ধ বের হওয়ায় পৌরসভা, পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সমন্বয় কমিটি পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। তাদের সারা রাত জানালা বন্ধ রাখতে বলা হয় এবং তাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার এবং মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট নিয়ে গতকাল রোববার ভোরে দুই দমকলকর্মীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্থানীয় এক ব্যক্তি গিওরগোস আরকোন্টোপোলোস রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক ইআরটি টেলিভিশনকে বলেছেন, বিমান থেকে শব্দ শোনার সাথে সাথে তিনি অনুভব করেন, কিছু ভুল হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘২২:৪৫টায় আমি বিমানের ইঞ্জিনের শব্দে অবাক হয়েছিলাম’। ‘আমি বাইরে গিয়ে দেখলাম ইঞ্জিনে আগুন লেগেছে’।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, সাতটি ফায়ার ইঞ্জিন দুর্ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়, কিন্তু ক্রমাগত বিস্ফোরণের কারণে তারা কাছে যেতে পারেনি।

বিমানে ছিল সেনাবাহিনী ও বিজিবির জন্য কেনা মর্টার শেল
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশে আসার পথে গ্রিসের কাভালা শহরে যে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবির জন্য কেনা মর্টার শেল ছিল বলে। রোববার আইএসপিআরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ দৈনিক ইনকিলাবকে এ তথ্য জানান।

সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কার্গো বিমানটি সাড়ে ১১ টন অস্ত্র বহন করছিল। এর মধ্যে ছিল মর্টার ও প্রশিক্ষণের জন্য গোলা। এসব অস্ত্র সার্বিয়ার তৈরি। এ মালামালের ক্রেতা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
গতকাল আইএসপিআরের পরিচালক আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বলেন, প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর (ডিজিডিপি) ক্রয় চুক্তির আওতায় কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জন্য ক্রয়কৃত প্রশিক্ষণ মর্টার শেল বহনকারী একটি বিমান গ্রিসে বিধ্বস্ত হয়েছে। আইএসপিআর জানায়, ‘ওই চালানে কোনো অস্ত্র ছিল না এবং চালানটি বিমার আওতাভুক্ত।’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রিস কর্তৃপক্ষ কার্গো ও ক্রুদের সম্পর্কে তথ্য দিতে পারেনি। বিশেষ উদ্ধারকারী ও সেনা বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে গেছেন। স্থানীয় লোকজনকে ওই এলাকায় যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোজসা স্টেফানোভিক রয়টার্সকে বলেন, ‘কার্গোতে মর্টার শেল ও ট্রেনিং শেল ছিল। এটি সার্বিয়ার নিস শহর থেকে শনিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৪০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। এ কার্গোর মালিক সার্বিয়ার কোম্পানি ভালির। এটি বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে সামরিক ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও রয়েছে।

গ্রিসের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইআরটি বলছে, ইঞ্জিন সমস্যার কথা জানিয়ে গ্রিসে জরুরি অবতরণের জন্য অনুরোধ জানানোর পরপরই কার্গো বিমানটির সঙ্কেত বন্ধ হয়ে যায়। একজন স্থানীয় বাসিন্দা আইমিলিয়া সাপ্টানোভা ইআরটিকে বলেন, ‘আমি ভাবছি কীভাবে এটা আমাদের বাড়িতে পড়ল না। ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল চারদিক। এমন শব্দ করছিল, যা বর্ণনা করার মতো নয়। এটি পাহাড়ের ওপর দিয়ে চলে যায় এবং ভূমিতে বিধ্বস্ত হয়।’

ইন্সুরেন্স থাকায় আর্থিক ক্ষতি হবে না : পররাষ্ট্র সচিব
উত্তর গ্রিসের কাভালা শহরের কাছে বিধ্বস্ত বিমানে যেসব অস্ত্র ছিল তার ইনস্যুরেন্স থাকায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি। মাসুদ বিন মোমেন জানান, আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে এসব মর্টার শেল কেনা হয়। চালানটি বিমার আওতাভুক্ত। ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হবে না। কিন্তু ইউক্রেনের কার্গোতে কেন মর্টার শেল আনা হচ্ছিল বা কোনো উদ্দেশে ধ্বংস করা হয়েছে কি না তা বাংলাদেশ খতিয়ে দেখবে বলেও জানান তিনি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ইউক্রেন, সার্বিয়া বা জর্ডানের কাছ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Mosharof Habib ১৮ জুলাই, ২০২২, ৬:১২ এএম says : 0
সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এই বিমান বিধ্বস্ত করার ভিতরে পার্শ্ববর্তী দেশের কোনো হাত আছে কিনা দেখতে হবে ৷
Total Reply(0)
Ikramul Islam Biswas ১৮ জুলাই, ২০২২, ৬:১৩ এএম says : 0
এসব অস্ত্র সিমান্ত নিরাপত্তার জন্য খুবই জরুরি ছিল। খুবই দুঃখজনক ঘটনা
Total Reply(0)
Nur Uddin Shah ১৮ জুলাই, ২০২২, ৬:১৪ এএম says : 0
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য সমরাস্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুবই দুঃখজনক। ১১ টনের অস্ত্র র চালান বহনকারী বিমানের দূর্ঘটনা কে স্বাভাবিক ভাবে নানিয়ে রাষ্ট্রীয় ভাবে গুরুত্বের সাথে দেখা উচিৎ
Total Reply(0)
Hiru Miah ১৮ জুলাই, ২০২২, ৬:১২ এএম says : 0
খুব দুঃখজনক সংবাদ।
Total Reply(0)
Md Nurullah ১৮ জুলাই, ২০২২, ৬:১২ এএম says : 0
বিষয়টি দুঃখজনক । উন্নত বাংলাদেশ মানে দুর্বল বাংলাদেশ নয়। দেশ উন্নত হওয়ার পাশাপাশি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও উন্নত হতে হয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য ক্রয়কৃত নিরাপত্তা সামগ্রী ধ্বংস হতে দেখে যাদের খারাপ লাগে না, তাদের দেশাত্মবোধ বা দেশপ্রেমের ঘাটতি রয়েছে । দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের বিষয়টি রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে দেখা সুস্থ মানুষের কাজ নয়।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন