কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে লকডাউন জারি হয় মালয়েশিয়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশী শ্রমিক নিয়োগের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। লকডাউন তুলে দেয়া হলেও শ্রমিক সঙ্কট এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশটি। নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিক নিয়োগ বাড়াতে মালয়েশিয়ার সরকারকে পুরনো কৌশল অবলম্বন করার তাগিদ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। এ বিষয়ে সোসিও-ইকোনমিক রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক লি হাং গুই বলেন, প্লান্টেশনসহ অন্যান্য খাতে শ্রমিক নিয়োগ বাড়ানোর পথ এখন ম্যানপাওয়ার অ্যান্ড রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম। মূলত এ প্রকল্পের মাধ্যমে অনুমোদন ছাড়া যে বিদেশী শ্রমিকরা এসেছেন তাদের বৈধতার সুযোগ দেয়া হয়। গত বছরের নভেম্বরে ২ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি অবৈধ বিদেশী শ্রমিক এ প্রকল্পে নিবন্ধন করেন। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার জন শ্রমিকই কৃষি আবাদ খাতের। মালয়েশিয়ার মোট দেশীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশই কৃষি আবাদ খাত থেকে আসে। বিশেষ করে পাম অয়েল এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। শ্রমিক সঙ্কটের প্রভাব পড়বে দেশীয় ব্যবসাগুলোর ওপর। এমনটাই আশঙ্কা করছেন সেন্টার ফর মার্কেট এডুকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কারমেলো ফারলিটোর। তিনি জানান, অতি সত্বর শ্রমিক চাহিদা পূরণ করতে না পারলে ব্যবসাগুলো দুর্ভোগের শিকার হবে। এর পরিণাম ভোগ করবেন সাধারণ ভোক্তারাও। শ্রমিকস্বল্পতার কারণে ব্যবসাগুলোর মধ্যে প্রতিযোগী মনোভাবে ভাটা পড়বে। এতে করে পণ্য ও পরিষেবার ব্যয় অব্যাহতভাবে ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। এমনকি ব্যবসা বন্ধের হুমকিও থাকবে। কৃষি আবাদ খাত ব্যতিরেকে শিল্পোৎপাদন খাতে এখনো ছয় লাখ শ্রমিকের সঙ্কট রয়েছে মালয়েশিয়ায়। পাশাপাশি শ্রমিক সঙ্কট দেখা যাচ্ছে নির্মাণ খাতেও। সংশ্লিষ্ট খাতে বর্তমানে ৫ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিক সঙ্কট বিদ্যমান। এদিকে শ্রমিক সঙ্কট সব থেকে বেশি জাঁকিয়ে বসেছে চিপ প্রস্তুতকারকদের মধ্যে। বিশ্ববাজারে ব্যাপক পরিমাণে চিপ রফতানির কারণে খ্যাতি আছে মালয়েশিয়ার। তবে সাম্প্রতিক শ্রমিক সঙ্কটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন দেশটির চিপ ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট খাতটিতে বর্তমানে ১৫ হাজার শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ গ্লাভস উৎপাদনকারী দেশ মালয়েশিয়া। শ্রমিক সঙ্কটের ফলে হুমকির মুখে রয়েছে দেশটির মেডিকেল গ্লাভস প্রস্তুতকারকরাও। সংশ্লিষ্ট খাতটিতে এখনো ১২ হাজার শ্রমিকের সঙ্কট চলছে। কভিডের প্রকোপ শ্রমবাজারের প্রতিকূল অবস্থার কারণে মালয়েশিয়ার শীর্ষ শিল্প খাতগুলো তাদের অতীত গৌরব হারাতে চলেছে। ক্রমে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে শ্রমিক সঙ্কট। অনেক ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ছে। দ্রুত এর সমাধান খুঁজে না পেলে শ্রমিকস্বল্পতাই দুর্দিন বয়ে আনবে দেশটিতে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। নিক্কেই এশিয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন