ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রধান ফটক সংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমীন হোসেন। তারা উভয়ই ছাত্রলীগ নেতা শাহাজালাল সোহাগের কর্মী বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী মামুন শেখ বলেন, আমি জয়পুরহাট থেকে খুলনায় ট্রাকে করে সরিষার তেলের কন্টেইনার নিয়ে যাচ্ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গাড়ির চাকা পাঙচার হওয়ায় চাকা ঠিক করার জন্য গাড়ি থামাই। এসময় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দুই ছাত্র বাইক নিয়ে আসেন। তারা আমাদের কাছে প্রথমে গাঁজা আছে কিনা জানতে চান। পরে আমাদের কাছে গাঁজা নেই বললে তারা টাকা দাবি করে। এসময় তাদেরকে পাঁচশত টাকা দিতে চাইলে তারা বলেন আমাদের কী ফকির মনে হয়? এসময় তারা গালি দিয়ে বলে, দশ হাজার টাকা দিবি এবং আমাদের মারধর শুরু করে। এসময় কাব্য নামের ছেলেটা জোরপূর্বক আমার মানিব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা এবং গাড়ির চাবি নিয়ে নেয়। দশ হাজার টাকা না পেয়ে তারা গাড়ি পেছনে গিয়ে জোরপূর্বক দরজা খুলে তেলের ড্রাম নামাতে থাকে। এসময় স্থানীয় লোকজন উপস্থিত হলে তারা টাকা ও চাবি নিয়েই চলে যায়।
পরে প্রধান ফটকে থাকা নিরাপত্তাকর্মী বিষয়টি সিকিউরিটি অফিসার আব্দুস সালাম সেলিমকে জানালে তিনি সেখানে আসেন। এসময় তিনি বিষয়টি প্রক্টরিয়াল বডিকে অবহিত করেন। দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পরও চাবি বা টাকা ফেরত না পেয়ে ইবি থানার পুলিশের সহযোগিতা চান ভুক্তভোগীরা।
দায়িত্বরত এস আই সাইফুল ঘটনা শোনেন এবং সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলামকে ফোন দেন। ফোনে তিনি রাতে চাবি উদ্ধার করতে বিভিন্ন নিয়মনীতি মেনে হলে ঢুকতে হবে এবং সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন।
ড্রাইভার মামুন আরো বলেন, আমার গাড়ি থেকে তেল পড়ে গেলে আরও বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। এসময় তিনি পুলিশের সহযোগিতায় রাস্তায় চলমান অন্য গাড়ির চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে চলে যান।
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য বলেন, গাড়িটি দ্রæত গতিতে এসে ক্যাম্পাসের মেইনগেটের সামনে দাঁড়ায়। এর কারণ জানতে চাইলে ড্রাইভার বলেন, গাড়িটির চাকা পাঙচার হয়েছে ঠিক করার জন্য দাঁড়িয়েছি। পরে ড্রাইভারের আইডি কার্ড বা লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলাম।
টাকা ছিনতাই, চাবি নেওয়া বা কন্টেইনার খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তবে ড্রাইভারের চোখেমুখে ভয় দেখে, তার কাছে জানতে চাইলাম ভিতরে কী জিনিস আছে দেখা? এসময় চাবি নিয়ে কন্টেইনার খুলে ভিতরে সরিষার তেল দেখে আমরা চলে আসছিলাম।
কাব্য আরো বলেন, গাঁজার চেয়ে বড় বড় জিনিসের বয়স পার করে আসছি। গাঁজা আমার কাছে কোন ফ্যাক্ট না। টাকা থাকলে ক্যাম্পাসেই এর চেয়ে বড় বড় জিনিস পাওয়া যায়। আর আমি ওদের কাছে গাঁজা চাইব কেন? ওরা কী গাঁজার ডিলার?
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত কাব্য ওই ট্রাকে ছিনতাইয়ের আগে কাব্য ও তার সহযোগিরা আরো একটি ট্রাক থামিয়ে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে সিকিউরিটি অফিসার আব্দুস সালাম সেলিম বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর নামে এর আগেও মাদক সেবনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাকর্মীরা যখন আমাকে তাদের নাম জানায়, তৎক্ষণাৎ আমি সেখানে উপস্থিত হই। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা ততক্ষণে স্থান ত্যাগ করে। পরে যেহেতু ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা সেহেতু ড্রাইভারকে থানায় জানানোর পরামর্শ দিয়ে চলে আসছিলাম।

এ বিষয়ে শাহজালাল সোহাগ বলেন, আমি তো ক্যাম্পাসের কোন নেতা না। আমি কেন কারও দায়িত্ব নেব? আর এ বিষয় সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। অভিযোগ থাকলে প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে। আমার কিছু করার থাকলে আমি করব।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘটনাটি ক্যাম্পাসের বাইরে ও গভীররাতে হওয়ায় প্রক্টরিয়াল বডির কেউ উপস্থিত হতে পারেন নি। তবে আমাদের সিকিউরিটি অফিসার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমি ইবি থানার ওসির সাথে কথা বলেছি। ভুক্তভোগী ড্রাইভার থানায় অভিযোগ করলে তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।