পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দাম কমলেও ঢাকাসহ সারাদেশের খুচরা বাজারে কমেনি হ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নির্ধারণ করে দিয়ে খালাস; বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের পদক্ষেপ নেই
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের খুচরা বাজারের বিক্রেতারা ভোজ্যতেলের সরকারের বেঁধে দেয়া দাম মানছেন না। এখনো বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি বেশি দামে তেল কেনা হয়েছে; তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। অথচ গত মে মাসে প্রতিলিটার সয়াবিনের দাম ৩৮ টাকা বৃদ্ধি করার ঘোষণা দেয়ার আগেই খুচরা বাজারে ভোগ্যতেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, মার্চ মাসে লিটারে ৫ টাকা তেলের দাম বৃদ্ধি করার সময়ও খুচরা বাজারে সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়। এমনকি বাণিজ্য মন্ত্রীর অদূরদর্শি বক্তব্য ‘সয়াবিদের দাম ঈদের পরে সমন্বয় করা হবে’ ঘোষণার পর ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই দেশের খুচরা বাজারে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গিয়েছিল সয়াবিন তেল।
বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম কমে যাওয়ায় কয়েকদিন আগে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ৬ টাকা কমানো হয়। কিন্তু বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। খুচরা বাজারে কোনো বিক্রেতাই দাম কম নেননি। গতকালও রাজধানীর কয়েকটি বাজার পরিদর্শন করে দেখা যায়, কোথাও সয়াবিনের দাম কমেনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তা কার্যককে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। ভোক্তাদের অভিযোগ তাদের জিম্মি করে বেশি দাম আদায় করা হচ্ছে।
বাজার পরিদর্শকরা বলছেন, সয়াবিনসহ দেশের পণ্যের মূল্য কমানোর ঘোষণা দিয়েই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব শেষ করছে। বাজারে তেমন মনিটরিং না থাকায় খুচরা বাজারে বিক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে। ফলে ভোক্তারা বাধ্য হযেই বেশি দামে ভোগ্যতেল কিনছেন। ভোক্তাদের জিম্মি দশা থেকে রক্ষায় লোক দেখানো ভ্রাম্যমাণ আদালত ও অভিযানের পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা জানিয়েছে সংগঠনটি। এর আগে বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে দেওয়া এক চিঠিতে নতুন এ মূল্য কার্যকরের বিষয়টি জানানো হয়।
সংগঠনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় বাজারে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তমতে ভোজ্যতেলের মূল্য নিম্নোক্তভাবে সমন্বয় করা হলো।
নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ এবং পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি পাম অয়েলের দামও ৬ টাকা কমানো হয়েছে। পাম অয়েলের নতুন দাম লিটারপ্রতি ১৫২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট কমে যাওয়ার প্রভাবে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম কমে গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জে সয়াবিন তেলের দাম মণপ্রতি কমেছে ২৫০ টাকা। আর পামওয়েলের দাম কমেছে মণপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে প্রতিমণ ৪০ কেজির পরিবর্তে হিসাব করা হয় ৩৭ দশমিক ৩২ কেজি।
খাতুনগঞ্জে তেলের অন্যতম শীর্ষ পাইকারি ব্যবসায়ী আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ বলেন, খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৩০০ টাকায়, আর পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪০০ টাকায়। পামওয়েল এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কমেছে। আর সয়াবিন তেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে ২৫০ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট কমছে। বুকিং রেট কমার কারণেই তেলের দাম কমেছে। বুকিং করা মালগুলো দেশে এলে তেলের দাম আরও কমে আসবে।
এদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়াতদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে। এখানে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্য বেচাকেনা হয়। ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাওয়ায় এখানেও কমেছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে এখানেও বাড়বে। তবে খুচরা বাজারে এখনও তেলের দাম তেমন কমেনি। গত একমাস ধরে খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম কমছে। পাইকারিতে পামওয়েল মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৩৮০ টাকায়। আর সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৩৫০ টাকায়। সামনে ভোজ্যতেলের দাম কমার সম্ভাবনা আছে। আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে কমে গেলে এখানেও আরো কমবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন