রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খুলনায় পুলিশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ

একের পর এক ঘটনা ও দুর্ঘটনা

ডি এম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

খুলনার প্রতিটি মানুষের জানমাল রক্ষায় রাতদিন কাজ করে চলেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষাসহ একের পর এক অভিযানে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার, অপরাধী গ্রেফতার, বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে বিশেষ সফলতা দেখিয়ে চলেছে খুলনা মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশ। পাশপাশি কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা পুলিশের ইমেজকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। পুলিশ সদস্যরা জড়িয়ে পড়ছেন ধর্ষণ, মাদক বিক্রির মত গুরুতর অপরাধের সাথে। বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের প্রকাশ্য সখ্যতা এবং নৈতিক স্খলনজনিত ঘটনাও ঘটছে। এসকল অভিযোগের বিষয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। আবার কিছুক্ষেত্রে নিশ্চুপ রয়েছে। ফলে দিনে দিনে খুলনায় পুলিশের প্রতি আস্থা সঙ্কটও তৈরি হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত দুই জুলাই খুলনা মহানগরীতে মাদকদ্রব্য বিক্রির সময় ডিবির অভিযানে ৪ পুলিশ কনস্টেবল গ্রেফতার হয়। এ ঘটনায় কেএমপির সোনাডাঙ্গা ও দৌলতপুর থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। তাদের গ্রেফতারের পর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেননি। গত ৪ জুন নানা অনিয়মের অভিযোগে কেএমপির খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রবীর কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে রাস্তায় ঝাড়ু মিছিল করে এলাকাবাসী। একপর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ ও সমাবেশ করেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং পরদিন তাকে বদলি করে দেয়া হয়।
গত ২২ মে দুদকের মামলায় আদালত জামিন নামঞ্জুর করে খুলনার বটিয়াঘাটার সাবেক ওসি আবু বকরকে সস্ত্রীক কারাগারে প্রেরণ করে। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক খুলনা গত বছরের ৯ নভেম্বর মামলা করে। গত ১৫ মে ধর্ষষের অভিযোগ ওঠে পিবিআই খুলনার পরিদর্শক মাসুদের বিরুদ্ধে। এক কলেজছাত্রী এ অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। উচ্চ আদালতের ১৫ দিনের জামিন শেষে তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। জামিনে থাকা অবস্থায় পরিদর্শক মাসুদ ধর্ষণের ঘটনাটি সাজানো ও তারই এক পুলিশ সহকর্মীর ষড়যন্ত্র বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন।
গত ২০ জুলাই খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিশনাল ডেপুটি কমিশনার খন্দকার লাবণী মাগুরায় আত্মহত্যা করেন। সেদিনই তার সাবেক বডিগার্ড কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান নিজের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। দুটো আত্মহত্যার ঘটনায় পরষ্পর কোনো যোগসূত্র রয়েছে কী না তা জানা যায়নি। এ সকল ঘটনা যেমন পুলিশের ইমেজকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে, একইভাবে দু’বছর আগে আত্মহত্যা করার জন্য একজন নারী সার্জেন্টের রূপসা ব্রিজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার এক বিবাহিত স্কুল শিক্ষকের সাথে খুলনার নারী কনস্টেবলের প্রণয় ও বিচ্ছেদ, নৈশকালীন টহলে পুলিশের চাঁদা আদায়, মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা গ্রহণ, একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার রাজনৈতিক নেত্রীর মত আচরণ এবং কয়েক বছর আগে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার করা মাদক বিক্রি ও পৃষ্ঠপোষকতার তালিকায় খুলনায় কর্মরত একাধিক পুলিশ সদস্যের নাম আসায় বিষয়গুলো ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে ও এখনো হচ্ছে।
কয়েক বছর আগে সরকারের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা খুলনার মাদক বিক্রেতা ও এর পৃষ্ঠপোষকদের ৩৪৬ জনের নামের একটি তালিকা করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়। পরে সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খুলনার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়। সেই তালিকায় খুলনা মেট্রাপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের ওসি, এসআই কনস্টেবলসহ ৩৪ জনের নাম ছিল। গোপনীয় হলেও একপর্যায়ে তালিকাটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্তৃপক্ষের কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা আর শোনা যায়নি। অন্যদিকে, খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় কমপক্ষে ৪০ জন পুলিশ কর্মকর্তার আলিসান বাড়ি জনমনে পুলিশের প্রতি নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে। খুলনার খালিশপুর থানার একজন সাব ইন্সপেক্টরের ব্যাপক চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি কয়েকজন ভুক্তভোগী। কেএমপির ৮ থানার মধ্যে দুটি থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ বেশ জোরেশোরেই শোনা যায়।
খুলনায় পুলিশের উপর গুরুতর অভিযোগ এনেছেন বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তাদের ভাষ্যমতে, সারাদেশে পুলিশ যেমন সরকারের পেটোয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করছে, খুলনায় তাদের এ কাজে উৎসাহ সবচেয়ে বেশি। যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের সাথে মিলে পুলিশ এখন নগ্নভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে। এ দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল।
খুলনার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অধিকাংশই পুলিশের আচরণে সন্তুষ্ট না। তারা বলেন, রাস্তায় যে সার্জেন্টরা গাড়ি আটকে কাগজপত্র পরীক্ষা করেন, কাগজ না থাকলে জরিমানা করেন, তাদের নিজেদের মোটরসাইকেলেরই কোন রেজিস্ট্রেশন থাকে না। থানায় পুলিশের মাধ্যমে কোন অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হলে পুলিশকে টাকা দিতে হয়। কোন অভিযোগের তদন্তে গেলে পুলিশকে টাকা দিতে হয়। প্রায়শই তারা সাধারণ মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহারও করে থাকেন। অবশ্য, তারা এও বলেছেন, পুলিশের মাঝে ভালো কিছু কর্মকর্তাও রয়েছেন, যাদের মন থেকে শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করে।
নানা অভিযোগের বিষয়ে কেএমপি ও জেলা পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো প্রকার মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Mehrin Shimu ২৩ জুলাই, ২০২২, ৭:২৬ এএম says : 0
সঠিক ও সাহসী প্রতিবেদন। ধন্যবাদ ইনকিলাব
Total Reply(0)
Mahbub Alam Kazal ২৩ জুলাই, ২০২২, ৭:২৬ এএম says : 0
শুধু খুলনায় কেন,সারা বাংলাদেশে পুলিশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ।
Total Reply(0)
Jalil Ahamed Chowdhury ২৩ জুলাই, ২০২২, ৭:২৭ এএম says : 0
মেধাবী পুলিশ অফিসার চাই।
Total Reply(0)
Tuhin Ahamed ২৩ জুলাই, ২০২২, ৭:২৮ এএম says : 0
সময় উপযোগী সংবাদ।
Total Reply(0)
Md Kawsar Hossen ২৩ জুলাই, ২০২২, ৭:২৯ এএম says : 0
পুলিশ সদস্যদের গুরুতর অপরাধেও কখনো কখনো সামান্য শাস্তিও দেয়া হয়না। বদলি, প্রত্যাহার বা সাময়িক বরখাস্তের একটা আইওয়াশ চলে মাত্র। এতে দিন দিন তাদের অপরাধ প্রবণতায় একটা ইতিবাচক মনোবল তৈরি হচ্ছে। এ কারনেই ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করছে তারা।
Total Reply(0)
Moni Jaman ২৩ জুলাই, ২০২২, ৭:২৯ এএম says : 0
অসাধারণ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাহসী লেখনি। ধন্যবাদ আপনাকে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন