শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

কোরআনের বর্ণনায় চাঁদ-সূর্য

মো. জোবাইদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

চাঁদ-সূর্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এক আশ্চর্যকর সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীকে সূর্যের আলো দিয়ে আবাদ করেছেন, করেছেন মানুষের বাসোপযোগী। সূর্যের আলো ছাড়া পুরো পৃথিবীই অন্ধকারে থাকত। আল্লাহ তায়ালা দিনে সূর্যের আলো দিলেন, রাতে দিলেন চাঁদের আলো। কিন্তু তা সূর্যের আলোর মতো নয়। সূর্যের আলোর তেজস্বীতা, প্রখরতা চাঁদের আলোতে নেই। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের অসংখ্য জায়গায় বিভিন্নভাবে চাঁদ-সূর্যের বর্ণনা দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আল্লাহ এমন, যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান এবং চাঁদকে আলোকময় বানিয়েছেন এবং ওর (গতির) জন্য মানযিলসমূহ নির্ধারিত করেছেন যাতে তোমরা বছরসমূহের সংখ্যা ও হিসাব জানতে পার; আল্লাহ এসব বস্তু অযথা সৃষ্টি করেননি, তিনি এই প্রমাণসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন ঐসব লোকের জন্য যারা জ্ঞানবান। (সুরা ইউনুস-৫)।

চন্দ্র-সূর্য সবকিছুই আল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নির্দিষ্ট নিয়মে আল্লাহ এগুলোকে পরিচালনা করেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহই উর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়মাধীন করলেন; প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে, তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা তোমাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার। (সুরা রাদ-২)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চাঁদকে, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে। (সুরা ইব্রাহিম-৩৩)।

আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে চাঁদ-সূর্য তাদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন করে। একটি অন্যটিকে অতিক্রম করে যায়না এবং আল্লাহ পর্যায়ক্রমে দিন-রাতের আগমন ঘটান। সুরা ইয়াসিনে আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, এবং সূর্য ভ্রমণ করে ওর নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মানযিল, অবশেষে ওটা শুষ্ক বক্র পুরাতন খেজুর শাখার আকার ধারণ করে। সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এরং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটে। (সুরা ইয়াসিন : ৩৮-৪০)।

সূর্যের আলো ফুটে উঠার সাথে সাথেই পৃথিবীতে দিন শুরু হয়। আবার সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় হতে অন্ধকার হয়ে রাত নেমে আসে। নামাজের সময় নির্ধারণেও সূর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে এবং কায়েম করবে ফাজরের কুরআন পাঠও। কারণ ভোরের কুরআন পাঠ সাক্ষী স্বরূপ। (সুরা ইসরা-৭৮)। হযরত জুলকারনাইন (আ) সমগ্র পৃথিবী শাসন করা মুসলিম শাসকদের একজন ছিলেন। কুরআনে তাঁর কিছু ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে সূর্য সম্পর্কে তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, চলতে চলতে যখন সে সূর্যের অস্তগমন স্থানে পৌঁছল তখন সে সূর্যকে এক পংকিল পানিতে অস্ত যেতে দেখল এবং সে সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল; আমি বললাম, হে জুলকারনাইন! তুমি তাদেরকে শাস্তি দিতে পার অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার। অতঃপর যখন সে সূর্যকে উদ্ভাসিত দেখতে পেল তখন সে বলল, এটিই আমার রাব্ব! এটি বৃহত্তর। অতঃপর যখন ওটা ডুবে গেল তখন বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের শিরকের সাথে আমার আদৌ কোন সম্পর্ক নেই, আমি মুক্ত। (সুরা কাহাফ ৮৬-৮৭)।

আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা. কে সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পরে অর্থাৎ সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর প্রশংসা করার জন্য বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, সুতরাং তারা যা বলে সে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং রাতে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, আর দিনের প্রান্তসমূহে যাতে তুমি সন্তষ্ট হতে পার। (সুরা ত্বহা-১৩০)। চাঁদ-সূর্য আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির অন্যতম আশ্চর্যকর নিদর্শন। চাঁদ-সূর্যের দিকে আমরা যখন তাকাই তখন আমাদের মন বলে উঠে চাঁদ-সূর্য আমার মহান রবের কতইনা আশ্চর্যকর সৃষ্টি!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন