শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মিসওয়াক আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়

আবরার নাঈম | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

মিসওয়াক আরবি শব্দ। যার বাংলা হলো, গাছের ডাল বা শিকড়। যা দিয়ে দাঁত মাজা ও পরিস্কার করা হয়। দাঁত মাজাকেও মিসওয়াক বলে। মিসওয়াক করার উদ্দেশ্য কী? হাদিসে পাকে বলা হয়েছে, মিসওয়াক করার উদ্দেশ্য হলো মুখ পরিস্কার করা। আর মিসওয়াক এর মাঝে মূলত দুটি সুন্নত। এক. মুখ পরিস্কার করা। দুই. গাছের ডাল হওয়া। সুতরাং কারো কাছে যদি গাছের ডাল না থাকে, আর সে অন্য কিছু দিয়ে মুখ পরিস্কার করে নেয়, তাহলে একটি সুন্নত আদায় হবে। যেমন— ব্রাশ, হাতের আঙ্গুল, শুকনো কাপড় ইত্যাদি

মিসওয়াক কোন জিনিস দিয়ে করা উত্তম? তেতো, কাঁচা ও গাছের নরম ডাল দিয়ে মিসওয়াক করা উত্তম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জায়তুন ও খেজুর গাছের ডাল দ্বারা মিসওয়াক করতেন। পিলু গাছের ডাল দ্বারা মিসওয়াক করলে মস্তিষ্ক সতেজ হয়। এটা এক প্রকার গাছ। মিসওয়াক এর ব্যাপারে দন্ত বিশেষজ্ঞগন কী বলে? দন্ত বিশেষজ্ঞগন বলেন যে, দীর্ঘদিন একই ব্রাশ ব্যবহার করলে দাঁত পরিস্কার হওয়ার বদলে উল্টো আরও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পুরোনো ব্রাশে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া দাঁত ও মাড়িতে প্রদাহের কারণ হতে পারে। আর দীর্ঘদিন একই ব্রাশ ব্যবহার করলে সেটা পুরোনো হয়ে যায় এবং দাঁত পরিস্কার করার ক্ষমতাও কমে আসে। বিপরীতে মিসওয়াক এর ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিবার মিসওয়াক ব্যবহার করার সময় মিসওয়াকের উপরের দিকের নরম অংশ কিছুটা খসে পড়ে। দাঁত দিয়ে কামড় দিয়ে নরম করে নিতে হয়। ফলে ব্রাশের ক্ষেত্রে যেমন আমরা একই অংশ দিয়ে দীর্ঘদিন দাঁত পরিস্কার করার কারণে সেটাতে বিভিন্ন রোগজীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া জমার সুযোগ পায়, মিসওয়াক এর ক্ষেত্রে এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ মিসওয়াক এর ব্যবহৃত অংশ প্রতিবারই পরিবর্তিত হয়ে নতুন অংশ আসছে। যার ফলে এখানে কোন প্রকার জীবাণু থাকার সুযোগ নেই। এখন আপনিই বিবেচনা করুন কোনটা আপনার জন্য সাস্থসম্মত।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিটি কথা ও কাজ মানুষের জন্য কল্যাণকর। হোক সেটা দুনিয়াবি বা পরকালীন বিষয়। তিনি মানুষকে যেমন দিয়েছেন ধর্মীয় শিক্ষা। তেমনিভাবে জাগতিক বিষয়েও দিয়েছেন সহজ ও সর্বকালে প্রযোজ্য নিখুঁত সমাধান। মিসওয়াক করা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর একটি সুন্নত। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে মিসওয়াক করতেন এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.)-গণকেও তাগিদ দিতেন মিসওয়াক করার জন্য। ঘুম থেকে উঠে, নামাজের আগ, ঘরে প্রবেশ করেও তিনি প্রথমে মিসওয়াক করতেন। সহিহ সনদে বর্ণিত বহু হাদিস দ্বারা জানা যায় যে, তিনি মিসওয়াক এর প্রতি কতোটা গুরুত্ব দিতেন। এক হাদিসে এসেছে, রাতে যখন তিনি তাহাজ্জুদের জন্য ঘুম থেকে উঠতেন তখনও মিসওয়াক করতেন।হুযায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাহাজ্জুদের জন্যে উঠতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা ঘষে মুখ পরিস্কার করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৮১)।

অন্য আরেক হাদিসে এসেছে, আবু মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, আমি একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর কাছে গেলাম তখন মিসওয়াক এর এক অংশ তার জিহ্বার উপর ছিল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৮০) ঘরে প্রবেশ করেও প্রথমে তিনি মিসওয়াক করতেন। যেমন, মিকদাদ এর পিতা শুরায়হ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে ঢুকে সর্বপ্রথম কোন কাজটি করতেন? তিনি বলেন মিসওয়াক করতেন।’ (সহীহ মুসলিম.হাদিস নং- ৪৭৮)। অন্য একটি হাদিস থেকে আরও সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, তিনি সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে কী পরিমাণ তাগিদ দিতেন মিসওয়াক এর জন্য। যায়িদ ইবনু খালিদ আল জুহানি (রা.)-থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের উপর কষ্টকর না হলে প্রত্যেক সালাতের সময় তাদেরকে অবশ্যই মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৭)।

মিসওয়াক করার ফজীলত : এক হাদিসে হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিসওয়াক করে যে নামাজ আদায় করা হয়, সে নামাজে মিসওয়াকিহীন নামাজের তুলনায় সত্তুরগুণ বেশি ফজিলত রয়েছে (বায়হাকি) হযরত আয়শা রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস নং ৫)। হযরত আয়শা রাযি. থেকে অন্য একটি হাদিস বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিসওয়াক করার পর দুই রাকাআত নামাজ পড়া আমার নিকট মিসওয়াক করার পূর্বে সত্তর রাকাআত নামাজ পড়ার চেয়ে বেশি পছন্দনীয়। (ইমাম বায়হাকি হাদিসটি বর্ণনা করেছেন)।

তাই আসুন আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এঁর আদর্শের প্রতিফলন ঘটাই এবং সাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপন করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন