মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ধলাইর বুকে শুধুই পাথর

কোয়ারী খুলে দেয়ার দাবি ব্যবসায়ীদের

ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

দীর্ঘদিন থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় পাথরে ভরে গেছে ধলাই নদীর বুক। নদীর বুকে এখন পাথরের সমারোহ। আমদানী নির্ভরতা কমাতে এখনই সময় পাথর উত্তোলনের। দেশের পাথর জমিয়ে রেখে আমদানীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। অথচ পাথরের বিপুলতায় ধলাই নদী উৎস মুখ পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। বদলে গেছে পানি প্রবাহের পথ।

স্থানীয় স্বার্থের চেয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে যেয়েই রাষ্ট্রের অফুরন্ত সম্পদ অবহেলায়, অযত্নে পড়ে আছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে পাথর উত্তোলন শুরু হলে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রাষ্ট্রের কোষাকার সমৃদ্ধ হতো। এমতাবস্থায় গত শনিবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পাথর ব্যবসায়ী সমিতির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দ্রুত পাথর উত্তোলনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়। নতুবা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিবেন তারা।

দেশের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প, নির্মাণাধীন সড়ক-মহাসড়ক কিংবা বাসাবাড়ি এসবের প্রধান উপকরণ হচ্ছে পাথর। ইটের খোয়া থেকে পাথরের গুণগত মান ভালো থাকায় বেড়েছে এর ব্যবহার। তবে দেশের পাথর খনিগুলো বন্ধ থাকায় আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে। দিন দিন বাড়ছে আমদানির পরিমাণ। কিন্তু দেশের খনিগুলো থেকে পাথর সংগ্রহ করতে পারলে মিটানো যেত এর চাহিদা। ভোলাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, বিছনাকান্দি, লোভাছড়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, শ্রীপুরসহ প্রায় ১০-১২টি পাথর খনি রয়েছে সিলেটে। যেখান থেকে দেশের চাহিদা মেটাতে বছরে ১ কোটি টন পাথর উত্তোলন করা সম্ভব। দেশের চাহিদা মেটাতে ও বৈদেশিক রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে এই সকল পাথর খনি থেকে সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

গত শনিবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পাথর ব্যবসায়ী সমিতির এক সভায় দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কোয়ারি খুলে দেওয়ার বিকল্প নাই বলে দাবি করেন বক্তারা। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাদের ও শ্রমিকদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকার ফলে লক্ষাধিক শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা পার করছে দূর্বিষহ জীবন। দেউলিয়া হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।

এদিকে গত ৩১ মে পাথর উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাথর কোয়ারি, পাথর উত্তোলন, খাস আদায় ও জব্দকৃত পাথর উন্মুক্ত নিলামের বিষয়ে দায়েরকৃত মামলা সমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সভায় গেজেটভূক্ত পাথর কোয়ারি সমূহ পুনরায় ইজারা প্রদানে যোগ্য কি না তা যাচাই করার লক্ষ্যে জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভে এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমূহের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

তারা মজুদ পাথরের পরিমাণ, উত্তোলনযোগ্য পাথরের পরিমাণ, উত্তোলনের সময়কাল, পাথর কোয়ারি এলাকার পরিবেশ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ বিবেচনা করে পাথর কোয়ারি সমূহের হালনাগাদ করবেন। এছাড়াও খনি ও খনিজ সম্পদ আইন ১৯৯২ এবং খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা ২০১২ পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সংশোধনের প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রনয়ণ করতেও বলা হয়েছে এই কমিটিকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভোলাগঞ্জ পাথর খনি চালু থাকালীন প্রতিদিন প্রায় ৩ লক্ষ ফিট পাথর সংগ্রহ করা সম্ভব হতো। সে সময়ে সরকারি হিসাবে ১ কোটি ৪৪ লাথ টাকার পাথর সংগ্রহ হতো। পরিবেশ বিপর্যদের দোহাই দিয়া দেশের পাথর খনি বন্ধ করে বহিঃবিশ্ব থেকে আমদানি করা হচ্ছে পাথর। বর্তমানে দেশের পাথরের চাহিদার বেশিরভাগ অংশ যোগান দিচ্ছে ভারত। তাদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ পাথর আমদানি করছে বাংলাদেশ। এর বাহিরে রয়েছে দুবাই, ভিয়েতনাম ও ভুটান।

পাথর আমদানিতে যুক্ত হয়েছে মেঘনা গ্রুপ, আবুল খায়ের গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ ও পারটেক্স গ্রুপ অন্যতম। সাগর ও নদীপথে নিজেদের জাহাজ ব্যবহার করে বিদেশ থেকে সরাসরি পাথর নিয়ে আসছে তারা। এই গ্রুপগুলো যুক্ত হওয়ার পর গত ২০২০-২১ অর্থবছর দেশে পাথর আমদানি হয়েছে ২ কোটি ৪৮ লাখ টন। যার বাজার মূল্য ৯ হাজার কোটি টাকা। তাতেই পণ্যভিত্তিক আমদানির প্রবৃদ্ধি বা বাজারের আকার হিসেবে পাথর উঠে এসেছে শীর্ষে। তাই পাথরের আমদানি নির্ভতা ও খরচ কমাতে দেশীয় খনি থেকেই পাথর সংগ্রহে নজর দেয়া জরুরি। এটি করা হলে পাথর ক্রয়ে খরচ কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল জলিল মেম্বার বলেন, বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করার কারণে পাথরের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও রিজার্ভে উপর চাপ বাড়ছে। দেশীয় খনি থেকে পাথর সংগ্রহ করলে পাথরের দাম প্রায় ৫০ টাকা পর্যন্ত কমে আসবে ও দেশের সিংহভাগ চাহিদা মেটানো যাবে। ভোলাগঞ্জ চুনা পাথর আমদানী কারক গ্রুপের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, দেশের খনি থেকে পাথর সংগ্রহ হলে বিপুল পরিমাণ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। এ ক্ষেত্রে আগে চাঁদাবাজদের দূর করতে হবে। কারণ চাঁদাবাজদের জন্য সরকার সঠিক রাজস্ব পায়না। আর ভোলাগঞ্জ শুল্কস্টেশন দিয়ে যে চুনা পাথর আমদানি হয় তা বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশের খনি থেকে পাথর সংগ্রহ হলে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশও লাভবান হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন