শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দেশের অর্থনীতির গলার ফাঁস কুইক রেন্টাল

সংবাদ সম্মেলনে কল্যাণ পার্টি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

দেশের বিদ্যুতখাতে সরকারের দুর্নীতির কড়া সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেছেন, সরকার যখন কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে চাইলো তখন সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বাধা দিয়ে বলেছিলেন- কুইক রেন্টাল একসময় সরকারকে মেন্টাল করে দিবে। আজকে তাই সত্য হয়েছে। সরকারদলীয় নেতা ও ক্ষমতাসীনদের আত্মীয় স্বজনদের সন্তুষ্ট করতেই রেন্টাল মূলা ঝুলানো হয়েছিল যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বর্তমানে গলার ফাঁস। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ আজ গভীর সংকটে। আকাশে বজ্রবিদ্যুৎ আর অমানিশার ঘোর অন্ধকার। বেসামাল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে যে তেলেসমাতি চলছে তার সমাধান কোন পথে? গতকাল রোববার রাজধানীর স্কাই সিটির ব্যাংকুয়েট হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবারিম বলেন, গত ১৫ বছরে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে সরকারি কোষাগার থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের পকেটে গেছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। বিগত প্রায় তিন বছরে মোট ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। পিডিবির তথ্য মতে- ২০০৭ থেকে ২০২০ অর্থবছর অর্থাৎ ১৩ বছরে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয় ২৫ হাজার ৩১ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। যার জন্য পিডিবি পরিশোধ করে এক লাখ ৫৯ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই ছিল ৬৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। ভারতের আদানী গ্রুপ কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ভাড়া নিয়েছে। এ সকল কুইক রেন্টাল স্বল্প মেয়াদে চলার কথা থাকলেও বার বার তা নবায়ন করে এই খাতকে ধ্বংস করা হয়েছে। যার ব্যয়ের বোঝা জনগণকেই বহন করতে হচ্ছে। শুধু দলীয় নেতাদের সুবিধা দিতেই যে এতো দুর্নীতি হয়েছে তা এখন প্রমাণিত। এতো হাঁক ডাক করেও সরকার কিন্তু জনগণকে বিদ্যুৎ দিতে ব্যর্থ।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে এমপি মমতাজ দম্ভ করে বলেছিলেন যে, চুড়ি বিক্রি করার মতো মাথায় ঝুড়িভর্তি বিদ্যুৎ নিয়ে ফেরি করে বেড়ালেও, বিদ্যুতের ক্রেতা পাওয়া যাবে না। কিন্তু বর্তমানে খুঁজে দেখলে ঝুড়িতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না বরং কাঁচের চুড়ি কেনার মতো অর্থও মানুষের হাতে নেই। এক ঘণ্টা করে লোড শেডিংয়ের কথা বলা হলেও সেটা ৩/৪ ঘণ্টারও বেশি পর্যন্ত হচ্ছে। বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের মেগা লুটপাট এখন জনগণের জন্য গলার ফাঁস। আমরা সরকারকে বলছি- দ্রুত কুইক রেন্টালের সমস্ত প্রকল্প বন্ধ ঘোষণা করে সরকারের অধীন সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সক্রিয় করুন। পিডিবির তথ্য মতে- এখন আমাদের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াটের কমবেশি। যা সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো জোগান দিতে সক্ষম। তাহলে আর লোডশেডিং থাকবে না। এভাবে দেশের জনগণের সম্পদ লুটপাটকারী সংশ্লিষ্ট সবাইকে দুদকের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি করছি।
সৈয়দ ইবরাহিম দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, সরকারের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং ব্যর্থতায় আজকে সেই মধ্যবিত্ত কঙ্কালসার। সরকারের মন্ত্রী এমপিরা যেভাবে মিথ্যা বলার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, তাতে নিশ্চিতভাবেই গোয়েবলস জীবিত থাকলে মিথ্যার বেসাতি দেখে লজ্জায় মুখ লুকাতেন। একদিকে আমদানিতে ডলারের সর্Ÿোচ্চ মূল্য ১০০ ছাড়িয়ে বর্তমানে ১০৩-এ দাঁড়িয়েছে। অথচ একজন শ্রমিক কর্মচারীর বেতন এক টাকাও বৃদ্ধি হয়নি। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি নজিরবিহীন যা প্রায় সাড়ে আট শতাংশ, গ্রামে সেই মূল্যস্ফীতি প্রায় দশ শতাংশ। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মোটা চাল বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে, তার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে আটা বিতরণ কার্যক্রম। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে আমাদের গোডাউন শূন্য এবং বিতরণের জন্য চাল গমের মজুদ শেষ। এটা কি দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি নয়? মোটা চাল যেখানে ৬০ টাকা সেখানে গরিব মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকার স্বপ্ন ধুলি ধূসরিত। সরকার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে, বিদ্যুত ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পায়তারা করছে। শুধু জীবন বাঁচাতে মধ্যবিত্তের সঞ্চিত অর্থের সিংহভাগ চলে গেছে বাকিটা যাওয়ার পথে। এর পর কী? নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-আক্রমণ করার ঘটনা ক্ষমতার মসনদকে পাকাপোক্ত করার হীন চেষ্টা বলেই সবাই মনে করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দলনিরপেক্ষ সরকার ছাড়া একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান কখনোই সম্ভব নয়। তাই আগামীর নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারই পরিচালনা করবে ইনশাআল্লাহ। আন্দোলনের মাধ্যমেই সেই সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান তামান্না, অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল করিম ভূঁইয়া পিন্টু, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হানিফ প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন